শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

টেকনেশিয়ান এখন ডেন্টাল সার্জন, ডায়গনস্টিকের মালিক

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২৪  

 

# শাস্তি কাগজে কলমে লাগে না অনেক কিছু ফোনে হয়ে যায় : সুপার

 

 

খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের দন্ত বিভাগে দাঁতের চিকিৎসার নামে রোগীদের গলাকাটা হচ্ছে। দন্ত বিভাগের টেকনেশিয়ান নিজেই দেখছেন রোগী। আর রোগী গেলেই তাকে বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তবে যেকোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টেস্ট করলেই হবে না। রোগীদের তিনি নিজেই স্লিপ ধরিয়ে দেন।

 

আলভি ডেন্টাল এন্ড এক্সরে ডায়গনেস্টিক সেন্টার থেকে টেস্ট করালে তবেই তিনি রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আর সেই আলভী ডেন্টাল এক্সরে ডায়গনেস্টিক সেন্টারের মালিক তিনি নিজেই। তবে তিনি যেসব রোগীদের দেখেন সেই সকল রোগীর স্লিপে তিনি টেকনেশিয়ান হিসাবে নয় সার্জন হিসেবেই সিল স্বাক্ষর দিয়ে থাকেন। এমন একটি স্লিপ হাতে এসেছে।

 

গত ১৮ জানুয়ারী সকালে মাড়িতে ফোলা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টে কর্মরত শ্রমিক রফিক(৪০)। যার হাসপাতালের টিকিটের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৪৭২৬৩/২৩। যেখানে আকতারুজ্জামান নিজেকে ডেন্টাল সার্জন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

 

রফিক চিকিৎসা নিতে গেলে আকতারুজ্জামান তাকে প্রথমেই দাঁতের দুটি এক্স করতে দেন। আর এক্স করার জন্য তিনি রফিককে নিজের মালিকানাধীন আলভি ডেন্টাল এন্ড এক্সরে ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে রফিক ৪০০ টাকা খরচ করে এক্সরে রিল নিয়ে পুণরায় আকতারুজ্জামানের কক্ষে ঢুকে।

 

রফিকের সাথে ভেতরে ডুকে আকতারুজ্জামানের কাছে প্রশ্ন করা হলে আপনি টেকনেশিয়ান হয়ে রোগী দেখতে পারেন কিনা। আর রিপোর্টের জন্য আপনার বলে দেওয়া ডায়গনেস্টিক সেন্টারেই কেন যেতে হবে। এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এই প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন আকতারুজ্জামান। পরে তার রুম থেকে বেরিয়ে আসলে। আকতারুজ্জামান রফিককে ওষুধ লিখে দিয়ে রোগীকে মিরপুর ১৪ নাম্বার ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল লেখা একটি স্লিপ ধরিয়ে দেন।

 

হতাশ চিত্তে রুম থেকে বেরিয়ে এসে রফিক বলেন আমাকে কোন চিকিৎসাই দিলো না অথচ আমাকে ৪০০ টাকার টেস্ট করালো। দুইটা ওষুধ লিখেছে তাও বাইরে থেকে কিনতে হবে। আমি যে সমস্যা নিয়ে গেছি তা দেখলোই না।

 

আক্তারুজ্জামানের সাথে রফিকের ব্যাপারে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাসপাতালের কি পদে চাকরিরত রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কি বা কে সেটা আমি ভালো জানি। আপনার কিছু জানার থাকলে আপনি আমার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। আমি মোবাইলে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি না।

 

আলভি ডেন্টাল এন্ড এক্সরে ডায়গনেস্টিক সেন্টারটি তার কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আগে আমি একাই মালিক ছিলাম। এখন আমি ছেড়ে দিয়েছি। ছেড়ে দিলে এখনো সাইনবোর্ডে তার মোবাইল নাম্বার কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন এখন আমি এটা পার্টনারে চালাই।

 

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবুল বাশার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আকতারুজ্জামান হাসপাতালের টেকনেশিয়ান। নিয়ম অনুযায়ী টেকনেশিয়ানরা কয়েকটি প্রাথমিক রোগের রোগী দেখতে পারে। টেকনেশিয়ান রোগী দেখে সেখানে সার্জন সিল দিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টেকনেশিয়ান রোগী দেখলে সেখানে টেকনেশিয়ান সিলও দিতে হবে। অন্যের সিল সে ব্যবহার করতে পারবে। আমি বিষয়টি আগামীকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখবো।

 

খানপুর হাসপাতালের এতো অনিয়মের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কাগজে কলমে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা বা হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক কমে গেছে অনিয়ম। পদক্ষেপ নেওয়ার অনেক সিস্টেম আছে। ডেকে এনে সর্তক করা, উপরে জানানো, ভয় দেখানো, অনেক কিছু আছে কাগজে কলমে লাগে না। অনেক কিছু ফোনের মাধ্যমে হয়। অনেক কিছু মৌখিকও হয়ে যায়। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর