শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া কমানোর দাবি, না মানলে হরতাল

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৪  

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া কমানোর দাবিতে হরতালসহ নয়টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। ২৬ অক্টোবর (শনিবার) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব কর্মসূচির কথা জানান নারায়ণগঞ্জের এই নাগরিক সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।

 

বাসভাড়া কমানোর দাবিতে তাদের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, নাগরিকদের সাথে মতবিনিময়, মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিল। তাদের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১৭ অক্টোবর অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটি।

 

এই রুটে চলাচলরত নন-এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা করার দাবি জানানো হয়। একইসাথে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক করারও দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। বর্তমানে এ রুটে চলাচল করা এসি বাসের ভাড়া ৮০ টাকা এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫ টাকা চালু রয়েছে। 

 

আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, যুগের পর যুগ ধরে সারাদেশে গণপরিবহন নিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি বহাল রয়েছে। সরকার বদলালেও এই অরাজকতা দূর হয় না। সরকার তাদের দলীয় লোকজনকে অনৈতিক সুবিধা দিতে এই সেক্টরে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। যে সিন্ডিকেট বছরের পর বছর সাধারণ যাত্রীদেরকে জিম্মি করে রেখেছে। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে এই অরাজকতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

তিনি বলেন, গত ২২ অক্টোবর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান একাই গত ১৫ বছরে পরিবহন খাত থেকে চাঁদাবাজি করেছেন ২৪ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) তাদের এক গবেষণায় বলেছে, বিগত ১৪ বছরে শুধু মাত্র সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজে ২৯ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তারা বলছেন, সড়ক ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির ব্যাপকতা ও গভীরতা অনেক বেশি। রাজনীতির কাছে এই খাতটি জিম্মি হয়ে আছে।

 

‘শেখ হাসিনা সরকার পরিবহন মালিক ও মাফিয়াবন্ধব ছিল’ মন্তব্য করে রাব্বি বলেন, নিজেদের দলীয় ক্যাডার ও আত্মীয়-স্বজনদের অনৈতিক সুবিধা দিতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে সবসময় কিলোমিটার প্রতি পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেছে অযৌক্তিকভাবে। সরকারের এ গণবিরোধী নীতির সাথে মিল রেখে পরিবহন মাফিয়াদের সাথে যোগসাজসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) জনগণের স্বার্থকে অবজ্ঞা করে বিভিন্ন স্থানের ভাড়া নির্ধারণ করে গেছে।

 

রাব্বি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে পরিবহন নিয়ে অরাজকতা দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন সেক্টরের মতো এই পরিবহন খাতটি ছিল ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস। যথেচ্ছভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণের দুর্ভোগ তৈরিতে স্থানীয় বিআরটিএ ও প্রশাসন সবসময় তাদের সহায়তা করেছে। ২০১১ সালের জুন মাসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস ভাড়া ২২ টাকা থেকে ৩২ টাকা বৃদ্ধি করায় এখানে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সিন্ডিকেটের মাফিয়া ও গডফাদারদের কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন, কেউবা গা ঢাকা দিয়েছেন।

 

বর্তমান অবস্থায় আমরা চাই এই পরিবহন সেক্টর যেন আবার অন্য কোন চাঁদাবাজ-গডফাদারদের হাতে বন্দি হয়ে না পড়ে। জনগণের পকেট কেটে তাদের জিম্মি করে কোন গডফাদার যেন আর ফুলে ফেপে উঠতে না পারে।

 

 

গত ২ এপ্রিল বিআরটিএ ঘোষিত দূরত্ব প্রতি ভাড়ার তালিকা ‘জনবিরোধী ও পরিবহন মালিকবান্ধব’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ’র হিসেবে এই রুটে ভাড়া দাঁড়ায় ৫৩ টাকা। কিন্তু বাস্তবিকভাবে নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া কোনোভাবেই ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, ‘বিআরটিএ’র ত্রুটিপূর্ণ প্রজ্ঞাপনেই অনিয়ম লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দেখিয়ে (২ দশমিক ৩২ টাকা কিলোমিটার প্রতি) ভাড়া দেখানো হয় ৪৫ টাকা। ফ্লাইওভার টোল ৫ টাকা ও সানারপাড় ইউটার্ন ৩ টাকা দেখিয়ে বলা হয়, এই রুটে মোট ভাড়া ৫৩ টাকা।

 

কিন্তু একই শিটে বলা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ভাড়া হবে ৫৪ টাকা। বাস্তবিক দেয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভাড়ার থেকেও যে ২ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, তার প্রতিকারে প্রশাসন বা বিআরটিএ’র কোনে উদ্যোগ নেই। ‘প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠলে ভাড়া ৫৩ টাকা, চাষাঢ়া থেকে উঠলে ৫০ টাকা, নতুন কোর্ট এলাকা থেকে উঠলে ৪৮ টাকা, শিবু মার্কেট থেকে উঠলে ৪৫ টাকা এবং জালকুড়ি থেকে উঠলে ৩৯ টাকা। কিন্তু সব জায়গা থেকেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা করে।

 

প্রজ্ঞাপনে মতিঝিল শাপলা চত্বর ঘুরে দুরত্ব দেখানো হয়েছে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার। কিন্তু বাস্তবতা যাচ্ছে কোন বাসই এখন শাপলা চত্বর ঘুরে যাতায়াত করে না। গত ৩০ আগস্ট সরকার ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১ দশমিক ৫০ টাকা কমালেও ভাড়া কমানোর কোন উদ্যোগ বিআরটিএ প্রশাসন গ্রহণ করেনি আমরা জেলা প্রশাসনের সভায় এ সব অসঙ্গতি তুলে ধরলেও তা নিরসনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নাই। স্থানীয় প্রশাসন পরিবহন মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় যতটা তৎপর, যাত্রী সাধারণের অধিকার রক্ষায় ততটাই উদাসীন।’

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র সভাপতি মো. নুরুদ্দিন, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, বাসদের সদস্যসচিব আবু নাঈম খান প্রমুখ।

এই বিভাগের আরো খবর