আড়াইহাজারে ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্য হারিয়ে মরা খালে রূপ নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ নদে শিল্পবর্জ্য ফেলায় ও অবৈধ দখলের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
ব্রহ্মপুত্রের নাব্য ফিরিয়ে আনা এবং নদ দখলমুক্ত করতে প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে প্রশাসন বলছে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, আড়াইহাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ১০ লাখের বেশি মানুষের প্রতিদিনের ব্যবহৃত পানি, সুয়ারেজের দূষিত পানি পয়োনালার মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদে পড়ছে। কসাইখানা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো পানি ও বর্জ্য সরাসরি নদে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী, নদের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বর্জ্য ও ময়লা পানি শোধন ছাড়া নদে ফেললে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আড়াইহাজার ও পার্শ্ববর্তী থানা মাধবদীতে ডাইং, স্পিনিংসহ ছোট-বড় ৫৫টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে ৪৫টি কারখানা তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) তৈরি করেছে। অন্য ১০টির ইটিপি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, কারখানাগুলোতে ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু কারখানার ইটিপির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটির পানি দূষিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তীর দখল করে ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদের পানি দূষিত হয়ে লাল ও কালচে রং ধারণ করেছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে নদের জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব। নদ দখল-দূষণে হারিয়ে গেছে কৃষি ফসল ও মাছের প্রাচুর্য।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বাবুল বলেন, কলকারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি পরিশোধন ছাড়া ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বায়োকেমিকেল অক্সিজেন চাহিদা (বিওডি) বেড়ে যাচ্ছে এবং নদের তলদেশে অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়ে মাছ মারা যাওয়াসহ জীববৈচিত্র্যের ভীষণ ক্ষতি করছে।
দুপ্তারা সেন্ট্রাল করোনেশন স্কুল ও অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, নদী-খাল অবাধে দখল-দূষণের ফলে জীবিকা সংকটে পড়েছে এ নদের ওপর নির্ভরশীল মানুষ। নদ রক্ষায় আইনের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
চামুরকান্দি গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান, নদে কোনো মাছ নেই, থাকলে মরে ভেসে ওঠে। কেউ গোসল করলে তাঁর শরীরে নানা রোগব্যাধি দেখা দেয়। বিষাক্ত পানি ভয়ে কেউ স্পর্শও করে না।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, যেসব কারখানা থেকে রংমিশ্রিত পানি নদে ফেলা হচ্ছে, ওইসব কারখানাকে আইনের আওতায় এনে বন্ধ করে দিতে হবে। পরে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর কারখানাগুলো বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।