রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

দিল্লিতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে দেখা গেল শামীম ওসমানকে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  


ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে এক মাসের ছুটিতে দেশটি ঘুরে দেখতে বের হয়েছিলেন বাংলাদেশের মনিরুল হক। দিল্লিতে পৌঁছে সন্ধ্যার পর যান নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে। সেখানে চোখের সামনেই দেখতে পান গোপনে দেশ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমানকে।

 


গণ–অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিনই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় এলে তাঁর দলের অনেক নেতা গোপনে দেশ ছেড়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে আলোচিত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও সপরিবার গোপনে দেশ ছাড়েন বলে খবর বের হয়। তবে তাঁর দেশ ছাড়ার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না।

 


সরকার পতনের দুদিন আগে, তথা ৩ আগস্ট শামীম ওসমান দেশ ছেড়েছেন বলে চাউর হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেদিন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের জানান, তিনি দেশেই আছেন।

 


কিন্তু এবার তাঁর দেশ ছাড়ার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ সরকার পতনের ঠিক এক মাসের মাথায় তাঁকে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে দেখেছেন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার ও নির্মাতা মনিরুল হক।

 


মনিরুল হক সিকিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার আগে ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘোরেন। তিনি ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিজাম উদ্দিনের দরগাহে বসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ তাঁর কানে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি আসে। খেয়াল করে দেখেন এক ব্যক্তি বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করে দোয়া করছেন। তখন সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের ক্যামেরা চালু করে ভিডিও করা শুরু করেন তিনি। মনিরুল সেই ভিডিও গণমাধ্যমকে দিয়েছেন।

 


ভিডিওর উর্দু ভাষার সেই দোয়া বাংলা করলে হয়, ‘শামীম ওসমান সাহেবকে সালাম পৌঁছানোর সামর্থ্য দাও। শেখ হাসিনা সাহেবাকে শানদার সাফল্য দান করে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ভাগ্য দান করো।’

 


মনিরুল বলেন, তিনি সেখানে শামীম ওসমানকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যান। শামীম ওসমানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্ভবত আরও তিনজন সদস্য ছিলেন।

 


মনিরুল জানান, তিনি শামীম ওসমানকে অনুসরণ করতে থাকেন। দরগাহের এক পাশে থাকা খাবার জায়গায় শামীম ওসমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের তবারক বিতরণ করতে দেখেন তিনি। এমনকি যিনি দোয়া পড়ছিলেন, তাঁকে টাকাও দিতে দেখেন।

 


মনিরুলের দাবি, শামীম ওসমানের সঙ্গে তাঁর একবার চোখাচোখি হয়। তবে কোনো বাক্যবিনিময় হয়নি। শামীম ওসমানকে দেখে হতাশ মনে হয়েছিল বলেও জানান।

 


কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর শামীম ওসমান ও তাঁর সহযোগীদের গুলি ছোড়ার অভিযোগ রয়েছে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৯ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বঙ্গবন্ধু সড়কে সে সময় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা মিছিল বের করেন।

 


ভিডিওতে দেখা যায়, শামীম ওসমান ও তাঁর কয়েক শ অনুসারী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার দিকে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গীদের কয়েকজন আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়েন।

 


ইতিমধ্যে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি