মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় দুই দফায় ছয় দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।
অপরদিকে, তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ পরীমনির জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে পরীমনির জামিন আবেদনে তার আইনজীবী মজিবুর রহমান আদালতে উল্লেখ করেন, পরীমনি ‘ভারটিগো’ এবং ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এর রোগী। তিনি দীর্ঘসময় পুলিশ কাস্টডিতে (হেফাজতে) অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হেফাজতে থাকলেও মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়নি। জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া আবশ্যক।
অপরদিকে, পরীমনিকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ‘মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আসামি শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি পলাতক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’
সেখানে আরও বলা হয়, ‘রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বিষয়ে আসামি (পরীমনি) বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার অভিযোগের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে আটকে রাখা একান্ত প্রয়োজন।’
গত ১০ আগস্ট দুপুরে চারদিনের রিমান্ড শেষে নায়িকা পরীমনিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৫ আগস্ট পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের সাতদিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ প্রত্যেকের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ৪ আগস্ট বিকেলে পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাবের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। প্রায় ৪ ঘণ্টার অভিযান শেষে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে র্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার কথা জানায় র্যাব। এ ঘটনায় পরের দিন পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে র্যাব বাদী হয়ে একটি মামলা করে।