শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১

ধরা খেলেন শামীম ওসমান

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেয়াকে আবারো অবৈধ বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

 

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার  ধানমন্ডি-৩ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সভা শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদলকে ডেকে একথা বলেন। 

 

ভবিষ্যতে এমন আর না করার জন্য তাদেরকে সতর্কও করে দেন তিনি। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া সভায় উপস্থিত কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা এমন্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

 

সাংগঠনিক সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী ড.মো.আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, বাহাউদ্দিন নাসিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নাসহ ঢাকা বিভাগের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন। 

 

সভার শেষ পর্যায়ে ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল, খোকনসাহাকে ডেকে পাঠান। সভায় উপস্থিত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যে আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে সেটি অবৈধ। এক্ষেত্রে পূর্বের কমিটিই বহাল থাকবে। 

 

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর হাই এবং সেক্রেটারি ভিপি বাদলকে বলেছেন, তোমরা সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়েছ এটা ঠিক হয়নি। 

 

কোন কমিটি ভাঙার এখতিয়ার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সেক্রেটারির নেই। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে এটা উল্লেখ রয়েছে। তোমরা এটা ভুল করেছ। আগের কমিটিই বহাল থাকবে। কোন কিছু হলে তোমরা সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে কথা বলবে। ভবিষ্যতে আর কোন ভুল করবেনা। ’

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই যুগের চিন্তাকে জানান, ‘সোনারগাঁয়ের কমিটি নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

 

সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন-দুইপক্ষকে নিয়ে বসে নওফেল বিষয়টির সুরাহা করবেন। নেত্রী যেহুতু দেশে নাই নেত্রী ফিরে এলে তিনি সোনারগাঁ কমিটির বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত দেবেন।’

 

গত ১৫ জুলাই হঠাৎ করেই সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেন সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদল। এরপর সাথে সাথেই তারা সামসুল ইসলাম ভূইয়া আহবায়ক এবং পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমানকে যুগ্ম আহবায়ক করে আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেন। 

 

ওই আহবায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা.আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবুকে রাখা হয়। 

 

কাউকে না জানিয়ে এই আহবায়ক কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় সিনিয়র সহসভাপতি ও নাসিক মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা। এব্যাপারে তারা কেন্দ্রে ৩৮ সদস্যের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পাঠায়। এছাড়া ওবায়দুল কাদেরের সাথেও তারা স্বাক্ষাত করেন।  

 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদল দুজনেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের অনুসারি। 

 

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, মূলত শামীম ওসমানের ইন্ধনেই সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, চলতি বছরের ১৬ জুলাই রূপগঞ্জে কাউন্সিলের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীকে এবং ২২ জুলাই কাউন্সিলের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। 

 

এই দুইজনেরই বর্তমানে এমপি শামীম ওসমানের বিপক্ষে অবস্থান। গাজী এবং বাবু দুজনই মেয়র আইভীকে সাপোর্ট করছেন। 

 

শামীম ওসমানের ধারণা ছিলো- সোনারগাঁয়ে কাউন্সিল হলে আইভী অনুসারীরা নির্বাচিত হবে। আর যেহুতু দীর্ঘদিন থেকে শামীম ওসমান সোনারগাঁয়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি চাননি সোনারগাঁ তার হাতছাড়া হয়ে যাক। আর একারণে তিনি তারা অনুগতদের দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এবং আহবায়ক কমিটি যে শক্তিশালী তা প্রমাণের জন্য  তারিখে আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে ১৩ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নে সমাবেশের ডাক দেন।

 

কিন্তু ওখানকার যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা একই জায়গায় পাল্টা সমাবেশের ডাক দেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করলে শামীম ওসমানের অনুগত কর্মী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা.আবু জাফর চৌধুরী বিরুর বাড়িতে সমাবেশটি সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানেও প্রতিরোধের মুখে পড়ে সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদল। 

 

নেতাকর্মীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি আহবায়ক কমিটি। সূত্র জানিয়েছে, সোনারগাঁয়ের আহবায়ক কমিটিকে বহাল রাখতে কেন্দ্রের বিভিন্ন নেতার কাছে ধর্ণা দিয়ে বেড়িয়েছেন শামীম ওসমান। কিন্তু নেতারা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। এতে মূলত শামীম ওসমানের পরাজয় হয়েছে। 

এই বিভাগের আরো খবর