রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

নগরীর নির্মল বাতাসের রাসেল পার্ক

মেহেরীন জারা

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৩  


নারায়ণগঞ্জ শহরে দর্শনীয় ও বিনোদন কেন্দ্রের জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো শেখ রাসেল নগর পার্ক। শিল্প-বাণিজ্যিক ও ঘনবসতিপুর্ণ নগর  হিসেবে পরিচিত আমাদের নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ার দিকে, একটু সামান্য দূরেই শেখ রাসেল পার্ক অবস্থিত। এটি নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ ও বাবুরাইল এলাকায় অবস্থিত একটি পার্ক।

 

 

দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী ও পরিস্কার স্বচ্ছ পানি এবং মনোরোম প্রাকৃতিক পরিবেশের স্নিগ্ধ হাওয়া এ যেন শহরের বুকে নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিকেল হলেই লেকের পাশে শান্ত পরিবেশে মানুষজন পরিপূর্ণ কর্মব্যস্ততা সেরে ব্যস্ত মানুষগুলো একটু প্রশান্তির খোঁজে চলে আসে এ পার্কে।

 

 

কেউ আসছে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে আবার কেউ আসছে পরিবারপরিজন নিয়ে মনোরম পরিবেশে সময় কাটাতে। সেখানকার এক দর্শনার্থীকে জিঙ্গাসা করলে তিনি বলেন, তার নাম ন্সেহা, তারা কোচিং শেষ করেই এখানে বন্ধুÑবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে আসেন। আজ শুক্রবার হওয়ায় বান্ধবিরা একসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আড্ডা ও গল্প করার সুযোগ হয়েছে।

 


সেখানে আরেকজন দর্শনার্থী রফিক মিয়া বলেন, তিনি একজন হুঁশিয়ারি কর্মকর্তা তিনি কাজ শেষে ক্লান্তি দূর করতে আসেন এই মনোরম পরিবেশে। কেউ বা আসে ফটোগ্রাফি করতে।

 


শিল্পি নামের আরেকজন দর্শনার্থী জানান, তারা এই লেকটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না,কিন্তু তারা এই মনোরম পরিবেশটি পরিদর্শন করতে এসেছেন। প্রতক্ষ্যদর্শী মিরাজ বলেন, শহরে ঘোরার মতো তেমন জায়গা নেই মেয়ে সকাল থেকেই বায়না ধরে আছে ঘুরতে যাবে তাই নিয়ে এলাম। ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সকল পেশার মানুষরাই আসে এই লেক পার্কে তাদের প্রয়োজনীয়তা মিটাতে।

 


পার্কের বিপরীত পাশে রয়েছে নানারকম বাহারি খাবারের দোকান। শম্পা নামের আরেকজন সেখানে বলেন তিনি তার চাচাতো বোনদের সাথে এই লেকের পারে ফুটপাতের চাপ ও লুচি খেতে এসেছেন। কেউ এসেছে তার প্রিয় মানুষটির সাথে সময় কাটাঁতে। আধুনিক মানের এই শেখ রাসেল পার্ক, এখানে বিনোদনের জন্য রয়েছে নানা রকম ব্যবস্থা, খেলার মাঠ, বসার ব্যবস্থা ও হাটার রাস্তা।

 

 

এতে রয়েছে একটি মুক্তমঞ্চ সেখানে সাড়াবছরই নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুলত, শুধু শুক্রবার ও শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ভিতরের লেক পার্কটি খোলা থাকে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আসে এই পার্কে। বিশেষ করে সপ্তাহে ছুটির দিন শুক্রবার এ রাসেল পার্কে ভিড়ের দৃশ্য চোখে পরার মতো।

 


সেখানে আরেকজন দর্শনার্থী সাহেদ তার বন্ধুদের সাথে বিকেলে লেক পার্কের পাখিদের আনাগোনা দেখতে ও মনোরম পরিবেশের হাওয়া খেতে এসেছেন। কেউ আসছে নামাজ শেষে এখানে চা খেতে। কিছু মানুষ লেকের পানিতে থাকা মাছগুলোকে মুরি খাওয়াচ্ছেন ও বিনোদন উপভোগ করছে। আবার দেখা যায় অনেক বৃদ্ধরা এসেছে তাদের সমবয়সীদের সাথে সময় কাটাঁতে।

 

 

এর আগে কোলাহলপূর্ণ এই শহরে নির্মল বাতাস, সবুজ পরিবেশ আর বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সরকার দলীয় মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তাই একটি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। নানা সমস্যার মোকাবেলা করে শহরের দেওভোগ এলাকার নগরবাসীর জন্য এই শেখ রাসেল পার্কটি করতে সক্ষম হন। প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারনায় সকাল-সন্ধ্যা মুখরিত হয়ে উঠে এই পার্কটি। আর এই ব্যবস্থাটি পরিপূর্ণ করেছে মেয়র আইভী।

 


নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শহরবাসীর জন্য এক প্রানবন্ত বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। নগরবাসীরা জানান, আগে এই লেকটি পরিত্যক্ত জলাশয় ও মশামাছির প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এখন এই উন্নত পার্কটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। বিপুল সংখ্যক লোক এখানে প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগ করার জন্য আসে।

 

 

দর্শনার্থীদের অবসর সময় কাটানোর জন্য লেকের চারপাশে স্ট্রীট লাইট, পরিবেশ বান্ধব সবুজ গাছপালা রোপন করা হয়েছে। লেকের দুইপাশের লোকজনের পারাপারের জন্য একটি ব্রিজও নির্মাণ করা হয়েছে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা। রয়েছে সুইমিং পুল, ওয়াটার গার্ডেন, স্কেটিং জোনসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ।

 

 

এছাড়াও পার্কে  একটি পরিবেশ বান্ধব চারুকলা ভবনও নির্মান করা হয়েছে। প্রায় মৃত জিমখানা লেকটিকে সংরক্ষন ও সংস্কারের মাধ্যমে নগরবাসীর একঘেয়ামি জীবনযাপন পরিবর্তন ও প্রাণোচ্ছল করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। একটু মুক্ত বাতাসে হাঁটতে একটু প্রশান্তি ও বিনোদন পেতে। প্রাকৃতিক পরিবেশের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি হয়েছে এই শেখ রাসেল নগর পার্ক।

এই বিভাগের আরো খবর