সোমবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩১

নগরীর পাবলিক টয়লেটগুলোর বেহাল দশা, স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  

শামীমা রীতা (যুগের চিন্তা ২৪) : নগরীতে নেই পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা। আর যে কয়টি রয়েছে অপরিচ্ছন্ন ও নানা অব্যবস্থাপনায় সেগুলোরও বেহাল দশা। 

একদিকে টয়লেটের স্বল্পতা অন্যদিকে অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীর। তাছাড়া বাড়তি খরচ আর প্রয়োজনের সময় নাগালের মধ্যে না থাকায় যেখানে সেখানে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। 

এদিকে চিকিৎসকদের অভিমত, সময়মত প্রাকৃতিক  প্রয়োজনে সাড়া না দিলে মানবদেহে বিরূপ প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করায় নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে নগরবাসী। 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তথ্যানুসারে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭ টি ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা রয়েছে ২০ লাখ। তাছাড়া ভাসমান মানুষ রয়েছে আরো লক্ষাধিক। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ২৭ টি ওয়ার্ডে মোট পাবলিক টয়লেট রয়েছে ১১টি। অর্থাৎ প্রতি পৌঁনে ২ লাখ মানুষের সুযোগ মিলছে একটি করে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের। 

কিন্তু এ ১১টি পাবলিক টয়লেটের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশই ব্যবহারে অনুপোযুক্ত। 

পাবলিক টয়লেট আছে এমন কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহারের অযোগ্য। কোনোটির দরজা নেই, দরজা থাকলে ছিটকিনি নেই। 

কোনো কোনো বাথরুম ময়লা-আবর্জনা ভরা। আবার কোনোটির পানির কল দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে। আবার কোথাও পানিই পড়ছে না। 

এ ছাড়া পাবলিক টয়লেটগুলোতে নারীদের জন্য নেই তেমন কোনো সুবিধা। ফলে দূর্ভোগে পড়তে হয় পথে চলাচলকারী নারীদেরও।
নগরীর ২নং রেল গেট, চাষাঢ়া, নিতাইগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহারের অযোগ্য। টয়লেটগুলোর পরিবেশও ভালো নয়। 

দেখা যায়,  পাবলিক টয়লের সামনের রাস্তাগুলোতে হকাররা দখল করে দোকান বসিয়েছে। এর ফলে দূর থেকে এটি দেখা না যাওয়ায় অনেকেই প্রয়োজনের সময় খুঁজে পায় না। 

একই অবস্থা অন্যান্য পাবলিক টয়লেটগুলোর।  বেশিরভাগ টয়লেটের দরজা জানালা নেই, দরজা থাকলেও ছিটকিনি লাগে না। নেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা। 

কোনটাতে আবার পর্যাপ্ত আলো বাতাসও প্রবেশ করতে পারে না। ময়লার গন্ধে ভিতরে প্রবেশ করা যায় না। কোনটার ভিতরে অথৈ পানি। আবার পোকামাকড়ের ঘরবসতি আছে কোনো কোনো টয়লেটে।

জানা গেছে,  সিটি কর্পোরেশন পাবলিক টয়লেটগুলো নিজেরা পরিচালিত না করে বেসরকারি পর্যায়ে ইজারা দিয়ে রেখেছে। সেগুলো ব্যবহার করতে ৫-১০ টাকা খরচ করতে হয়। 

আবার নজদরদারি না থাকায় ইজারাদাররা বেশি টাকা আয়ের জন্য পাবলিক টয়লেটের পানি বিক্রি করছে। এমনকি টয়লেটগুলো মাদক ব্যবসায়ীদের লেনদেনেরও স্থান হয়ে উঠেছে। 

২নং গেট এলাকার পুরাতন পাবলিক টয়লেটে গিয়ে দেখা গেছে, এটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।  

স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, বহু বছর আগে তৈরী এ পাবলিক টয়লেটটি অনেক আগেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তারপরেও প্রয়োজনের তাগিদে এটি চালু রাখা হয়েছে। এখানেও ইজারাদার ৫-১০ টাকা করে আদায় করে। 

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে পাবলিক টয়লেটগুলোতে অন্ধকার বাড়ার সাথে সাথে মাদকসেবীদের মাদক সেবনের আস্তানা  হয়ে উঠে এ পাবলিক টয়লেটগুলো।

পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে সমস্যার কথা উল্লেখ করে স্কুল শিক্ষক গোলাম রাব্বানী জানান,  নারায়ণগঞ্জ একটি জনবহূল এলাকা। এখানে দেশব্যাপী মানুষের আনাগোনা।  সমস্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাবলিক টয়লেট নিয়ে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। 

একেতো সংখ্যায় কম অন্যদিকে ব্যবহারের অনুপযুক্ত।  পানি আছে তো কল নেই। কল আছে তো পানি নেই। পরিবেশও বেশ নোংরা। তাছাড়া নারীদের জন্য ও তেমন পাবলিক টয়লেটগুলোতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

অস্বাস্থ্যকর পরিবশ ও পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট না থাকায় যত্রতত্র প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে খোলা জায়গায় বেছে নিচ্ছে অনেকেই। 
এদিকে যত্রতত্র প্রাকৃতিক কাজ করায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র দূর্গন্ধসহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এর ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে নগরবাসী। 

এ সকল সমস্যা রোধে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি এড. এবি সিদ্দিকী বলেন, পরিবেশকে  স্বাস্থ্য উপযোগী করে রাখার জন্য পাবলিক টয়লেটের বিকল্প নেই। 

নারায়ণগঞ্জে জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষন না থাকায় অধিকাংশই ব্যবহার অনুপোযোগী। 

যদি তাৎক্ষনাৎ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না হয় তাহলে নানা অসুবিধা তৈরি হবে। এ ছাড়া পরিবেশও নষ্ট হবে। 
তিনি আরো বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এই পাবলিক টয়লেটগুলো ইজারাদার কর্তৃক পরিচালনা করে থাকে।

ইজারাভিত্তিক থাকার ফলে টয়লেটগুলোর রক্ষনাবেক্ষন যথাযথ হচ্ছে না। আর পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহার করতে খরচ হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা খরচে। 

এখন অনেকেই আছে পাঁচ-দশ টাকা খরচ করে ব্যবহার করছে না। তারা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে খোলা জায়গা বেছে নিচ্ছে। তাই এগুলোর বিকল্প কোনো চিন্তা করতে হবে।’

সম্প্রতি এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশন তার আওতাধীন এলাকায় পাবলিক টয়লেট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আধুনিকায়ন, উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এই পাবলিক টয়লেটগুলো নির্মাণ হবে। 

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কমকর্তা এ এফ এম এহতেশামূল হক বলেন, ‘পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার জায়গা সব সময় পাওয়া যায় না। তাছাড়া প্রয়োজনেরও একটা ব্যাপার রয়েছে। কোথায় পাবলিক টয়লেট প্রয়োজন  কোথায় প্রয়োজন নয় এটাও নির্ধারণ করতে হয়। 

এটা সত্যিই অধিকাংশ পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহার অনুপোযোগী। পানি, বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। 

সিটি করপোরেশনজনিত এলাকাগুলোতে নতুন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও পুরোনো পাবলিক টয়লেটগুলোকে পূনঃনির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেছি। 

এসব পাবলিক টয়লেট আধুনিক মানের করা হয়েছে। এগুলোর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোগান্তি লাঘবে আমাদের চেষ্টা সব সময়ই অব্যাহত থাকবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর