মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

না’গঞ্জে দিশেহারা ঋণ গ্রাহকরা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২১  

# কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকায় কিস্তি আদায়ে গ্রাহকদের কাছে যাচ্ছি : মাঠ কর্মী


# কোন গ্রাহককে চাপ প্রয়োগ করছি না : ম্যানেজার


# কিস্তি আদায় বন্ধের জন্য মিটিং করেছি : ডিসি



লিপি বেগম। অসুস্থ স্বামীসহ প্রাপ্ত বয়স্ক দুই মেয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন সেহাচর এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করছেন তিনি। অসুস্থতার দরুণ তার স্বামী আয়-রোজগারহীন। হাতে টাকাকড়ি না থাকায় সংসারের ঘানি টানতে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন করে ক্ষুদ্র পরিসরে কাপড়ের ব্যবসা করছেন লিপি বেগম। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপে দীর্ঘদিন ধরে তার ব্যবসা একেবারেই নেই।

 

তার উপর বর্তমানে চলছে কঠোর লকডাউন। বন্ধ রয়েছে তার কাপড়ের দোকানটি। ঘর ভাড়া আটকে আছে ৩ মাসের। তবে, এমন পরিস্থিতেও থেমে নেই এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ লকডাউনে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকলেও কিস্তির টাকা আদায়ে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরছে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে অর্থ সংকটে পড়া লিপি বেগমের মত দিশেহারা হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি থানা এলাকার ঋণগ্রাহকরা।
তথ্য মতে, সাধারণ মানুষের কর্মপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দিন মজুরদের কাজ নেই। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আছেন বিপাকে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ এখন সংসার নিয়েই চিন্তিত। এই অবস্থায় এনজিওগুলোর কিস্তি আদায়ের চাপ এখন সাধারণ মানুষের কাছে ‘মরার উপর খাঁরার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে নিয়মিত ভাবেই কিস্তির টাকা উত্তোলণে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে এনজিও প্রতিষ্ঠান আশা, পল্লীমঙ্গল, সাজেদা, সিএসএস, টিএমএসএস, নবদ্বয় শ্রমজীবি সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং ব্র্যাকসহ নামি-বেনামি বিভিন্ন অর্থ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মাঠ-কর্মীরা।

 


এদিকে, লকডাউনে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও এনজিও প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টিএমএসএস নামক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন আমাদের মাঠ পর্যায়ের কাজ বন্ধ ছিলো। কিন্তু এনজিও কর্তৃপক্ষ আজ (গতকাল) থেকে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে কিস্তি আদায়ের জন্য। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতেই আমরা সমিতির টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকদের কাছে যাচ্ছি।’

 


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরুপায়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মানতে হয়। সত্যিকথা বলতে গ্রাহকরা সবাই অর্থ সংকটের মধ্যে আছে। আমরা কিস্তি আদায়ের জন্য গেলে সকলেই একই কথা বলছেন। আমরা আছি বিপত্তির মধ্যে। বর্তমান সময় বিবেচনা করে আপাতত কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কিন্তু অফিস থেকে যেই নির্দেশনা দেবে, চাকুরি বাঁচাতে তা আমাদের মানতে হবে।’

 


এদিকে, টিএমএসএস এর চাষাঢ়া ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. বাবুল মিয়া দাবী করেন, ‘মন্ত্রনালয় থেকে দেয়া এমআরএ নীতিমালা অনুযায়ী আমরা স্বল্প পরিসরে লোকবল নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমাদের কার্যক্রম কেবল মাঠ পর্যায়ে কিস্তি উত্তলনই নয়, পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর নিবন্ধন কার্যক্রম আছে। আবার অনেকের সেভিংস্ আমাদের কাছে জমা আছে। তারা সেভিংস চাইলে আমরা সেভিংস দিচ্ছি। এছাড়া, কোন গ্রাহক যদি আগ্রহী হয়ে কিস্তি প্রদান করে, তাহলে আমরা সেই টাকা নিচ্ছি।

 

তবে, কাউকে চাপ প্রয়োগ করে নয়। কোন গ্রাহক যদি অভিযোগ করেন যে, তাদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, তাহলে এটা মিথ্যে। আমরা কাউকে চাপ প্রয়োগ করছি না।’ লকডাউনেও এনজিও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাঈন বিল্লাহ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনায় বলা আছে যে, ইমার্জেন্সি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠান লকডাউনে বন্ধ থাকবে। এনজিও প্রতিষ্ঠানতো ইমার্জেন্সির আওতাভুক্ত নয়। এক্ষেত্রে এনজিও প্রতিষ্ঠানের ইমার্জেন্সি কার্যক্রম ব্যতিত অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেহেতু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় অর্থ সংকটে আছে, সেহেতু আমরা আজ (গতকাল) মিটিং করে সিদ্ধান্ত দিয়েছি যে, মাঠ পর্যায়ে এনজিও বা সমিতির ঋনের টাকা উত্তোলণের কার্যক্রম যেন আপাতত বন্ধ রাখা হয়।’  

 

এই বিভাগের আরো খবর