বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

না.গঞ্জে বেড়েছে ছিনতাই  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২৪  

 

# অভিযোগ করতে হবে, পুলিশকে জানাতে হবে: এসপি
# ছিনতাইয়ের পয়েন্ট গুলো সেনা বাহিনীকে অবগত করেছি: ডিসি

 

নারায়ণগঞ্জ শব্দটা উচ্চারণ করলে, প্রথমেই একটা ব্যস্ত নগরীর চিত্র কল্পনায় আসে।  রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এই জেলা বাণিজ্যিক অঞ্চল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এসে বসবাস করেন। তবে ছিনতাইকারীর রাজ্যে পরিণত হয়েছে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ। দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি সন্ধ্যায়, রাতে এবং ভোরেও ছিনতাই হচ্ছে।

 

 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষের টাকা ছিনতাই, পথচারী, রিকশা আরোহী যাত্রীদের থামিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।  ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করছে। প্রকাশ্যে অটোরিকশা থামিয়ে ছিনতাই, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা বহনকারী গাড়িতে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রাণঘাতী ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে প্রায় সময়। এছাড়া ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আহত হচ্ছেন নগরবাসী।
 

 


এদিকে, সরকার পরিবর্তনের পর ভয়ংকর হয়ে উঠেছে রাতের সংযোগ সড়কসহ অলিগলি গুলো। আগের মতো পুলিশি টহল না থাকার সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা। বেড়েই চলেছে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। চলমান এ ভীতিকর পরিস্থিতিতে এসব দুর্বৃত্তের লাগাম টানতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা দরকার বলে মনে করছেন নগরবাসী। প্রশাসনের সক্রিয়তা বাড়লেই এসব সমস্যা সমাধান হবে বলে ধারণা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের ব্যাক্তিরা।
 

 


নগরীর গলাচিপা এলাকায় বসবাস করেন মো. আল মেহেদী। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমি একটি ডায়গনেস্টিক সেন্টারের মেডিসিন সেক্টরে কাজ করি। প্রতিদিন রোগীদের চাপ থাকায় রাতে দেড়ি করে বাড়িতে ফিরতে হয়। বালুর মাঠ হয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় রেললাইনের সামনে কিছু পোলাপান দাড়ায় থাকে। ওদের কাছে ছুরি চাকু থাকে।

 

 

প্রায় সময় এদিক দিয়ে লোকজন গেলে তাদের ধরে মারার ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা, মোবাইল-মানিব্যাগ হাতিয়ে রেখে দেয়। ৫ আগস্টের পর থেকে এটা বেড়ে গেছে। তার আগে পুলিশ সচারোচর আসতো। এখন তো পুলিশ আসেই না। তাই ছিনতাইকারীরাও সুযোগ পেয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।
 

 


জামতলা এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সোহেল তাজ নামে এক ব্যাক্তি জানায়, পেশাগত কারণে আমি প্রায় সময় রাতে দেড়িতে বাড়ি যাই। আমার বাসা জামতলা হওয়ায় আমার চাষাঢ়া মহিলা কলেজ ও তোলারাম কলেজ ক্রোস করে যেতে হয়। একদিন রাতে বাসায় ফিরছিলাম। তখন মহিলা কলেজের সামনে কিছু বখাটে পোলাপান আমার রিক্সা থামায়। আমাকে কোমড়ে ছুড়ি ঠেকিয়ে আমাক কাছ থেকে থাকা ১৫শ’ টাকা ও আমার ফোন নিয়ে যায়।  রিক্সা ভাড়াটা পর্যন্ত দিতে পারি নাই। কোন রকম প্রাণে বেচেঁ ফিরেছি। থানায় অভিযোগ করতে পারিনি কারণ আমার ফোনের কাগজ গুলো হারিয়ে গেছে।
 

 


তিনি আরও জানান, আগে এখানে রেগুলার পুলিশের টহল থাকতো। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর পুলিশ একেবারেই চোখে পরে না এখানে। রাতে নিস্তব্ধ থাকে এলাকাটা। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দেশে তো দুর্ঘটনা ঘটার পর টকন নড়ে প্রশাসনের। তার আগে তাদের খবর থাকে না।
 

 


নারায়ণগঞ্জে বিবি রোডে রাতে ১২টার পর একেবারে নীরব হয়ে যায়। কিছু কিছু জায়গা যেমন, কালীর বাজার আলম খান লেন, ২নং রেলগেইট এলাকা গুলো জমজমাট থাকলে বাকি রাস্তায় আতঙ্ক বিরাজ করে। হেটে যাওয়া যেমন দুষ্কর হয়েছে একই চলমান রিক্সায়ও অনিরাপদ জায়গা গুলো। বিশেষ করে নূর মসজিদের পাশের গলি, সাধু পৌলের গির্জার সামনে, গলাচিপার মোড়, উকিলপাড়ার মোড়, পুরান পালপাড়া, রেল লাইন, চুনকা পাঠাগার, ডিআইটি, মন্ডলপাড়া, নিতাইগঞ্জসহ ভীতিকর পরিস্থিতির শিকার হয় সাধারণ জনগণ।
 

 


নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সমাজে এই ধরণের ঘটনা  ঘটতেই থাকবে।  আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। নানা কারণে পুলিশের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা চলে যায়। এতে করে জনগণের সঙ্গে পুলিশের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। নারায়ণগঞ্জে যারা দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন তাদের ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করে দেয়া হয়।

 

 

আর যারা নতুন করে বদলি হয়ে এসেছেন তারা নারায়ণগঞ্জের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বুঝে উঠতে সময় নিচ্ছেন। ৫ আগস্টে পর থেকে নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ছে। এতে চোর- ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়েছে। টহল না থাকায় দেদারছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। আমরা চাই পুলিশ আইনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক। প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন যতদিন তাদের সর্বশক্তি দিয়ে সক্রিয় না হচ্ছে ততদিন আমাদের এগুলো মোকাবিলা করতে হবে। গণপ্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে হবে।
 

 


নারায়ণগঞ্জে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ছিনতাইকারীর সমস্যা সমাধান একটাই, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হতে হবে। একই রকমভাবে জনগণকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে পুলিশ কোন কাজ করছে না। এই অভিযোগ আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাচ্ছি। মোড়ে মোড়ে ছিনতাই হচ্ছে, পুলিশ তৎপরতা বাড়াতে হবে ও পুলিশকে সক্রিয় হতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে, কারণ এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠে নাই।
 

 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন,  মানুষের সাথে যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে সেটা থানায় এসে অভিযোগ করতে হবে, পুলিশকে জানাতে হবে। আমরা আসলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। শহরে আমাদের টহল আছে, হয়তো জনবল কিছুটা সংকট আছে তবে আমাদের যথেষ্ট টহল আছে।
 

 


নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, এসব সমস্যা সমাধানে আমরা ইতোমধ্যে আর্মির সাথে কথা বলেছি। আমরা আর্মি টহলে দিয়েছি। কোথায় কোথায় ছিনতাই হয় পয়েন্ট গুলো আমরা সেনা বাহিনীকে অবগত করে দিয়েছে। তারা সেখানে অভিযান করবে। আর বুধবার থেকে যৌথ বাহিনী নিয়মিত টহল থাকবে এসব জায়গা গুলোতে।           এন. হুসেইন রনী  /জেসি