মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

নানা সংকটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২১  

# করোনার ভয়ের সাথে রয়েছে আর্থিক দৈন্যতা


# কাজেও ভয়, ঘরেও ভয়



গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চলছে। ফলে ঝুঁকি কমাতে কয়েকদিন পর-পরই সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে দেখা গেছে। এদিকে, দেশে সম্প্রিতি করোনার যেই নতুন ভেরিয়েন্ট এসেছে এতে সনাক্তের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন লকডাউনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিধিনিষেধগুলো আরো কঠোর এবং দীর্ঘ হচ্ছে।

 

তবে সূত্র জানায়, বিধিনিষেধের পরও এখনো দেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। তাছাড়া সকলের অর্থনৈতীক সংকটের বিষয়টিও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশে চলমান লকডাউনের ফলে ঢাকার নিকটবর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে এখন এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। মূলত একদিকে করোনা আর অন্যদিকে আয় রোজগাড় কমে যাওয়ায়, জেলার বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ এখন কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।

 


গতকাল শহরের আমলাপাড়া এলাকায় ইয়াসিন নামে এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘নগরীর কালীর বাজারের ফ্রেন্ডস মার্কেটে গজ-কাপড়ের দোকান আছে তার। কিন্তু গত বেশ কয়েকদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে দীর্ঘ লকডাউনের ফলে তাঁর ব্যবসা এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। তিনি জানান, চলতি মাসে (জুলাই) ঈদুল আজহার আগে ৬ দিন বাদে বাকি সবকটি দিনই লকডাউনের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে ইয়াসিন। তাই ঈদে কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন দিতে ব্যার্থ হওয়ায় একজন কর্মচারী কাজ ছেড়ে চলেও গেছেন। এছাড়াও এখন সংসারের যাবতীয় খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী’।

 


এদিকে নগরীর ডিআইটি এলাকায় এক ইলেক্ট্রনিক‘স দোকানের মালিক বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরে আমাদের ব্যবসার যেই অবস্থা তা আর বলে লাভ নেই। যদি এক সপ্তাহ দোকান খোলা রাখি এরপর লকডাউনের কারণে দেখি ১৫ দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়। এই ভাবে কেমনে কি করি, সেটাই মাথায় আসছেনা। আয় রোজগাড় একেবারেই বন্ধ। এখন আসল সমস্যা হচ্ছে অনেকেই গিয়ে মানুষের কাছে চাইতে পারে, কিন্তু আমরা সেটা পারছিনা। অথচ আমরাও খুব টাকা পয়সার সংকটে আছি’।

 


হতাশা প্রকাশ করে আনিস নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, ‘ করোনা আর লকডাউন আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের সবচেয়ে বিপদে ফেলেছে।  কারণ দীর্ঘদিন ধরে সড়কে আমাদের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় কামাই রোজগাড়ও বন্ধ। হিসেব করলে দেখা যাবে গত কয়েক মাসে আমি নিজে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো ঋণ হয়েছি। কিছুই বুঝে আসছেনা যে, সামনে কি করবো’। সেলিম নামে এক রিক্সা চালক বলেন, ‘লকডাউনের কথা কি আর কমু ভাই, এডার কারনে আজকে আমাগো এখন না খাইয়া মারার অবস্থা। চাইয়া দেখেন রাস্তায় কোনো মানুষ আছে? কেউ নাই! আজকে সারাদিনে ৫’শ টাকাও কাজ করতে পারি নাই। বাড়িতে বউ পোলা মাইয়াসহ আরো তিনজন আছে, তাই একবার চিন্তা করেন ৩-৪’শ টাকায় মালিকের জমা দিমু কি, আর খামু কি?’।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকী বলেন, কারোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের বিধিনিষেধের কোন বিকল্প নেই। তবে এর পাশাপাশি আমাদের এটাও লক্ষ রাখতে হবে যাতে এই বিধিনিষেধর মধ্যে কেউ অর্থিক সমস্যায় না ভোগে। আমাদের কমিউনিটিতে এমন অনেক পরিবার আছে যারা কিনা কারো কাছে গিয়ে সাহায্য চাইতে পারবেনা। কিন্তু দেখা যায়, সে বিধিনিষেধের ফলে সত্যিই আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে। তাই আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদে সমাজের সকল শ্রেনির মানুষের কাছেই সাহায্য পৌছে দিতে হবে।    
 

এই বিভাগের আরো খবর