শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কের বেহাল অবস্থা, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুড়ের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে বাপ্পী চত্ত্বর, হাটখোলা, কাঠপট্টি হয়ে মোক্তারপুর পর্যন্ত রাস্তাটি নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত বেহাল পরিস্থিতি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন মালিক-শ্রমিকদের। 


নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কের পাওয়ার স্টেশন এলাকার রাস্তা নেই বললেই চলে। পুরো রাস্তা জুড়েই বিশাল বিশাল গর্ত। নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য পাবলিক যানবাহন হচ্ছে লেগুনা, ইজিবাইক, সিএনজি চালিত স্কুটার। 


এ রাস্তা দিয়ে যেতে থাকা লেগুনার ড্রাইভার সালাম জানান, বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে এমন অবস্থা হয় যে দেখা যায় সামনের অংশ ডুবে গিয়ে পানি গাড়ির ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। প্রায়ই গাড়ি বন্ধ হয়ে যায় পানিতে অথবা গাড়ির স্প্রিং ভেঙ্গে যায়। সপ্তাহে দুই-তিন দিন গাড়ি গ্যারেজে নিতে হয়। যা আয় হয় দেখা যায় এরচেয়ে বেশি ব্যায় হয়ে যাচ্ছে এই রাস্তার কারণে। 


ইজিবাইক চালক সেন্টু মিয়া জানান, রাস্তায় গর্তের কারণে প্রতিদিন তিন-চারটি ইজিবাইক উল্টে যাচ্ছে। আমারটিও কয়েকদিন আগে উল্টে গিয়েছিলো। কয়েকজন মহিলা ছিলো। তারা আহত হয়েছিলেন। 


পাওয়ার স্টেশন এলাকার কিছুটা পরের স্থানটির নাম কাশিপুর পূর্ব হাটখোলা। এখন বৃষ্টির মৌসুম না হলেও মাঝে মাঝে হওয়া বৃষ্টির পানি জমে আছে রাস্তার উপরে। রাস্তার এ পরিস্থিতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গর্ত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে গিয়ে লেগে থাকছে যানজট।


পাশের হাটখোলা হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা আক্তার বলেন, রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যদি কোনো গাড়ি উল্টে গিয়ে শরীরের উপরে পড়ে- এ ভয়ে রাস্তা দিয়ে যাইনা। অন্যদের বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। 


ক্রনি এপারেলস-এর সুইং বিভাগের শ্রমিক নূরজাহান মোনালিসা জানান, বাধ্য হয়েই এ রাস্তা দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার উপরে জমে থাকা পানি দেখা যায় প্রায়ই ছিটকে শরিরে এসে জামা কাপড় নষ্ট হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় সবাই যেটুকু শুকনো জায়গা আছে সেদিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। ফলে প্রায়ই গাড়ির দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে।     


পূর্ব হাটখোলার পরে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্রাউন সিমেন্টের সামনের অংশে আমরা থামলাম। পীচ উঠে এ স্থানে রাস্তাটি পুরোই ভেঙ্গে গিয়েছিলো। সম্প্রতি সড়ক ও জনপদ কতৃপক্ষ এখানে কিছু ইট ভাঙ্গা ফেলে ও ইট বিছিয়ে দিয়েছে। তাই এ স্থানের গর্তগুলি আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলে এখানে কী হতে পারে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। 


মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম সৈকত জানান, দুই জেলার লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন এ পথ দিয়ে আসা যাওয়া করে। কিন্তু রাস্তাটি প্রায় দুই-তিন বছর ধরে বেহাল অবস্থা থাকলেও কারো যেন নজরে পড়ছে না। এ স্থানে রাস্তাটি নিচু হওয়ায় পানি জমে রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। তিনি বলেন রাস্তাটি এখন মরনফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে।

 
নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কটি সেতু কতৃপক্ষ, কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন। কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, এই সড়কের যে অংশটি ইউনিয়ন পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশনে পড়েছে সে অংশটি সিটি কর্পোরেশন ঠিক করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা আমাদের কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা করবো। 


নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন জানান, রাস্তাটির পাওয়ার স্টেশন পর্যন্ত অংশ সিটি কর্পোরেশনে বাকি অংশ কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও সেতু কতৃপক্ষের আওতায় পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে যে অংশ পড়েছে সেটিসহ সিটি কর্পোরেশনের জনগণের স্বার্থে রাস্তাটি মেরামত করে দেবে। এ ব্যাপারে টেন্ডার আহ্বান প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি ঈদের আগেই কাজ শুরু হবে।  


এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেতু কতৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.ওহিদুজ্জামান জানান, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের ভাঙ্গা অংশ মেরামতের জন্য এক কোটি বিশ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি ঈদের আগেই মেরামত সম্পন্ন হবে।


তিনি বলেন, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ অংশে রাস্তার দু’পাশে যাদের বাড়ি তারা তাদের বাড়ির উপর দিয়ে বৃষ্টির পানি যেতে দেয়না। ফলে পানি রাস্তার উপরে আটকে থাকে। পানি আটকে থাকায় রাস্তা ভেঙ্গে যায়। আমরা প্রতিবার রাস্তা করার সময় উঁচু করে করি। উঁচু করতেও এলাকাবাসি বাঁধা দেয়। পুলিশ সাথে নিয়ে রাস্তার কাজ করি। এরপরে আবার দেখা যায় এলাকার লোকজন তাদের বাড়িঘর রাস্তার চেয়েও উঁচু করে করছে। ফলে পানি আবার রাস্তায় জমে রাস্তা ভেঙ্গে যায়। 


এ সমস্যা সমাধানে রাস্তার দু’পাশে ড্রেন করার প্রস্তাব করেন কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আইযুব আলী। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সব রাস্তার দু’পাশে ড্রেন আছে ফলে তাদের রাস্তা সহজে ভাঙ্গে না।

এই বিভাগের আরো খবর