নারায়ণগঞ্জে কাজী নজরুলের ‘অভিযান’
রণজিৎ মোদক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৩
“নতুন পথের যাত্রা পথিক/ চালাও অভিযান/ উচ্চ কন্ঠে উচ্চারো আজ/ মানুষ মহীয়ান” এই বিখ্যাত কবিতাটি নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ঘরে বসে লিখেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৪০ সালে অবিভক্ত বাংলার নারায়ণগঞ্জ ইউরোপিয়ান ক্লাব (বর্তমান নারায়ণগঞ্জ ক্লাব) বিশ্বখ্যাত এইচ এম ভীর গ্রামোফোন কোম্পানীর রেকর্ডিং রুমে বসে রিহার্সাল করতেন কবি নজরুল ও তার সহযোগীবৃন্দ। এখানে বসেই লেখা হয় মানবতাবাদী কবির শ্রেষ্ঠ কবিতা।
সেই স্মৃতি স্মরণ করে আজও নারায়ণগঞ্জবাসী গর্ব অনুভব করে আসছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক নব ধুমকেতু। জন্মেছিলেন ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ মে বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। পিতা কাজী ফকির আহম্মদ। মাতা জাহিদা খাতুন। মাত্র নয় বছর বয়সে পিতা হারিয়ে সীমাহীন অর্থকষ্টে দিন কাটে।
দুঃখ দারিদ্রের মধ্যে কাজ নেয় রুটির দোকানে, কখনো অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যে বাল্য ও কৈশর অতিবাহিত করার পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ৪৯ নং বাঙ্গালী পল্টনে নাম লিখিয়ে নৌ-সেনায় প্রশিক্ষণ শেষে করাচিতে স্থায়ী হন। যুদ্ধের পর ১৯২০ সালে কলকাতায় ফিরে বাঙ্গালীর মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিস ঘরে আস্তানা গাড়েন।
কমরেড মুজাফফর আহমদের মত মানুষের স্নেহ সুধায় অভিষিক্ত হন কবি। ১৯২১ সালে কুমিল্লার সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিস বেগম এর সঙ্গে অসফল প্রণয় পরিণয়ের পর ১৯২২ সালে লিখলেন ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ ফলশ্রুতীতে হল কারাবাস। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কুমিল্লার প্রমীলা সেনগুপ্তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কলকাতায়। দুটি সন্তানের অকাল মৃত্যুর পর সব্যসাচী অনিরুদ্ধের জন্ম হয়। ১৯৩৯ সালে স্ত্রী প্রমীলা পক্ষাঘাত হয়ে শয্যাশায়ী হলেন।
দুঃখের মধ্যে দুঃখ যেন আরো দ্বিগুন রূপে সামনে এসে দাড়াঁয় ১৯৪২ সালে কবি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন চিরতরে। কবি পত্নী ১৯৬২ সালে মারা যান। দূর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি দুখু কবির জীবন থেকে। নিদারুণ অর্থকষ্ট রোগাক্লিষ্ট কবি তার পরিবার নিয়ে অযত্ন অবহেলায় দিনযাপন করে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কবিকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
“রতনে রতন চিনে, মানিক চিনে মানিক” সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতার মূল প্রেরণা পেয়েছিলেন সাহসী কবি নজরুলের বিদ্রোহ ও সাম্যের কবিতা থেকে। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এই বিদ্রোহী প্রতিভাকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে এসে তাকে জাতীয় কবির সম্মানে ভূষিত করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র উপহার দেন জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান। এ যেন কবির প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। কবি নজরুল ইসলামের গানের সাথে যাদের নাম উচ্চারণ না করলেই নয়, তারা হলেন- কমল দাস গুপ্ত, ফিরোজা বেগম ও কোকিল কন্ঠের অধিকারী আব্বাস উদ্দিন আহমেদ।
প্রমত্যা পদ্মার বুকে কবি ও আব্বাস উদ্দিন আহমেদ তার ছোট্ট মেয়ে ফেরদৌসীকে নিয়ে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসার পথে লিখলেন, “পদ্মার ঢেউরে... আমার শুন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা, নিয়ে যারে.....”। এই গানটি কবি নিজেই শিশু শিল্পী ফেরদৌসীর কন্ঠে তুলে দিলেন এবং সেই গানটি ঢাকার বেতার কেন্দ্র উদ্বোধনে শিশু শিল্পী ফেরদৌসী পরিবেশন করেন। ঘটনাবহুল কবির জীবন যেন এক মহাকাব্য।
বাঙলার সন্তান হয়েও একসময় একশ্রেণীর বাঙালিদের কাছেই বেশি ঘৃণার পাত্র হয়েছিলেন নজরুল। তার কারণ ছিলো তিনি বিদ্রোহী ও সাম্যবাদী ছিলেন। নজরুল তার জীবনীতে এ কথা নিজেই বলে গেছেন। মানুষ কবিতায় কবি তার পরিচয় দিয়েছেন। গ্রামোফোন কোম্পানীর সাথে যুক্ত হওয়ার থেকেই নজরুল অজস্রভাবে গান লিখে যাচ্ছিলেন। প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেছেন নজরুল।
নজরুলের শ্যামা সঙ্গীত, দেশত্ববোধ এবং রণ সঙ্গীত শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। আজাদ হিন্দ ফৌজের নায়ক নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, কাজী নজরুলকে রণসঙ্গীতে শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে স্বর্ণের দোয়াত কলম উপহার প্রদান করেন।
নেতাজী বলেছিলেন, আমি বিশ্বের বহু দেশ ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্তু নজরুলের লেখা রণসঙ্গীতের ন্যায় এত উচ্চমানের রন সঙ্গীত কোথাও শুনিনি। মূলত: আধুনিক বাংলা প্রেম গানের বিশিষ্ট রূপকার ছিলেন নজরুল। তাছাড়া ভক্তিমূলক গান রচনায় নজরুল অদ্বিতীয়।
নজরুলের ইসলামী ভাব ধারায় গানগুলোতে মুসলিম ঐতিহ্য প্রকাশ পেয়েছে। নজরুলের প্রথম ও সবচেয়ে জনপ্রিয় গজল গানের বই ‘বুলবুল’ ছিল বাংলার মানুষের অত্যন্ত প্রিয়। ইসলামী গজল, হামনাদ রচনায় নজরুল যেমন শ্রেষ্ঠ, হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্যামা সঙ্গীত রচনায় নজরুল তেমনই শ্রেষ্ঠ।
মূলতঃ নজরুলের লেখার মধ্যে বাংলার মানুষের অন্তরের স্রোতধারাই প্রবাহিত এবং প্রকাশিত হয়েছে। জীবৎকালে যেমন মৃত্যুর পরেও কবিকে নিয়ে কবির সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রকৃত মূল্যায়নের চেয়ে রাজনীতিই হয়েছে বেশি দুঃখ এখানেই। যে অনুদান সাম্প্রদায়িক শক্তি কবির জীবদ্দশায় তাকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা পার্থিক আনুকূল্য কিংবা পৃষ্ঠপোষকতা করেনি বিন্দুমাত্র। সাধারণের ভক্তি ভালবাসায় অভিষিক্ত কবিকে তারাই এখন আপনজন বলে বুকের ভেতর পুরতে চাইছে।
দুঃখ এখানেই যে কবি গণ মানুষের, যে কবি শিকল ভাঙ্গার গান গেয়েছেন। যে কবির বাণীর লাগি আমরা আজ পেতে থাকি আমাদের যাবতীয় সংকটে দুঃখ ধৈর্য্যে সেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা মহা প্রলয়ের দোনাচার্যকে আমার আমাদের সীমিতবোধ বুদ্ধির ঘেরাটোপে বৃত্তাবদ্ধ করতে চাইছি, দুঃখ এখানেই। বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের কবি নজরুল। কালের দাবি পূরণ করতেই তার আবির্ভাব। নজরুল অপ্রতিরোধ্য, অগ্রগামী, অনন্ত এক মানুষ।
নজরুলকে নিয়ে ডঃ করুণাময় গোস্বামী বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্র-নজরুল একই সাগরের দুটি রূপ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাগরের তলদেশ আর নজরুল ইসলাম সাগরের উপরের উত্তাল তরাঙ্গায়িত রূপ।’ হোসেনুর রহমান তার এক প্রবন্ধে বলেছেন, ‘বাঙ্গালী মুসলমানকে বুঝতে হবে তার এক সুগভীর অতীত আছে। সেই অতীতে সে হিন্দু-বৌদ্ধ ঐতিহ্যে অবগাহন করেছে।’
১৯৪০ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী ইসলাম কলকাতা থেকে স্টিমারযোগে এবং ট্রেন যোগে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তৎকালীন এইচ এম ভীর ষ্টুডিওর ভবনে বসে বসে গান রচনা করে রেকর্ডিং আব্বাস উদ্দিনের কন্ঠে। আর এই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে বসেই কবি লিখেছিলেন তার সেই বিখ্যাত কবিতা ‘নতুন পথের যাত্রা পথিক/ চালাও অভিযান উচ্চ কন্ঠে উচ্চারো আজ। মানুষ মহীয়ান’।
নারায়ণগঞ্জবাসীর মন মানসিকতায় শান্ত শিশু হৃদয়ের বন্ধু প্রীতিম সাঙ্গাবস্থানকে লক্ষ্য করেই কবি শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, মেঘনা ও বুড়িগঙ্গা ব্রহ্মপুত্র বিধৌত পলির পরশ নিয়েই ‘অভিযান’ কবিতায় কবি লিখেছেন, কুচকাওয়াজের বাজাও মাদল/ গাও প্রভাতের গান!/ ঊষার দ্বারে পৌছে গাবি/ ‘জয় নব উত্থান!’ লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক।
- আ.লীগের সেক্রেটারি পলাতক, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সভাপতি
- ভূইগড়ে পলিথিন কারখানায় অভিযান, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, জরিমানা
- ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষই নির্যাতনের শিকার : গবেষণা
- সবজির মূল্যে ঊর্ধ্বগতি
- না.গঞ্জে বেড়েছে ছিনতাই
- রূপগঞ্জে সুতা কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
- গাজীর সন্ত্রাসীরা এখন দিপু ভূঁইয়ার কর্মী : সেলিম প্রধান
- ওসমান পরিবারের দোসরদের প্রতিহত করবে যুবদলের নেতাকর্মীরাই
- ফতুল্লায় শামীম ওসমানসহ ৬৩ জনের নামে হত্যাচেষ্টা মামলা
- পাগলায় অবাধে চলছে অবৈধ পলিথিন কারখানা
- আবারো ভর্তি পরীক্ষায় ফিরছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
- ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ব্যবসায়ীর লাশ, ধারণা হত্যা
- নাসিক সিইও’র নির্দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরীতে ঔষধ স্প্রে
- দুর্ধর্ষ সৈকত রাজ আতঙ্কে কুতুবাইল-কাঠেরপুলবাসী
- নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
- লাশের ১১ টুকরা ফেলে দেয়ার পর নিশ্চিন্তে ঘুম দেন প্রেমিকা রুমা
- খুনের ঘটনা বাড়ায় উদ্বেগ
- লিটন-শান্তর নেতৃত্বে বন্দর থানা কৃষকদলের কমিটির অনুমোদন
- এক বছরে পাঠ্যবই তিনবার কিনিয়েছেন শিক্ষকরা
- এক বছরে পাঠ্যবই তিনবার কিনিয়েছেন শিক্ষকরা
- সুসময়ের নৌকা প্রত্যাশীরা পলাতক
- বাংলাদেশে দূতাবাস খুলতে চায় আজারবাইজান
- না.গঞ্জের সাবেক র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন গ্রেপ্তার
- রাগে-ক্ষোভে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরো করেন প্রেমিকা
- বিনামূল্যে আজীবন চিকিৎসা পাবেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা
- শ্রম খাত সংস্কারের অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার
- শহরের যানজট নিরসনে পাঁচ সংস্থার যৌথ অভিযান ও জরিমানা
- আকাঁশছোঁয়া দামে সবজি, চালে ঊর্ধ্বমুখী
- খানাখন্দে ভরা শিমরাইল-আদমজী সড়ক
- গণদাবির বিরুদ্ধে অনড় বাস মালিকরা!
- ওসমান পরিবারের দোসরদের প্রতিহত করবে যুবদলের নেতাকর্মীরাই
- রাগে-ক্ষোভে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরো করেন প্রেমিকা
- গ্রেপ্তার হচ্ছেন পলাতক নেতারা
- দুর্ধর্ষ সৈকত রাজ আতঙ্কে কুতুবাইল-কাঠেরপুলবাসী
- বিতর্ক কর্মকাণ্ডে বিলুপ্তির পথে খোকন
- বিএনপির ব্যাড বুকে তাঁরা
- সুসময়ের নৌকা প্রত্যাশীরা পলাতক
- লাশের ১১ টুকরা ফেলে দেয়ার পর নিশ্চিন্তে ঘুম দেন প্রেমিকা রুমা
- ফতুল্লায় শামীম ওসমানসহ ৬৩ জনের নামে হত্যাচেষ্টা মামলা
- লিটন-শান্তর নেতৃত্বে বন্দর থানা কৃষকদলের কমিটির অনুমোদন
- না.গঞ্জের সাবেক র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন গ্রেপ্তার
- ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করলেন আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম
- দুর্ধর্ষ দুই চাঁদাবাজে জিম্মিদশায় বন্দরের লক্ষণখোলা
- গাজীর সন্ত্রাসীরা এখন দিপু ভূঁইয়ার কর্মী : সেলিম প্রধান
- পাঁচ দিনের রিমান্ডে উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন
- এক বছরে পাঠ্যবই তিনবার কিনিয়েছেন শিক্ষকরা
- সাবেক হুইপ বাবুর ক্যাডার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন গ্রেফতার
- ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ব্যবসায়ীর লাশ, ধারণা হত্যা
- নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
- শহরের যানজট নিরসনে পাঁচ সংস্থার যৌথ অভিযান ও জরিমানা