শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

নারী দিবসের তাৎপর্য নেই

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০১৯  

রাহিমা আক্তার লিজা : আন্তর্জাতিক নারী দিবস জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি দিন। মার্চ মাসের ৮ তারিখ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে উদ্যাপন করা আরাম্ভ হয় ১৯১০ সাল থেকে। আমার কাছে নারী দিবসের আলাদা কোনো তাৎপর্য নেই। নারীর প্রতি এই নারী দিবস অনুগ্রহ যথা, আমি মনে করি এই পৃথিবীর প্রতিটি দিনই নারীর কর্মতৎপরতায় আলোকিত হয়। 

এই পৃথিবীর প্রতিটি রাতই নারীর বঞ্চনার কালিমা নিয়ে আরো গাঢ হয়, এই পৃথিবীর প্রতিটি সকাল শুরু হয় নারীর কাছ থেকে আপোষের দাস্তখত নিয়ে, তবে কেন একটি দিন তার জন্য আলাদা করে দেয়া? কি হবে আজ এই নারী দিবসে, কিছু নারী সংগঠন নারীদের নিয়ে একটি র‌্যালী করবে, দফায় দফায় সেমিনার হবে, টিভি চ্যানেলগুলোতে টকশোতে বক্তারা নারী মুক্তির অগ্রদুতেরা নারী স্বাধীনতার উপর কথা বলতে বলতে হেচকি তুলে ফেলবে, তারপর এই বক্তাদেরই কেউ কেউ হয়তো বাড়ি ফিরে গিয়ে নানা ছুতোনাতায় বৌ পেটাবে!। 

আর বিজ্ঞাপনগুলো নারীর পায়ে অর্ঘ্য দিতে দিতে তাকে দেবী বানিয়ে ফেলবে। পুরুষের বগলের তলায় গর্বিত নারীরা সেই অনুষ্ঠান আর বিজ্ঞাপন দেখার ফাঁকে ফাঁকে অষ্ট ব্যঞ্জন রান্না করে পুরুষের মনোরঞ্জনে মেতে উঠবে। 

যারা পুরুষের চোখে নিজেকে মোহনীয় করে তোলার চেষ্টায় যথার্থ অর্ধাঙ্গিনী হয়ে উঠেন। বিবাহ বার্ষিকীতে দামী শাড়ী গহনা উপহার দেয়ার মতো যারা নারীকে এই নারী দিবস উপহার দিয়েছেন তারা কি বলতে পারবেন আজ নারী দিবস আজ অন্তত পৃথিবীর কোথাও একটি নারীও ধর্ষিত হবে না.... থাক আজ নারী দিবস তাই একটু জ্বালাময়ী কথা বলে আমার দিনটিকে উপভোগ করার চেষ্টা। 

দয়া করে কেউ গালী দিবেন না, কাল আমার ওয়ালে দেখলাম একজন ‘অল্প বয়সী বিবাহিত নারীর প্রেম’ না এই জাতীয় একটা স্ট্যাটাস দিয়ে সেখানে সেই নারীকে মনের ঝাল মিটিয়ে গালাগালী করেছে, সেই গালীবাজের নাম জিসান না কি যেন, কি করবো? ব্লক করতে বাধ্য হলাম। যাই হোক দৌঁড়ের উপর আছি, ভালো থাইকেন পৃথিবী তার সবগুলো দিন নিয়ে নারীর পাশে থাইকেন।

দুঃখের বিষয় এখনও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীর প্রতি বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য রয়েই গেছে। নারী শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হয় নাই। বরঞ্চ দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। শিল্প কারখানায় নারী শ্রমিকেরা পুরুষ শ্রমিকের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। 

নারী শ্রমিক নির্ভর বিকাশমান গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিকদের এখনও পরিচয় পত্র সব কারখানায় দেওয়া হয় না। হাজিরা কার্ড, ওভারটাইমের মজুরী, সাপ্তাহিক ছুটি ও বোনাসসহ ন্যূনতম যে সব সুবিধা পাওয়ার কথা তার কিছুই গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিকেরা পায় না। দুপুরে খাবার খেতে যে সময়টুকু লাগে মালিকেরা ছুটির পরে সে সময়টুকুতেও শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। কারখানার গেটে তালা মেরে রাখা হয় এখনও।

নারী নির্যাতন হচ্ছে ঘরে, বাইরে সবখানে। এ লড়াইয়ে তারা যে এগিয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। নারী তাদের যোগ্যতা দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত নারী শ্রমিকদের যে আর ঘরে আবদ্ধ করে রাখা সম্ভব নয় তাদের আন্দোলন যে দানা বেঁধে উঠছে এটা বুঝতে পেরে ধনী দেশগুলো তাদের দোসর আন্তর্জাতিক সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দোষ চাপানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। 

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এদেশের শিল্পের সংকোচন ও শ্রমিক ছাঁটায়ের জন্য সব সময় চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে অবাধ আমদানী নীতি প্রবর্তনের জন্য বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অব্যাহত আছে যা দেশীয় শিল্পকে ধ্বংস করার ফন্দি। ৮ মার্চের উৎস শ্রমিক আন্দোলন থেকে। এখনও শ্রমিক নারীদের প্রশ্নই বড় প্রশ্ন। কারণ এর মধ্যেই আছে পুরো সমাজের ইতিহাস।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে সারা বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীরা তাদের দৈনন্দিন কাজের সুবিধা ও সামাজিক অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করছে। সংগ্রাম গড়ে তুলছে সমান কাজ ও সমান মজুরির জন্য। 

কারখানার কাজের নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষার জন্য। ইউনিয়ন ও দরকষাকষির জন্য। মাতৃত্বকালীন ছুটি ও বেবীক্র্যাশ বাস্তবায়নের জন্য। সকল কাজে নারী পুরুষের বৈষম্য নিরসনের জন্য। 

লেখক : নারী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
 

এই বিভাগের আরো খবর