বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের দামে আগুন  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২৪  


বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম তেমন কমেনি। নতুন করে দাম না বাড়লেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল  শীতকালীন সবজি। ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছু জায়গায় কম থাকলেও অধিকাংশ দোকানীরা সুযোগ পেলেই রাখেন বাড়তি দাম। মাছের বাজারেও খুব বেশি পরিবর্তন নেই। বাজারের ব্যবসায়ীরা মূলত সিন্ডিকেট বানিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন দ্রব্যমূল্যের দাম।

 

 

বক্তব্য চাইলে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই কুচকান কপালের চামড়া। দাম বেশি কেন জিজ্ঞেস করা যেমন ক্রেতার দায়িত্ব দাম বেশি হওয়ার কারণ বলাও তেমনি ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব কিন্তু তা না করে দাম কেন বেশি জিজ্ঞেস করলেই ক্ষেপে যান তারা ক্রেতাদের সাথে করেন খারাপ ব্যবহার। ফলে ক্রেতারা অসহায় হয়ে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের ফলে সৃষ্ট উচ্চদামেই বাধ্য হয়ে ক্রয় করছেন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।

 


নারায়াণগঞ্জ জেলার অন্যতম দীগু বাবুর বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু সরবরাহ কম না থাকলেও আলু, পেঁয়াজ, শীতকালীন সবজির দামের প্রচন্ড তাপে ঝলসে যাচ্ছেন ক্রেতারা। গত সপ্তাহের মতো দেশি পেঁয়াজের কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, দেশি হাইব্রিডের কেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৯৮ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি নতুন আলু মানভেদে ৯০ থেকে ১১০ টাকা এবং পুরোনো আলুর কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 


অন্যদিকে, বাজারে বেড়েছে শীতকালীন সবজির সরবরাহ। কিন্তু কমেনি দাম। সবজি ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, গোল বেগুন ৭০ থেকে ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০-৭০ টাকা,  উস্তা ৮০-১০০ টাকা,  শিম ৫০- ৮০ টাকা , পটোল ৫০-৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস আকারে ছোট হলে ৪০ এবং বড় হলে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়।

 


এছাড়াও বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বেশিরভাগ দোকানে দেখা যায়নি। পাঁচ লিটারের বোতল থাকলেও বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামে, অর্থাৎ ৮১৮-৮২০ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে যা কেনা যেতো ৭৯০ থেকে ৮১০ টাকায়। তবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। যে কারণে গত সপ্তাহে বেশি থাকলেও এখন পাম অয়েলের দাম লিটারে ১০ টাকার মতো কমেছে। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকায়। খোলা সয়াবিনের লিটার কিনতে খরচ হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকা।

 


তবে কিছুটা কমেছে ডিম-মুরগির দাম। আগের মতোই  ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ফার্মের ডিমের ডজন বাজারে ১৪৫ টাকা যা এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা রাখছেন ১৫০- ১৫৩ টাকা।

 


খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। ফলে যেসব কোম্পানির তেল পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোও চাহিদার তুলনায় কম। বিশেষত এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ খুবই কম। আমরা যা পাবো ক্রেতাদের তো তাই-ই দেবো।
কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে বিক্রি হওয়া আলু আগের এগুলো আমদানি করা হয়েছিল ভারত থেকে।

 

 

বাংলাদেশের আলু আমাদের হাতে যতদিন পর্যন্ত পৌছাবে না ততদিন এই দামেই বিক্রি করতে হবে। নয়তো আমাদের লাভ খাকবে না। নতুন যেই আলুগুলো বাজারে উঠতে দেখা যাচ্ছে সেই আলুগুলো কি আমাদের ক্ষেতের নয়? এমন প্রশ্নে তারা বলেন, অল্প কিছু আছে কিন্তু বেশিরভাগই ভারত থেকে আসছে। আশা করি খুব দ্রুত দেশি আলু ঢোকা শুরু করবে। তখন কিছুটা কমবে।

 


অমিত শাহ নামের একজন ক্রেতা বলেন, ভাই আমরা বুঝি তারা চাইলেই দাম কমতে পারে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট বানিয়ে ইচ্ছা করে ক্রেতার পকেটের ঘাম ঝরানো টাকাগুলো ভুলভাল বুঝিয়ে নিয়ে নেয়। দাম কেন বেশি প্রশ্ন করলে এরা ভয়ংকর খারাপ আচরন করে। মহিলাদের সাথে এরা অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন। দুদিন আগে কালিরবাজারের মসলাপট্টিতে গিয়েছিল আমার মা ও আমার ছোটবোন।

 

 

তারা মসলা সবজিসহ আরও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতেই বাজারে যান। তো মসলাপট্টির এক দোকানদার তাদের কাছ থেকে সবকিছুর দামই একটু একটু বাড়তি চান। আমার বোন তাদের প্রশ্ন করে দাম এত বেশি কেন ? সেই দোকানের মালিকসহ স্টাফরা সবাই বিভিন্ন ভাবে আমার বোনকে অপমান করেন। এতে আমার বোন কান্না করে দেয় এবং আমাকে ফোন দেয়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি তারা আসলেই বেয়াদব।

 

 

আমার মাথা গরম হয়ে যায় এবং আমি বলি তোর কপাল ভালো তাই আজ তোরে কেউ কিছু বললো না কিন্তু একদিন তুই বা তোর পরিবার ঝামেলায় পড়বি। সবচেয়ে অবাককর বিষয় হচ্ছে আশেপাশের কোনো দোকানদার আমার পক্ষে কথা বলেননি। উল্টা নানাভাবে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করলো যে দোকানদারই ঠিক। আর আমি বুঝলাম এরা এখানে সিন্ডিকেট বানিয়ে ক্রেতাদের থেকে অধিক দাম আদায় করছে বাড়তি লাভের আশায়।

 

 

এটা যে অবৈধ তা তারা কেউ মানবেই না। ভোক্তা অধিকারকে ফোন দেবো বলায় তারা চোখ গরম করে আমার দিকে তাকায় এবং বলে দেন ফোন দেহি আপনে কত বড় মাতবর ওই গেট লাগা! এই বলে মসলাপট্টিতে থাকা তাদের সকল সিন্ডিকেটদের নিয়ে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। আমার সাথে পরিবার থাকায় আমি তাদেরকে কিছুই বলি নাই। মালিক সভাপতির নাম্বার খোঁজ করলে তা আর পাওয়া যায়নি। নয়তো নালিশ করতাম। এগুলো আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা দেখবেন না। ভোক্তা অধিকারের চোখে পড়বে না। এসকল সিন্ডিকেটের কারণেই আজ দেশ রসাতলে যাচ্ছে।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি  

এই বিভাগের আরো খবর