সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

পথে পথে বাধা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# ফাঁকা মহাসড়ক, নেই তেমন যানবাহন
# নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫টি রুটে বন্ধ লঞ্চ চলাচল
# বন্ধ আছে ট্রেন চলাচল

 

আজ সেই ১০ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই ১০ তারিখ ঢাকায় গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে। সেই গণসমাবেশের ডাক দেওয়ার পর থেকেই সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করে বিএনপি। এরই মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতেও জনসমাবেশ করে তারা।

 

 

সেই কর্মসূচীকের কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের ঘুমন্ত অবস্থা থেকেও জেগে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। বিভিন্ন মতবিরোধের পরও কর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি এবং নারায়ণগঞ্জের রাজপথে সরব উপস্থিতি দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মধ্যে। তাছাড়া দীর্ঘদিন মাঠে সরব থাকা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এখন রাজপথে না থাকলেও বিএনপির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

 

 

অন্যদিকে গত ৭ ডিসেম্বর পল্টনের পুলিশ বিএনপির সংঘর্ষের পর থেকে বেশ সতর্ক হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকারী দল আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ অনেকটা নিশ্চুপ থেকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ বিএনপি তাদের কর্মসূচী যেকোন মূল্যে বাস্তাবায়নে বিভিন্ন উপায় বা কৌশল বের করে সে অনুযায়ী করায় মনযোগী। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ যেহেতু ঢাকার প্রতিবেশী জেলা এবং শহর তাই সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী যে স্থানটিকে সমাবেশের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার বেশ কয়েকটি পয়েন্টেই নারায়ণগঞ্জের অবস্থান। তাই সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বিভিন্ন দপ্তর।

 

 

শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে গণপরিবহন, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশী চালিয়ে কোন অসংগতি আছে কিনা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছে তারা। তাছাড়া এই গণসমাবেশকে নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে বেশ কয়েকদিন যাবতই ভোগান্তিতে আছেন সাধারণ জনগণ। একই সাথে ১০ ডিসেম্বর (আজ শনিবার) দেশে কি হতে যাচ্ছে, নতুন করে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন সাধারণ মানুষ।

 

 

এর আগে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বিএনপির ডাকা গণসমাবেশে ঢাকার পর সর্বোচ্চ লোকসমাগম ঘটানোর চেষ্টা করা হবে নারায়ণগঞ্জ থেকে। তাই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃবৃন্দ সেই লক্ষ্যকে টার্গেটে রেখেই তাদের পরিকল্পনা আগাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়। এতদিন সমাবেশ হবে কি হবে না তা নিয়ে অর্থাৎ অনুমতি নিয়ে সমস্যা ছিল। পরে সমাবেশের স্থান নিয়ে বাধে ঝামেলা।

 

 

সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিতে চাইলেও বিএনপি পল্টন ছাড়া অন্য কোথাও সমাবেশ করবে না বলে জানান। তাছাড়া গত ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টন এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধলে গণসমাবেশের রূপরেখায় একটি পরিবর্তন আসে।

 

 

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই বিভিন্ন অভিযোগে আটক হয়ে কারাগারে চলে যান। তবে শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ হতে রাজধানীর গোলাপবাগ এলাকায় এই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় এবং বিএনপির পক্ষ থেকেও তা মেনে নেওয়া হয়। ফলে সমাবেশের স্থান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান ঘটে।

 

 

ফাঁকা মহাসড়ক, নেই তেমন বাস ও যানবাহন : একেবারেই ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা সিলেট ও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক। শুক্রবার সকাল থেকে এসব মহাসড়কে যানবাহন একেবারেই কম দেখা গেছে। নেই চোখে পড়ার মত যাত্রীবাহী বাসও।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে মহাসড়কগুলো ঘুরে সরেজমিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সরেজমনে দেখা যায়, সকাল থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নেই যানবাহনের চাপ। নেই যাত্রীবাহী বাস ও যাত্রীর চাপও। বন্ধ রয়েছে অনেক বাসের কাউন্টার। সকাল থেকে একেবারে ফাঁকাই রয়েছে মহাসড়ক। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবুল কাশেম আজাদ জানান, যানবাহন কম, মহাসড়ক ফাঁকা। আমরা নিরাপত্তায় আছি, সবকিছু স্বাভাবিক আছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫টি রুটে বন্ধ লঞ্চ চলাচল :  নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ চাঁদপুরসহ ৫টি রুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ ও নৌযান চলাচল। তবে মালিকরা বলছেন, কোন চাপে বা কারো নির্দেশে নয় বরং যাত্রী নেই বলেই বন্ধ রাখা হয়েছে লঞ্চ চলাচল। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় টার্মিনাল ঘাটে সরেজমিনে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এসময় অনেক যাত্রীকে দেখা গেছে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে। টার্মিনাল সুত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী ৫টি রুটের প্রায় ৫০ টি লঞ্চ। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা খুবই কাছে। সহজেই এসব রুটে বিএনপির নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জ জড়ো হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারে। আর এ আশঙ্কা থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে নৌযান চলাচল।  বিআইডব্লিউটিএ'র পরিদর্শক সমর কৃষ্ণ জানান, আমাদের লঞ্চ চলাচল বন্ধের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই। লঞ্চ মালিকরা কেন চালাচ্ছেন না এটা তারাই বলতে পারবেন।  লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, আমাদের উপর কোন নির্দেশনা বা চাপ নেই। সরকারি বা বেসরকারি কেউই কোন চাপ বা নির্দেশনা দেয়নি। যাত্রী না থাকায় লঞ্চগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে অন্য কোন বিষয় নেই। নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মীনা মাহমুদ জানান, লঞ্চ বন্ধ আছে এমন কোন তথ্য আমার জানা নেই।

 

 

নদীতে নৌ পুলিশের বিশেষ টহল, নৌযানে জিজ্ঞাসাবাদ: নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে বিশেষ নিরাপত্তা টহল শুরু করেছে নৌ পুলিশ। নৌপথে চলাচলকারী বিভিন্ন নৌযানকে থামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তারা কোথায় যাচ্ছেন। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর কাঁচপুর, বন্দর ঘাট, নবীগঞ্জ ঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। তবে পুলিশ বলছে, এটি বিশেষ নিরাপত্তার অংশ যা চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, নৌপথে চলাচলকারী নানা যানবাহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে নৌ পুলিশের সদস্যরা। স্প্রিডবোটে, নৌ টহল বোটে করে নৌ পুলিশের সদস্যরা নদীতে ঘুরে ঘুরে এ টহল দিচ্ছেন। এসময় কাঁচপুর ব্রিজের নিচে থাকা ইঞ্জিনচালিক নৌকা ও লঞ্চ থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে নৌ পুলিশকে।

এদিকে সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ৫টি রুটের ৫০টি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মীনা মাহমুদ জানান, লঞ্চ বন্ধ আছে এমন কোন তথ্য আমার জানা নেই। টহল চলছে কারণ নদীপথের মাধ্যমে যেন কেউ এসে কোন নাশকতা করতে না পারে। এই বিশেষ টহল চলবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

 

 

বন্ধ রয়েছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল : গত ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। ৬ দিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী মধ্য আয়ের ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।  শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৬ দিন বন্ধ থাকায় এখন আর রেলওয়ে ষ্টেশনগুলোতে নেই তেমন ভিড়। যাত্রীরা এখন নিজেদের মত করে বিকল্প ভাবছেন। এদিকে গত ৪ ডিসেম্বর থেকে ট্রেন বন্ধ থাকার বিষয়টি যাত্রীকে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভাবলেও ষ্টেশন মাষ্টাররা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, রেললাইনে কাজের জন্য অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার কামরুল জানান, আমাদের এখানে এই কয়দিন হাজার হাজার যাত্রী ভিড় করেছেন। তাদের আমরা জানিয়েছি যে কয়দিন আগে থেকেই এ নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং এ তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তবুও অনেকে মানতে চাননি। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের অনেকে তীব্র ক্ষোভ জানান। ৪ ডিসেম্বর থেকে কোন ট্রেন ছেড়ে যায়নি বা আসেনি নারায়ণগঞ্জ। এটি কতদিন লাগতে পারে তার কোন নির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি। চাষাঢ়া রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার খাজা জানান, মানুষের ভোগান্তি তারা আমাদের কাছে জানাচ্ছেন যদিও আমরা আগেই তাদের জানিয়েছি বিষয়টি। এখন তারা চাইছেন দ্রুততম সময়ে ট্রেন চালু হোক। এটি বন্ধ তবে কবে চালু হবে তার কোন নির্দিষ্ট সময় এখনো জানানো হয়নি।

 

 

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বললে তারা জানান, আপাতত গণসমাবেশ ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তারা ভাবছেন না। তারা সর্ম্পূণ শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশ আয়োজন করতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এই কর্মসূচীর আয়োজন বলে তারা জানান। তবে এই সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া হলে কিংবা সরকার কোন আগ্রাসন মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা প্রতিহত করে সমাবেশকে সফল করার জন্য তাদেরকেও কৌশলী হতে হবে।

 

 

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানান, এই মুহুর্তে তারা তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগসহ দলীয় ও সাংগঠনিক আভ্যন্তরীণ কর্ককাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে তারা বিএনপির কার্যক্রমের দিকে নজর রাখছেন বলে জানান তারা। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই। তবে কোন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে কোন অবস্থায়ই বরদাস্ত করা হবে না বলে জানান তারা।

 

 

কেন্দ্রীয় নির্দেশে যেকোন কর্মসূচী বাস্তাবায়নে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুত আছেন বলেও জানান তারা। এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছেন নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে, ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে এবং ঢাকা শহরের প্রবেশের নারায়ণগঞ্জে সম্ভাব্য সকল পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জেলার বিভিন্ন জায়গায় ভাসমান টহল প্রদানে কাজ করছেন বেশ কয়েকটি বাহিনী।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর