বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

পবিস পূর্বাচল জোনালের গাফিলতিতে ভোগান্তিতে লাখো গ্রাহক

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৪  


নারায়ণগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর অধীনে পূর্বাচল জোনাল অফিসের গ্রাহকরা। ভয়াবহ পানি সংকটে চরম ভোগান্তির শিকার গ্রাহকরা এটাকে দূর্যোগের অযুহাত মনে করছেন। অভিযোগ করেছেন বারবার ফোন করেও কোন কর্মকর্তা, কর্মচারীর সাড়া পাননি তারা। তাদের কাজে থাকে গাফিলতি ও দায়সাড়াভাব। তবে বিলের বেলায় দেরী হলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।  

 

 

তাই স্থানীয়দের কাছে এ জোনালটি যেন এক অত্যাচারী জমিদার বাড়ি। লাখো গ্রাহকের ভোগান্তির অভিযোগ কর্ণপাতে গড়িমসি ভাব আর অতিরিক্ত খাজনা!  টাকা না পেলে সেবা পায় না কেহ। অভিযোগ রয়েছে এ জোনালের অধীনে শত শত বিদ্যুৎ খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বাতাসে খুঁটি হেলে পড়া,ভেঙ্গে পড়াসহ প্রতিদিন ঘটে নানা অঘটন।

 

 

আর গাছ,বাঁশ পড়ার অজুহাতে একবার লোডশেডিং হলে ২ ঘন্টা পর ফিরে আসে ১ ঘন্টার জন্যে। এভাবেই চলছে এখানকার বিদ্যুৎসেবা। শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের সংযোগ  মিটার স্থাপন,পুরনো তার পাল্টানো, বকেয়া ত্রুটি, প্রিপেইড সেবা, ড্রপ পড়ে গেলে পুনঃ লাগিয়ে দেয়ার কাজে কর্মচারী ও দালালদের সাথে দরদাম ছাড়া কোন সেবা মেলে না এখানে।

 


তথ্যমতে,  ঘুর্ণিঝড় রিমাল এসেছিলো ২৫ মে দিবাগত রাতে। এর আগে আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা ছিলো উপকূলীয় এলাকাসহ দেশব্যাপি। এর প্রভাবে রাজধানীসহ আশপাশের জেলার ২৬ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত চলে ঝড়োবৃষ্টি।  নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও একই অবস্থা। তবে ২৫ মে থেকেই অন্ধকার হয়ে যায় পুরো রূপগঞ্জ।  

 

 

একটানা ৭২ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন প্রায় ২ লাখ গ্রাহক। স্থানে স্থানে ভেঙে যায় খুঁটি। হেলে পড়ে শত শত খুঁটি। উপজেলার মধুখালী এলাকার বাসিন্দা আসাদ মিয়া বলেন, ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন ছিলাম। প্রথমদিন ঝড়ের কারনে মেনে নিয়েছি। কিন্তু ২য় দিন থেকে ফোন করেও তাদের কোন সাড়া পাইনি।

 


একই এলাকার কছুমদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামের একপাশে ৩ দিন ধরে আর আমাদের পাড়ায় ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ নাই। অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে কোন লাভ হয়নি। তারা ব্যস্ততা দেখায়। এদিকে আমাদের ফ্রিজে রাখা সব খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। খাবার পানি পর্যন্ত  নাই। আমরা কিনে পান করছি। এমন ভোগান্তির কারনে চাপ টিউবওয়েল বসানোর চিন্তা করছি।

 


এদিকে ভয়াবহ পানি সংকট দূর করতে কেউ কেউ জেনারেটর দিয়ে সাবমারসিবল পাম্প দিয়ে পানি তুলেছেন। তবে তা ব্যয়বহুল। সমস্যায় পড়েছেন বেশি দরিদ্ররাও। কারন রূপগঞ্জের কোথাও আর দেখা মেলেনা চাপ টিউবওয়েল। ফলে বিদ্যুৎ ছাড়া পুরো এলাকায় সুপেয় খাবার পানি সংকট হয়।    

 

 

তবে বৈষম্যের বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।  পূর্বাচলের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, রূপগঞ্জের ২ লাখের অধিক আবাসিক গ্রাহকের মাঝে শীতলক্ষ্যা  নদীর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার গ্রাহক। পূর্বপাড়ে মিল কারখানা থাকায় সেখানে লোডশেডিং কম।কিন্তু পশ্চিমপাড়ে সব সময় ভোগান্তি থাকে। একবার বিদ্যুৎ গেলে ফিরে আসে ২ ঘন্টা পর। যে গ্রাহকের ক্ষমতা বেশি সে গ্রাহকের কাজ আগে করে দেয়। বাকিদের মূল্যায়ন করেননা।

 


অভিযোগ রয়েছে পূর্বাচল জোনাল অফিসের কর্মকর্তাদের গাফিলতির। তাদের কাছে বিদ্যুৎ বিষয়ক অভিযোগ করলে আমলে নেয় না তারা। তবে দালাল মাধ্যমে টাকা দিলে সবসেবা মূহুর্তেই পায়। এখানে  দালাল সিন্ডিকেট ছাড়া কাজ  করা যায়না।  

 


দাউদপুরের আসলিপাড়ার বাসিন্দা রেলওয়ে কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় গত ৩ দিন আমার পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। একবার গেলে ২ ঘন্টা পর ফেরে। থাকে ৩০ মিনিট। রূপগঞ্জের বাসিন্দা মবিন মিয়া বলেন, তাদের অনিয়ম নিয়ে কথা বলার মত কেউ নাই, যেমন যা ইচ্ছা করে বেড়াচ্ছে। আমরা অতীষ্ট হয়ে গেছি।

 


মধুখালীর বাসিন্দা বাদল ভান্ডারী বলেন, আমার বাড়ির পাশে একটা খুঁটি ভেঙ্গে যায়।  পরে আগে যেই খুঁটি ছিল এর থেকে ছোট খুঁটি লাগিয়ে দিয়ে যায়।  এরপর থেকে একটু বাতাস এলেই আশপাশের গাছে বিদ্যুতের তারে আগুন জ্বলে। পূর্বাচল জোনাল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের  কাজের গাফিলতির কারণে আবহাওয়া একটু খারাপ হলেই বিদ্যুৎ থাকে না।  

 

 

স্থানীয় বাসিন্দা এসএন সোহান বলেন,  ৪ দিন পর বিদ্যুৎ পেলাম তাও শত মানুষ বিভিন্ন ভাবে ফোন দিয়ে বলতে বলতে আসে। এমন মনে হয় আমরা সাধারণ জনগণ টাকা ছাড়াই বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। তাদের সেবা মোটেও ভালো না। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন রূপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগীরা। এখানে টানা ৫৬ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।

 

 

এতে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও রোগীদের দূর্ভোগ ছিলো বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আইভী ফেরদৌস শোভা।  এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জের পূর্বাচল জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম বলেন, দূর্যোগের সময় সমস্যা থাকতেই পারে।সবাইকে একসনে সেবা দেয়া সম্ভব না। জনবল কম আছে। আর দালাল ছাড়া কাজ হয় না,টাকা লেনদেন হয়। এমন অভিযোগ থাকলে  আমরা ব্যবস্থা নেব। দালাল কারা তাদের তালিকা দিন, পুলিশে ধরিয়ে দেব।

 


এ সময় তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া,অভিযোগ থাকা স্বাভাবিক।  খুঁটি বিষয়ে তিনি বলেন, বহু খুঁটি পুরনো আছে। যা বাতাসে হেলে যায়।কোথাও পড়ে যায়। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে। এটা জানমালের নিরাপত্তার জন্যেই। তেমনি ঝড় এলে গাছ পড়ে দূর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর