সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

পরিকল্পনা ছাড়াই উচ্ছেদ, থানকাপড় ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেলগেইট এলাকায় অবস্থিত থান-কাপড়ের মার্কেটে, ২০১৯ সালের ১৭ আক্টোবর এবং ১ নভেম্বর পৃথক দুটি উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৫০০ টি থানের দোকান ভেঙে ফেলে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঐ সময় রেলওয়ের উদ্দেশ্য ছিলো এই উচ্ছেদের মাধ্যমে, ডুয়েল-গেজ রেললাইন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দখলমুক্ত করা।

 

তবে, সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক বৈঠকে, চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন স্থাপন হবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মাসুুদুর রউফ। কিন্তু থানকাপড়ের মার্কেটের প্রায় ৫০০ দোকান ভেঙে ফেলার পর, এই জায়গা দিয়ে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ্যের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উচ্ছেদ হওয়া দোকানের ব্যবসায়ীরা।

 

তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠা এমন একটি ব্যবসায়ীক এলাকায় উচ্ছেদের আগে রেলওয়ের একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিলো। কারণ ভালো ভাবে পরিকল্পনা করে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণকাজে এগিয়ে গেলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আগেই বুঝতে পারতো যে, জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত জটিলতায় তারা চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করতে পারবেনা। এতে আমাদের শতশত ব্যবসায়ীর দোকানও ভাঙা হতোনা। অথচ এখন ৫০০ ব্যবসায়ীর জীবন-জীবিকা নিয়ে খেলার পর রেলওয়ে ও ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছে, এই জায়গা দিয়ে ডুয়েলগেজ রেললাইন হবেনা।  

 


মোক্তার হোসেন নামে রেলওয়ের উচ্ছেদে ভেঙে যাওয়া এক দোকানের মালিক বলেন, এই মার্কেটে ২০১৮ সালে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দোকান কিনে আমি থানের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ১ বছর যেতে না যেতেই রেলওয়ে ডুয়েলগেজ রেললাইনের নাম করে আমার দোকানসহ প্রায় ৫০০ দোকান ভেঙে দেয়। এতে আমিসহ অনেক ব্যবসায়ী সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যাই। এখনো আমাদের অর্থনৈতীক অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু দেখেন; এখন শুনছি রেলওয়ে নাকি এই জায়গা দিয়ে ডুয়েলগেজ রেললাইন স্থাপন করবেনা। যদি তারা রেললাইন না-ই স্থাপন করে, তাহলে আমাদের দোকানগুলো কেন অবৈধ বলে ভেঙে দিলো?

 


রাজু আহম্মেদ নামে আরেক থান কাপরের ব্যবসায়ী বলেন, আমি দুবাই থেকে এসে ১০ লাখ টাকা দিয়ে এখানে একটি দোকান কিনে মাত্র থান কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছি। কিন্তু এর ঠিক ৬ মাস পরেই আমার দোকান ভেঙে ফেলে হয়। আমার মতে সেই উচ্ছেদটি ছিলো রেলওয়ের পরিকল্পনাহীন একটি উচ্ছেদ। কারণ পরিকল্পনা করে উচ্ছেদ করলে, এখন এই এলাকা দিয়ে ডুয়েলগেজ রেললাইন স্থাপনের কাজ থেমে যেতো-না!  

 


উল্লেখ্য, ১৯৯০’র সনের দিকে নারায়ণগঞ্জের ২নং রেলগেট থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশাল জায়গার মধ্যে গড়ে উঠেছিলো বাংলাদেশের অন্যতম বিশাল থান কাপড়ের মার্কেট। সূত্র বলছে, প্রথমে একটি জলাশয় বালুদিয়ে ভরাট করে এখানে ছোট পরিসরে থান কাপড়ের ব্যবসার সূচনা হলেও এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমির লিজ নিয়ে পরবর্তীতে সেই জায়গায় দোকান তৈরী করে পুরো দমে থান কাপড়ের ব্যবসায় নামে প্রায় ৫০০‘শ ব্যবসায়ী। আর ২০১৯ সাল নাগাদ, মার্কেটটিতে নিবন্ধিত ব্যবসায়ীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজারের বেশি এবং ব্যবসায়ী ও কর্মচারী নিয়ে সর্বমোট ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় এখানে। ত্রিশ বছরের পথচলায় ধীরে ধীরে স্থানীয় মার্কেট থেকে এটি পরিণত হয় আন্তর্জাতিক বাজারে।

 

কাতার, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশের ব্যবসায়ীরা কাপড় ক্রয় করতো এখান থেকে। এদিকে পুরনো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক নতুন ব্যবসায়ীরাও পা রেখেছিল এই থান কাপড়ের ব্যবসায়। ভেবেছিলো বদলে ফেলবে নিজেদের ও পরিবারের ভাগ্য। তবে সেই ভাগ্যেরই কি নির্মম পরিহাস! ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ডাবললেন করার জন্য গত ১৭ ই অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়; থান কাপড়ের এই পুরনো মার্কেটটি। এতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায় বহু ব্যবসায়ী, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান হারায় হাজারো কর্মচারী।
 

এই বিভাগের আরো খবর