শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

পরিবারের পুষ্টির যোগান দিচ্ছে আব্দুল জলিলের শখের ছাদবাগান

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১  

ব্যস্ত নগরীর বাসিন্দা আমরা। বিভিন্ন প্রয়োজনে গ্রাম ছেড়ে আমাদের নগরীতে বসবাস করতে হচ্ছে। ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে আমাদের এই নগর। ব্যস্ত নগর জীবনে সময়ের সাথে সাথে কমে আসতে শুরু করেছে খালি জায়গাও। জায়গা না থাকায় কমে যাচ্ছে গাছপালা। প্রকৃতির সাথে, সবুজের সাথে আমাদের সম্পর্ক দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাড়ছে নগরীর তাপমাত্রা।

 

অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি আমরা। সেই অনুধাবন থেকেই প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকতে অনেকেই তার বাড়ির ছাদে সৃষ্টি করছে এক টুকরো নির্মল উদ্যান। একটু সবুজের ছোঁয়া পেতে শহরবাসী এখন তাদের ছাদটি সাজাচ্ছেন বিভিন্ন ফুল,ফল,শাকসবজির গাছ দিয়ে। বিনিয়োগের কথা যেমন ভাবা হয় না ঠিক তেমনিভাবে প্রাপ্তি হিসেবেও রাখা হয় না শখের এই ছাদবাগানে। এমন তাগিদ থেকেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হাউজিং এলাকার “মাসকাট প্লাজায়” হাজী আব্দুল জলিল শুরু করেছিলেন ছাদকৃষি।



সে বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বেই কৃষিকে মনে প্রাণে লালন করতো। স্বপ্ন দেখেছিলেন বাড়ির ছাদে কৃষি এবং সবুজের অস্তিত্ব রাখবেন। তাইতো ইট-পাথরের এই শহরে বাস করেও কৃষিকে প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং প্রকৃতির ছোঁয়ায় জীবনের প্রশান্তি খুঁজতেই ২০১৪ সালে ছাদকৃষির এক বিশাল সম্ভার গড়ে তুলেন মো: হাজী আব্দুল জলিল। মাত্র ২২০০ বর্গফুটের আটতলার ছাদে সৃষ্টি করেছেন ফুল, ফলমূল, শাকসবজির অনন্য এক ক্ষেত্র। শাক সবজি, ফল-ফুল ও ঔষধি গাছের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে মো: হাজী আব্দুল জলিলের ছাদ কৃষির এই আয়োজন। কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৃষক পরিবারের সন্তান হবার সুবাদে তার কৃষির সাথে ঘনিষ্ঠতা ছোটবেলা থেকেই।



সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার এই ছাদবাগানে প্রায় একশর অধিক ফুল,ফল, শাকসবজি,ওষুধি গাছ রয়েছে। গাছে ৩০-৩৫টি পেয়ারা ঝুলে আছে। বিদেশী ড্রাগন ফল রয়েছে। আরও আছে বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, আতাফল, লেবু, বাউকুল, জামরল। ফল গাছের মধ্যে আরও রয়েছে আমলকি, জলপাই, বড়ই, আমড়া, জাম্বুরা, ত্বীন, কাউফল। এ ছাড়া ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, জবা, নাইটকুইন, আরও নানা প্রজাতির ফুল।


শাক-সবজির মধ্যে ধনেপাতা, থাইপাতা, বেগুন, পুঁই শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা দেখা গেল। ওষুধি গাছের মধ্যে রয়েছে ঘৃতকুমারী, কুমারী লতা, থানকুনি পাতা, পুদিনা পাতা। এছাড়া তুলসী গাছ, পাথরকুচিসহ আরও ছোট ছোট অনেক উদ্ভিদ রয়েছে।


মো: হাজী আব্দুল জলিলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে প্লাস্টিকের অনেকগুলো বড় বড় ড্রাম সংগ্রহ করে তিনি এগুলোকে কেটে দুই ভাগ করেন। তারপর ড্রিল মেশিন দিয়ে প্রতিটি ড্রামকে ছয়টি ছিদ্র করেন। এরপর ড্রামের নিচের অংশে ইটের খোয়া দিয়ে তার উপর মাটির সাথে জৈবসার, গরুর গোবর, মুরগির বিষ্ঠা মিশ্রিত করে আটতলা বাড়ির ছাদে সারিবদ্ধভাবে এসব গাছ লাগিয়েছেন। তার এই ছাদকৃষিতে আজ পর্যন্ত কোনো পোকামাকড়, মশা-মাছি সৃষ্টি হয়নি তাই তার কোনো কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়নি। এছাড়া তিনি তার বাড়ির ছাদে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি সর্বদা তার বাড়ির ছাদ পরিষ্কার রাখেন বলে জানান।  



গাছে নিয়মিত পানি দেওয়ার জন্য প্রতিটি গাছের গোড়ায় অত্যাধুনিক পাইপ সিস্টেম করেছেন তিনি। অর্থাৎ পানির কল একবার চালু করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবগুলো গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। এতে করে গাছে পানি দিতে সহজ হওয়ার পাশাপাশি সময়ও খুব কম প্রয়োজন হচ্ছে। গাছের প্রতি ঝোঁক ও শখের বসে এই ছাদবাগান গড়ে তোলেন মো: আব্দুল জলিল। গত সাত বছরে তার এই ছাদবাগান এখন সবুজের সমারহে পরিণত হয়েছে।



তিনি আরও জানান, এই ছাদ কৃষি করার পর তার এখন আর শাক-সবজি, ফলমূল তেমন কিনতে হয়না। তিনি বর্তমানে তেমন কোনো কাজ করেন না, তাই তার সম্পূর্ণ সময় তার এই ছাদকৃষিতেই ব্যয় করেন। এই কাজে তার পরিবার সর্বদা উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি তাকে অনেক সহযোগিতা করে থাকেন। তার এই ছাদবাগান থেকে তিনি প্রতিবছর আনুমানিক প্রায় পাঁচশ কেজি সবজি পেয়ে থাকেন। এছাড়া গতবছর তিনি প্রায় শতাধিক লাউ সংগ্রহ করেছেন তার এই বাগান থেকে।



তার এই ছাদ কৃষির উদ্যোগ অন্যান্যদের ছাদ কৃষি করার ক্ষেত্রে রোল মডেল এর ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর বাড়িতে আসা আগ্রহী আত্মীয়- স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ছাদ কৃষি করতে আহবান জানান। তার এই ছাদবাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে তার চাচাতো ভাই নিজ এলাকায় এমন ছাদ বাগান গড়ে তুলেছেন। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো নিজ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় বাড়ি করে আরও বড় পরিসরে অত্যাধুনিক ড্রেন সিস্টেম করে ছাদকৃষি গড়ে তোলা।  



বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শহরের সব ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান করা হয়, তাহলে তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ঢাকা শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, যা এই নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী।



নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, যারা ছাদ কৃষি করছে আমরা তাদেরকে গাছ লাগানো বা গাছে সার দেওয়ার বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে আর্থিক ভাবে কোনো সহযোগিতা করা হয় না কারণ আমাদের এই ধরনের কোনো প্রকল্প নেই।
 

এই বিভাগের আরো খবর