শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

পানযোগ্য পানি সংকটে ফুঁসছে নগরবাসী

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২৪  

 
# দীর্ঘদিন যাবত সংকট থাকলেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ
# হকার ও যানজট সমস্যা থেকেও গুরুতর সমস্যা বলে দাবি
# লাইনের পানিতে সাবান জলের মতো ফেনা উঠছে বলে ক্ষোভ

বেঁচে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদান হলো পানি। যে অঞ্চলে কোন পানির যোগান নেই সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কল্পনাও করা যায় না। আর সে জন্যইতো কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, তা জানার জন্য সেখানে পানির কোন অস্তিত্ব আছে কি না; তা জরিপ করে দেখা হয়। মানুষের দৈনন্দিন কাজের জন্য পানির প্রয়োজনতো আছেই, তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন পানীয় পানি বা পানযোগ্য পানি। যার কোন বিকল্প পদ্ধতি করারও সাধ্য কারও নেই।

 

 

তাই যত সমস্যাই থাকুক না কেন, কোন না কোন উপায়ে ন্যুনতম পান করার জন্য পয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা করতেই হবে। এটা নিয়ে কোন হেলাফেরা করার সুযোগ নেই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এলাকায় পানি নিয়ে এমন হেলাফেলা করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ আসছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে। বছরের পর বছর পানির সংকট থাকলেও তার স্থায়ী সমাধানে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

 

 

বিষয়টি বেশ কয়েক বছর যাবতই নগরবাসীকে ভোগাচ্ছে বলে সিটিবাসীর দাবি। তাই বর্তমানে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যানজটমুক্ত শহর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জুড়ে যেরকম ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনার মধ্যেও চাপা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না নাসিক এর শহর ও বন্দর এলাকার মানুষের পানির আর্তনাদ, সুপেয় ও স্বাস্থ্যসম্মত পানির জন্য হাহাকার।
 

 


এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত পানির দাবিতে খালি কলস নিয়ে মিছিল, মানবন্ধন, রাস্তা-ঘাট অবরোধ, পাম্প এলাকা ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে বিভিন্ন মহলের কাছে ধর্ণা দিয়েছে স্থানীয় জনগণ। প্রতিবারই সময় চাওয়া, আশ্বাস দেওয়া ও কোন প্রকার জরিপ বা পরিকল্পনা ছাড়া ছোট ছোট পাম্প বসিয়ে অস্থায়ীভাবে ক্ষুদ্র চেষ্টা করার মাধ্যমে পানির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন সিটিবাসী।

 

 

তবে ওয়াসাতে থাকাকালে পানীয় পানির সমস্যা থাকলেও ওয়াসার পানির একক দায়িত্বে (শুধু পানি সরবরাহের দায়িত্বে) থাকায় তাদের কাছে আবদার বা অভিযোগ করে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে নাসিকের অনেক বাসিন্দাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এখন তারচেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি। এখানকার পানির লাইনে বছরের বেশিরভাগ সময়ই পানি সরবরাহ থাকে না বলে জানান তারা।

 

 

স্থানীয়রা আরও জানান, সম্প্রতি পানি সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও পানির গুণগতমান খুবই খারাপ। পান করাতো দূরের কথা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া একটি ভিডিওতেও দেখা যায় নাসিক ২৪ নং ওয়ার্ডের একটি বাসার পানি সরবরাহ লাইনের পানি সংরক্ষণ করার সময় সেখান থেকে বালতিতে সাবানের মতো ফেনা উঠে যাচ্ছে।

 

 

যে পানি ব্যবহার করার কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। স্থানীয়দের অভিযোগ ওয়াসা থেকে নাসিক দায়িত্ব নেওয়ার পর এই সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। ওয়াসার কাজই ছিল শুধু পানি নিয়ে, কিন্তু নাসিকের বিভিন্ন কাজের একটি অংশ হলো পানি সরবরাহ করা। এর মধ্যেই সিটি কর্পোরেশন পানির সমস্যার সমাধান করতে না পেরে এর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন বলেও একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি স্থানীয়দের অনেকেই পজেটিভ হিসেবেই দেখেছেন বলে জানা যায়।
 

 


নাসিক ২৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বপন মিয়া জানান, বর্তমানে এলাকায় পুকুর না থাকায় এবং নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ায় পানি পান করা থেকে শুরু করে গোসল করা পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রের পানির ব্যবহারের জন্যই নির্ভর করতে হয় ওয়াসা বা সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহ করা পানির উপর। বছর, মাস বা দিন কেন, পানি ছাড়া একটি মিনিটও কল্পনা করা যায় না।

 

 

অথচ আমাদের সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। বছরের পর বছর জুড়ে এই একই অবস্থা থাকলেও বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে কর্তৃপক্ষের নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। এখানকার পানি সরবরাহের জন্য যে পাম্পগুলো বসানো হয়েছে তার বেশ কয়েকটিই প্রায় বছর জুড়ে অকেজো হয়ে আছে, সেগুলো মেরামতে কোন উদ্যোগ নাই। কর্তৃপক্ষের যত সমস্যাই থাকুক, পানি ছাড়া কি আর জীবন চলে।
 

 


নাসিক ২১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের এই এলাকায় আগেও কম-বেশি পানির সমস্যা ছিল। কিন্তু প্রায় পাঁচ-ছয় বছর যাবত অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন যখন দায়িত্ব নেয় তারপর থেকে সেই সমস্যা যেন আরও বেড়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগেতো তবু সমস্যার কথা ওয়াসাকে জানানো গেছে। মানুষজন সরাসরি ওয়াসা অফিসে গিয়ে অভিযোগ করাসহ তাদের সাথে কথা বলে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ পেয়েছে।

 

 

কিন্তু এখন সেগুলোও করা সম্ভব হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশন সরাসরি দলীয় নেতাদের নেতৃত্বে চলে যাওয়ায় এবং এখানকার বিষয়গুলো রাজনৈতিক হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ আমালাদের কাছ থেকে নেতাদের হাতে চলে যাওয়ার পর বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে দাড়ায় বলে জানান তিনি।
 

 


বন্দরের বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানকার মদনগঞ্জ, ফরাজিকান্দা, দড়ি সোনাকান্দা, ঋষিপাড়া, বেপারী পাড়া, কোটপাড়া, বন্দর শাহী মসজিদ, বন্দর বাজার আমীন রুপালী, রাজবাড়ী, খানবাড়ির চিতাশাল মোড়, তালতলা, ইসম্পাহানি, কদম রসুল কলেজ, কবিলার মোড়, কামাল উদ্দিনের মোড়, নোয়াদ্দা, কাইতাখালী, আমিরাবাদ, বক্তারকান্দি, দেউলী চৌরাপাড়া, সোমবাড়িয়া বাজার, দক্ষিণ লক্ষণখোলা, উত্তর লক্ষণখোলা, দাসেরগাঁও, পাতাকাটা এলাকার মানুষের পানির প্রধান উৎস ছিল শীতলক্ষ্যা নদী।

 

 

কিন্তু এখন নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় নাসিকের সরবরাহ করা পানির বিকল্প নেই বলে জানান তারা। নদীর পশ্চিম পারের সিটি এলাকারও প্রায় একই চিত্র। নাসিক ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলেও পানির প্রায় একই চিত্র বলে জানা গেছে।

 

 

সিদ্ধিরগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকায় খাবার পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানা যায়। বাধ্য হয়েই এখানকার অনেক মানুষ ময়লা পানি গিলছে বলে জানান তারা। ফলে  বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সংকট চলে আসছে।   এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর