রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

পানিতে ডুবলেই ফতুল্লার মানুষের কষ্টের কথা মনে হয়!

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৪  

 

 

# আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত: শামীম ওসমান

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শামীম ওসমান। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে গঠিত তার নির্বাচনী আসন। এর আগেও ১৯৯৬ সনে এই আসনে শামীম ওসমান প্রথম বারের মত এমপি নির্বাচিত হনে। চার বার সংদ সদস্য হয়েও তিনি ফতুল্লার জলাবদ্ধতা নিরসনে তেমন কোন উল্লেখ্য জনক উদ্যোগ নেন নাই। বার বার ডিএনডি প্রজেক্টকে আলোচনায় নিয়ে আসনে। 

 

অথচ দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকেও ফতুল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে কোন উন্নত করতে পারে নাই। তাছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে ফতুল্লাবাসি প্রতি বছরের বৃষ্টির মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকেন। এখানকার জনপ্রতিনিধির ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও মানুষের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলে না। কবে নাগাত তাদের মুক্তি মিলবে তাও জানেন না স্থানীয়রা। কিন্তু নির্বাচন আসলেই ফতুল্লাবাসি শুধু আশ^াস পেয়ে যান। অথচ এখানকার জনপ্রতিনিধি চাইলেই স্থায়ী ভাবে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে তার সমধান করতে পারেন। কিন্তু কেন তা হচ্ছে না তার উত্তর আর মিলে না।  

 

এদিকে বর্ষা না আসতেই ঘুর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ন ও ঘণবসতিপূর্ন জনপদ ফতুল্লা। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ড্রেনগুলোও তলিয়ে গেছে পানির নিচে। ডিএনডি এলাকাসহ ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও দোকানপাটেও ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। এমনকি মসজিদ মাদরাসাও বাদ পড়ে নাই।  এতে করে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন ফতুল্লার কয়েক লক্ষ মানুষ।গত দু বছর যাবত স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান পানি পাড়িয়ে ফতুল্লার জলাবদ্ধতা পরিদর্শন করেন। গতকালও ফতুল্লার গিয়ে সেই আগের মত কতগুলো আশার বানিয়ে শুনিয়ে আসলেন। কিন্তু পানি সরানোর তেমন কোন স্থাীয় ভাবে ব্যবস্থা নেই। তবে খনিকের জন্য পানির পাম্প বসিয়ে তা ব্যবস্থা করেন। তাতেও পানি সরতে চার দিন পার হয়ে যায়। এতে করে মানুষের ক্ষতি অপুরনীয়।


জানা যায়, প্রতিবছরই বর্ষার আগমনে তলিয়ে যায় ফতুল্লার শিল্পকারখানা অধ্যুষিত অঞ্চল। এবার বর্ষার আগেই ঘুর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সেই ধারাবাহিকতা থেকেই গেল।
ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় খালগুলো উদ্ধার ও খনন করা হলেও অভ্যন্তরীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হওয়ায় ড্রেনগুলোতে পানি নামছে না। এতে খাল পর্যন্ত পানি যাচ্ছে না। ফলে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও ফতুল্লা সহ আশপাশের অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রেহায় পাচ্ছে না।


সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে গত রোববার দিবাগত গভীর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। যা বিরামহীন ভাবে সোমবার রাত পর্যন্ত চলা বৃষ্টিতে ফতুল্লার লালপুর, পৌষার পুকুরপাড়, ইসদাইর, গাবতলা, টাগারপাড়, দাপা ইদ্রাকপুর, কুতুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিন সেহাচর, পিলকুনী, নন্দলালপুর সহ প্রায় প্রতিটি জনপদ, কাশিপুর ইউনিয়নের গোয়ালবন্দ, হাট খোলা সহ বিভিন্ন এলাকা, এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাসদাইর, আমতলা, সহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। 

 

কোথায় হাঁটু আবার কোথায় জমেছে কোমড় পানি। কোথাও কোথাও বাড়ির নিচতলার রান্না ঘর ও সৌচাগার পানিতে তলিয়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও। এমনকি কর্মী জীবিদেরকে কর্মস্থলে বিজে যেতে হচ্ছে। এতে করে অনেকে পানি বাহিত রোগ সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।


স্থানীয়রা জানান, এসব এলাকার অভ্যান্তরিন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।আবার কোথাও কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোন উন্নত করা হয় নাই। তাছাড়া ড্রেনগুলো বালু, মাটি, পলিথিন ও অপচনশীল বর্জ্যে আটকে গেছে। একই ভাবে গত বছর খনন করা অভ্যান্তরিন খালগুলোও অনেকটা ভরাট হয়ে আছে গৃহস্থালির আবর্জনায়। এতে বৃষ্টির পানি খাল বা ড্রেন হয়ে নামতে পারছে না। ফলে প্রতিবছরের মত জলাবদ্ধতা থাকছেই। কিন্তু এবার বর্ষা আসার আগেও ফতুল্লা বাসি পানিতে ডুবে রয়েছেন।


বছর দুই আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এলজিইডির ১৫০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন ফান্ডের উপর ভরসা করে বলেছিলেন, ওই অর্থ দ্বারা ফতুল্লার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। এর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। তবে আজও এর বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজে হাত দেয়নি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।


গতকাল ফতুল্লা জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে এমপি শামীম ওসমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বর্ষণে নিজ সংসদীয় এলাকা ফতুল্লার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। একইসাথে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শামীম ওসমান বলেন, ‘ফতুল্লার লালপুর এলাকা ফতুল্লার হার্ট। এখানে এলাকার মানুষের কিছু ব্যর্থতা আছে। 

 

সে ব্যর্থতা হচ্ছে রাস্তা উচু, জায়গাটা নিচু। সে কারণে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ এখানে পানিবন্দি হয়ে আছেন। গতবার আমরা জেলা পরিষদের সহায়তায় তিনটি পাম্প বসিয়েছিলাম। প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছিল। এখানে একটা টান্সফর্মার ছিল। টান্সফর্মার খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কারণে এবার প্রচুর পানি জমে গেছে। বাড়ি-ঘর তো রয়েছে বাথরুমের ময়লা মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে প্রবেশ করেছে। এজন্য আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত।
 

এই বিভাগের আরো খবর