সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

পাসপোর্ট অফিসের পেটে দালালদের রমরমা ব্যবসা

ইফতি মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২২  

 

# দালালদের বিশেষ চিহ্ন দেখে ফাইল অনুমোদন করছে কর্মকর্তারা

# দালালদের হস্তক্ষেপেই সম্পন্ন হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন

 

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সুকৌশলে চলছে দালালী ব্যবসা। নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বরাবরই দালালমুক্ত পাসপোর্ট অফিস দাবি করে আসলেও দালালরা ভোল পাল্টে দালালী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশের মার্কেটগুলোকে অফিসিয়ালি দালালির আস্তানা হিসেবে পরিচিত করেছে দালালরা। তাদের এই দালালী ব্যবসার মূলহোতা ও হর্তাকর্তা হল পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কমকর্তা।

 

অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পাশের মার্কেটগুলোতে চলছে পাসপোর্ট দালালীর রমরমা ব্যবসা। মার্কেটগুলো হল তৃষা আদর্শ কর্পোরেশন, সামাদ বানু কমপ্লেক্স, এস এম সুপার মার্কেট, রহিমা কমপ্লেক্স এই মার্কেটগুলোর কম্পিউটারের দোকানে পাসপোর্ট অনলাইন আবেদনের নামে চলছে পাসপোর্ট দালালীর ব্যবসা। দালালদের মাধ্যম ছাড়া সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে কাগজপত্র নিয়ে গেলে অনেক সময় দেখা যায় গেইট থেকেই আনসার সদস্যরা বলেন আপনার কাগজে এই সিল ওই সিল নাই এটা বাদ পড়ছে ওইটা বাদ পড়ছে এগুলো ঠিক করে নিয়ে আসেন। 

 

আর দালালদের দ্বারা হলে তাদের দেয়া বিশেষ চিহ্ন দেখেই আনসার সদস্যরা ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় এবং অফিসের কর্মকর্তারা এই বিশেষ চিহ্ন দেখে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে ফেলেন। এখানইে দালালদের কারবার শেষ নয় পাসপোর্ট  সংক্রান্ত যে সমস্ত কাগজপত্র যেমন, আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধনের বিভিন্ন ধরণের ভুল তারাই সংশোধন করবে বলে পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।

 

এমনও তথ্য পাওয়া যায় জন্ম নিবন্ধন তৈরী করার কাজও করে থাকে তারা। তাদের কাছে জন্মনিবন্ধন সনদ সত্যায়িত করার সিল সবই আছে এই দালালের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদারকি করলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল। কিভাবে সম্ভব একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সিল মোহর এবং স্বাক্ষর ছাড়াই তারা জন্মনিবন্ধন তৈরী করে পাসপোর্ট বানায়। 


আরও দেখা যায়, সন্ধার পরও চলছে পাসপোর্ট বিতরণের কার্যক্রম সেখানে দেখা যায় দীর্ঘলাইন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে নিয়োজিত আনসার সদস্যদেরও দেখা যায়নি। এদিকে দালালরা পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন লোকজনের সাথে যোগসাজশ করছে কিছু টাকা দিলে আগে ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দিবে। কে আগে ভিতরে প্রবেশ করবে তা নিয়ে একটু পরপরই চলছে চরম হট্টগোল সৃষ্টি হচ্ছে সাইনবোর্ডে অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।

 

অভিযোগ রয়েছে ই-পাসপোর্ট এর জন্য সরকার নির্ধারিত ফি নির্ধারণ করা রয়েছে কিন্তু সেই ফি’র চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা নিয়ে দালালরা কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগীতায় এই অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা এই প্রতিবেদেকের নিকট অভিযোগ করেন। 

 

রাশেদ নামে এক দালালের সাথে পাসপোর্ট তৈরী সংক্রান্ত বিষয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট বানানোর ফি জানতে চাইলে সে জানায় এই পাসপোর্টের ফি পরবে ১১ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট বানানোর  সরকার নির্ধারিত ফি হলো ৮ হাজার ৫০ টাকা। দালাল  রাশেদকে অতিরিক্ত ফি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দায়িত্ব নিয়ে সে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল কাজ সম্পূর্ণ করে দিবে।’

 

সানজিদ নামে আরেক দালালের সাথে কথা হয় পাসপোর্ট বানানো সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় ১৮ বছর বয়স জন্ম নিবন্ধন নাই এখন কি করা যায় সে বলে জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে দেয়া যাবে ২০০০ টাকা পড়বে। তারপর ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট বানানোর ফি কত পড়বে জিজ্ঞসা করলে সে বলে, ‘১২ হাজার  টাকা পড়বে; পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আমি বুঝবো অতিরিক্ত ফি বলা হলে সে জানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে খরচ আছে আমার এই জন্য এত টাকা ফি।’

 

সানজিদ নামে আরেক দালালের সাথে কথা হয় পাসপোর্ট বানানো সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় ১৮ বছর বয়স জন্ম নিবন্ধন নাই এখন কি করা যায় সে বলে জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে দেয়া যাবে ২০০০ টাকা পড়বে। তারপর ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট বানানোর ফি কত পড়বে জিজ্ঞসা করলে সে বলে, ‘১২ হাজার  টাকা পড়বে; পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আমি বুঝবো অতিরিক্ত ফি বলা হলে সে জানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে খরচ আছে আমার এই জন্য এত টাকা ফি।’


ভুক্তভোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভদ্রমহিলা জানান, ‘আমার কাগজপত্রে একটু ভুল থাকার কারণে এই ঠিক করার দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে ধাপে ধাপে অনেক টাকা নিয়ে নিয়েছে। এখন আমার পাসপোর্ট সঠিক সময়ে ডেলিভেরি দিতে পারছে না। বিভিন্ন ধরণের তালবাহানা শুরু হয়ে গেছে;  প্রতিদিনই আসলে বলে আজকে আসেন, কালকে আসেন।’


এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী-পরিচালক শরিফুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কলটি রিসিভ করেনি। এন.এইচ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর