সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১

পীরকে অনুসরণ করছেন কায়সার হাসনাত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৪  

 

 

# নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার মিশনে নেমেছেন তারা
# বন্দরে শামীম ওসমান প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হয়েছে

 

 

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের ঐতিহ্য রয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিশাল প্রভাব রয়েছে। এমনকি স্থানীয় নির্বাচন কিংবা আওয়ামী লীগের কমিটিতে প্রভাব রয়েছে তার। রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। তার অনুসারীরা এমপি শামীম ওসমানের নির্দেশনা পীরের মত মানেন। যেই ভাবে একজন পীরের নির্দেশনা তার মুরীদরা পালন করেন।

 

দলের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে গত জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের নির্বাচিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি কায়সার হাসনাত এবার শামীম ওসমান পীরের মত করে মেনেছে। তাছাড় এক সময় শহরে বসে পুরো জেলাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সাংসদ শামীম ওসমান। যদিও এখন আর সেই প্রভাব নেই তার। বর্তমানে তিনি জেলার ৩টি আসনে প্রভাব ধরে রেখেছেন। কিন্তু তার মাঝে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাতছানি হয়ে গেলে সেখানেও সাংসদ শামীম ওসমানের প্রভাব শেষ হয়ে যেতে পারে। আর এই শঙ্কায় নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি কায়সার হাসনাত শামীম ওসমানের মত অনুসরন করে তার উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে।

 

মজার বিষয় হলো, কায়সারকে একাজে সহযোগিতার জন্য শামীমের ওসমানের নির্দেশনায় সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে কায়সারের প্রতিদ্বন্দ্বি সাবেক সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকাও হাত মিলিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এ থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় উপজেলা নির্বাচনের পদটি শামীম ওসমান, কায়সার হাসনাত, লিয়াকত হোসেন খোকা কেন নিজেদের বলয়ে রাখতে চান। শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকায় উপজেলা নির্বাচনের খবর নেই, তার সংসদীয় এলাকার ফতুল্লা দিনরাত পানিতে ভাসে, শত সমস্যায় নাজেহাল, আওয়ামী লীগের সবচাইতে উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকা।

 

অথচ শামীম ওসমান কিনা সোনারগাঁয়ে মাতবরি করতে আসেন। অনেকে বলেন, সোনারগাঁয়ে শত শত ব্যবসায়িক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, এখানকার মেম্বার চেয়ারম্যানরা বালুমহাল, ঝুট সন্ত্রাস করে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সোনারগাঁ এখন সোনার ডিম পাড়া রাসহাঁস। উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা মেম্বার চেয়ারম্যানের চাইতেও অনেক বেশি। তার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার কাজ হবে।

 

শামীম ওসমান, কায়সার হাসনাত, লিয়াকত হোসেন খোকা তিনজনেরই সোনারগাঁয়ে নানা ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে। নানা কর্মকাণ্ডে তাদের পকেট ভারি হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের হাতের নাগালের বাইরে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন বিধায়ই কায়সার তার সবসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বি লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে হাত মিলিয়েছেন পীর শামীম ওসমানের কথায়। তবে আদতে এর ফল উল্টো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলছে তৃণমূল।


 
এদিকে নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের হুমকি ধমকি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়া মার্কা নিয়ে সকল হুমকি ধমকিকে তোয়াক্কা না করে  ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে মাহফুজুর রহমান কালাম।

 

তার প্রতিদ্বন্দ্বি আনারসের প্রতীকের প্রার্থী বাবুল ওমর বাবু স্থানীয় এমপি কায়সার হাসনাতের মনোনীত প্রার্থী বলে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তার পক্ষে চেয়ারম্যানরাও মাঠে নেমে প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সোনারগাঁয়ের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরের বিরুদ্ধে চাদাঁবাজির অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় এমপি থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান মেম্বারদের টাকার বিনিময়ে তার বলয়ে ভিড়াচ্ছেন।

 

কেউ আসতে নাই চাইলে তাকে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। তাই সোনারাগাঁ জুড়ে আলোচনা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনকে মার্সেল ম্যান বাহিনী দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরী করে সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত মিশনে নেমেছে সোনারগায়ের বড় একটি প্রভাবশালী অংশ। তার নানা ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে।



অপরদিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্বান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাবুল ওমর বাবুকে সমর্থন দিয়েছে এমপি কায়সার হাসনাত। তার বিনিময়ে তিনি বিশার অংকের টাকা নিয়েছে বলে আলোচনা হচ্ছে। এমনকি সোনারগাঁ উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে বাবু ওমরের পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। যার সত্যতা ইতোমধ্যে বারদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন বাবুলের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। তা নিয়ে সোনারাগাঁ জুড়ে সমালোচনা হচ্ছে।


 
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী সমর্থন নিয়ে বারদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন মো. বাবুল ওরফে চুম্মা বাবুল বলেন, আমরা মেম্বার চেয়ারম্যানরা সকলে মিলে এমপি নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ্য ভাবে কাজ করে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে আসছি। এবার স্থানীয় কিংবা উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে কোন মার্কা দেয় নাই আওয়ামী লীগ।

 

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত যাকে সমর্থন করছে, আমরা মনে করে নিব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে সমর্থন করছে। কেননা যেহেতু উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মার্কা নেই। দলের সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হলেও আশা করি আমরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ দলের অঙ্গ সংগঠন মিলে কায়সার হাসনাতের সমর্থিত প্রার্থীকে জয়ী করবো। তার এই বক্তব্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনলাইনে বিডিও চলমান রয়েছে।  তাছাড়া সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে লায়ন বাবুল আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবু ওমরের পক্ষে প্রচারণা করছেন।

 

এর আগে এই বাবুল চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারদি ইউনিয়নে প্রবেশ করলে তার অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। আর এজন্য তিনি দল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত হন। তার বক্তব্যে স্পষ্ট ভাবে বুঝা যায় সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে অর্থের বিনিময়ে তারা একটি পক্ষের জন্য মার্সেল বাহিনী নিয়ে মাঠে নেমেছে। তবে সোনারগাঁয়ের ভোটাররা তাদের বিপক্ষে রায় দিবে বলে জানান একাধিক ভোটার।



দলীয় সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী রশিদের পক্ষে যে ভাবে সাংসদ শামীম ওসমান প্রভাব বিস্তার করেছে একই ভাবে পীরকে অনুসরন করে কায়সার হাসনাত সোনারগাঁয়ে বাবুল ওমর বাবুর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। তার সহযোগি হিসেবে সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে পাশে নিয়েছেন। তাদের মার্সেল বাহিনীর সৈনিক হিসেবে নিয়েছেন উপজেলার চেয়ারম্যানদের।

 

অনেক মেম্বারকে জোর করে তাদের বলয়ে যেতে বাধ্য করছেন। আনারস প্রতীকের বিপক্ষের প্রার্থীরা চান সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক ইতোমধ্যে বলেছেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কেউ কোন ম্যাসেল বাহিনী নিয়ে প্রভাব বিস্তার করলে তার প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। এমনকি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


একই ভাবে নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ। কোন ভাবেই এই নির্বাচনকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে দেয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন যে ভাবে বলেছে সেভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের দিন পুলিশ র‌্যাব, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবে। অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা যা করনীয় আমরা তাই করবো। ভোটাররা যেন নির্বিগ্ন ভাবে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে সেই পরিবেশ দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।



রাজনৈতিক বোদ্ধমহল বলছে সদর বন্দর উপজেলা নির্বাচনে যেভাবে সাংসদ শামীম প্রভাব বিস্তার করছে একই ভাবে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে কায়সার হাসনাত প্রভাব বিস্তার করে তার পক্ষের লোককে নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন। তাছাড়া সোনারগাঁ বাসি বরছে স্থানীয় এমপি কি করে একজন চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত প্রার্থীকে কি করে সমর্থন দেন। তার পক্ষে সমর্থন দিয়ে চেয়ারম্যানদের লাগামহীন বক্তব্যে এমপি কায়সার হাসনাতও বিতর্কিত হচ্ছেন।

 

সেই সাথে তার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে যারাই মাঠে নামছেন তারাই জনপ্রিয়তার তলানীতে পড়তে যাচ্ছেন। সেই সাথে ভোটারদের তারা কালপিট হতে যাচ্ছেন। কেননা আগামী নির্বাচনে ভোটাররা এই কালপিটদের প্রত্যাখান করবে। তাই সোনারগাঁবাসির দাবী উপেজলা নির্বাচন যেন অবাধ্য সুষ্ঠ নিরপেক্ষ হয়। আর মার্সেল বাহিনী প্রভাব বিস্তার করলে তাদেরকে মেনে নিবে না ভোটাররা।

এই বিভাগের আরো খবর