বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৪ ১৪৩১

প্রেসক্রিপশনে সভাপতি হয়েই দোসর হাতেমের স্ট্যান্টবাজি শুরু

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪  

ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেম কুখ্যাত ওসমান পরিবারের কতখানি আস্থাভাজন ছিলেন তা বিকেএমইএতে ‘নির্বাহী সভাপতি’ পদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ২০১০ সাল থেকে বিনা নির্বাচনে বিকেএমইএর সভাপতি পদ দখলে রাখেন সেলিম ওসমান। ২০২৪ সালের আগষ্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত ওসমান পরিবার ও সেলিম ওসমানের লেজুরবৃত্তিতে ব্যস্ত ছিলেন ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেম। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে নিয়ম না থাকলেও লেজুরবৃত্তির কারণে মোহাম্মদ হাতেমকে নির্বাহী সভাপতি পদ সৃষ্টি করে তাতে বসিয়েছেন সেলিম ওসমান। এখানেই শেষ নয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর সেলিম ওসমান অসুস্থতার কথা বলে ২৪ আগস্ট বিকেএমইএ বরাবর যে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন সেখানে স্পষ্টভাবে তাদের দোসর মোহাম্মদ হাতেমকে সভাপতি করার নির্দেশ দেন। ওসমানদের দোসর হাতেম এরপর থেকেই সেলিম ওসমান ও ওসমান পরিবারের নীলনকশা বাস্তবায়নে মাঠে নামেন। গত ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ওসমানদের হয়ে বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, জমির দালালি, ভূমিদস্যুতা, বিচারের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নাজেহাল, মালামাল বিক্রি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা ছুঁতোয় ওসমানদের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি হেন অপকর্ম নেই মোহাম্মদ হাতেম করেননি। ৫ আগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর হাসিনা সরকারের বিদায়ের সাথে সাথে ওসমানরা বিদায় হয়। সেলিম ওসমানের পদত্যাগপত্রের সম্পূর্ণ কথা গোপন রেখে কৌশলে ওসমানদের দোসর হাতেম বিকেএমইএর সভাপতির পদ দখলে নেন। এরপর থেকেই স্ট্যান্টবাজিতে নামেন তিনি। 

ওসমানদের আরেক দোসর ও ব্যবসায়ীদের কাছে কুখ্যাত চাঁদাবাজ শামীম ওসমানের বন্ধু ও সেলিম ওসমানের সাবেক ম্যানেজার খালেদ হায়দার খান কাজলের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়। এরপর সুপ্রসিদ্ধ নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজের সভাপতির পদে ব্যবসায়ীরা সজ্জন ব্যবসায়ী এবং বিশিষ্টজন হিসেবে পরিচিত মডেল গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামানকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন। এতে মাথা খারাপ হয়ে যায় মোহাম্মদ হাতেমের। একদিকে ওসমানদের দোসর খালেদ হায়দার কাজলের বিদায় আর বিভিন্ন সংগঠনের ওসমানদের কুকীর্তি ও জিম্মিদশার কথা ফাঁস হয়ে যাবে এমন আতঙ্ক পেয়ে বসে হাতেম ও ওসমানদের। অবস্থা এমন যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া পড়শির ঘুম নেই। ২৫ আগস্ট সেলিম ওসমানের ওসমান পদত্যাগের পদ বিকেএমইএর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কোন সংবাদসম্মেলন কিংবা ডাকঢোল পিটাননি চতুর হাতেম। ওসমানদের প্রেআত্মা হয়ে হাতেম তখন সজ্জন ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামানকে বিতর্কিত করার মিশনে নামেন। চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন ৭ সেপ্টেম্বর আপদকালীন সময়ে মাসুদুজ্জামানের সংবাদ সম্মেলনে ওসমান প্রেআত্মাদের নিয়ে হাজির ওসমান দোসর ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম।

 

 সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামন সীমিত কথা বললেও ওসমানদের হয়ে দালালীর অভ্যাসে বাকপটু হাতেম চেম্বার অব কমার্সের গোটা সংবাদ সম্মেলনে স্ট্যান্টবাজি করেন। সংবাদ সম্মেলনশুরুর আগেই ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম ৫আগস্টের পর চাঁদাবাজির হয়েছে বলে দাবি করেন। তাঁর কথার প্রেক্ষিতেই তখন মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘চেম্বার অব কমার্সে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে, ৩ লাখ মিটিয়েছি, ৭ লাখ টাকার জন্য চাপ আছে। বিকেএমইএ উনারাও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছে বাধ্য হয়ে। আমি বলতে চাই, চাঁদা এক পয়সাও দিবোনা, বরং যেই চাঁদা দিয়েছি সেটি ফিরত চাই। আমরা কখনো কখনো পরিস্থিতির শিকার। যে কোন পরিবর্তন হলে ব্যবসায়ীদের উপর দিয়েই ঝড়ঝাপ্টা যায়। গত কয়েকদিন ধরে কিভাবে চাঁদাবাজি চলছে, হুমকি ধামকি দিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।’


সজ্জন মাসুদুজ্জামানের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই ওসমানদের হয়ে স্ট্যান্টবাজি শুরু করেন। পরবর্তীতে ইউটার্ন দেন মোহাম্মদ হাতেম। বিকেএমইএ কাকে চাঁদা দিয়েছে সেকথা চেপে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এবার আর চেম্বার অব কমার্সে নয়, বিকেএমইতে ১ অক্টোবর  চাঁদার টাকা উদ্ধার মঞ্চস্থ করার ব্যবস্থা করেন চতুর হাতেম। তখন সাধু সেজে যান হাতেম। এই চাঁদাটা আসলে ভালো চাঁদা বলে মন্তব্য করেন। বিকেএমইএ এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিকেএমইএ’র কাছ থেকে আসলে চাঁদা নেয়নি। এটি অন্য একটি ব্যাবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে আমার মাধ্যমে নিয়েছিলো। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এক থাকাতে এখানে বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়নি। আগামীতেও হবে না আশা করছি। পুরো ঘটনার দায় চাপিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ হাতেম। এরপর নিজেকে জাহির করতে শুরু করেন হাতেম। বিকেএমইএর মতো বড় প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীর অভাব না থাকলে নিজেকে সবজান্তা শমসের বলে উপস্থাপন করা শুরু করেন হাতেম। সমন্বয়কদের ম্যানেজ করতে নানা নাটক শুরু করেন হাতেম। নিজে ছুটাছুটি করেন ঝুট নিয়ে বিএনপি জামাতের বড় ছোট সব নেতাদের কাছে। বেশিরভাগ নেতাই ওসমান দোসরের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাই কেউ পাত্তা দেয়নি। জামায়াত, ডান-বাম সব খানেই ছুটে বেড়িয়েছেন তবে ওসমান দোসর হিসেবে কুখ্যাতি থাকায় সেই মানের কোন নেতাকে তার ঝুট বণ্টনের জন্য পাশে পাননি। 

 

এদিকে চাঁদার টাকা দেয়া ও ফেরত নাটকে হাতেমের স্ট্যান্টবাজির বিষয়ে সবাই বুঝে যান। ২৮ ডিসেম্বর হাতেমের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনসুর আহমেদ এবং ডিরেক্টর খুরশিদ আহমেদ তুনিম। তারা দুইজন ২৮ নভেম্বর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট বরাবর তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।  পদত্যাগ করা পরিচালনা পর্ষদের দুজন উল্লেখ করেন, ‘একটি ভারী হৃদয় এবং গভীর হতাশার সাথে যে আমরা বিকেএমইএর পরিচালনা পর্ষদের পদ থেকে অবিলম্বে কার্যকরী পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এই সিদ্ধান্তটি এতো সহজে নেয়া হয়নি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে বর্তমান নেতৃত্বের বিষয়ে আমাদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের ফলাফল এই পদত্যাগ। আমরা এমন আচরণ লক্ষ্য করেছি, যা আমাদের দৃষ্টিতে স্বৈরাচারী প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে এবং ন্যায্যতা, অখণ্ডতা এবং গণতন্ত্রের নীতিগুলিকে দুর্বল করে, যা আমাদের সংস্থার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপগুলি আমাদের মূল্যবোধ এবং নৈতিক মানগুলির বিরোধিতা করে।   গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের বরাতে তারা উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম এবং আরও কিছু সিনিয়র বোর্ড অফ ডিরেক্টর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (আওয়ামী লীগের) ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যাকে সমর্থন করেছিলেন এবং বিশেষ করে যারা নিরীহ ছাত্র ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছিল। পদত্যাগপত্রে তারা বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং আমার বিবেকের আঁকড়ে ধরে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে যারা এই ফ্যাসিবাদকে সমর্থন কওে, তাদের পাশে আমরা কাজ করব না। তারা বলেন, সামগ্রিকভাবে, আমরা মনে করি, আগামী ৫ ডিসেম্বর ২০২৪-এর জন্য নির্ধারিত (ইজিএম) এবং ২৪ তম (এজিএম-২০২৪) অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। তারা বলেন, আমরা আমার সহকর্মী বোর্ড সদস্যদের প্রচেষ্টাকে গভীরভাবে সম্মান করি এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের সাফল্য কামনা করি। যাইহোক, আমরা বর্তমান নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং সংগঠনের উত্তরাধিকার এবং মূল মূল্যবোধের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব প্রতিফলিত করার জন্য বোর্ডকে অনুরোধ করছি। আমরা আশাবাদী বিকেএমইএ ভবিষ্যতে তার মৌলিক মানগুলি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।’ এরপর ওসমান দোসর হাতেমই সেলিম ওসমান ও নানা জায়গা থেকে তদবীর ও চাপ সৃষ্টি করে পদত্যাগ করা দুইজনকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করান। যার প্রমাণ মেলে ৫ ডিসেম্বর বিকেএমইএর ইজিএম ও এজিএম অনুষ্ঠানে তারা দুইজনই অনুপুস্থিত ছিলেন। সেই দিনও হাতেম তার স্ট্যান্টবাজি চালিয়ে যান।

ইজিএম অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হাতেম বারবার ঘোষণা করতে থাকেন বিকেএমইএর এই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকে তিনি বলেই যাচ্ছেন এই তো তারা চলেই আসছেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উপস্থিত হবেন। এই তো তারা লিফটের উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এই তো তারা এক্ষুনি চলে আসবেন। কিন্তু আদতে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই বিকেএমইএ’র এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। বারবার এই স্ট্যান্টবাজির অর্থ ছিল, হাতেম বোঝাতে চেয়েছেন, তার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের গভীর সম্পর্ক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এই অনুষ্ঠানে তো তাদের আসারই কথা না। কিন্তু হাতেম এটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও কাছের লোক। অথচ তিনি যে, শেখ হাসিনা সরকার ও ওসমানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তা তো ভিডিও বক্তব্য ও পত্রিকার পাতায় স্পষ্ট প্রমাণ আছে। সারাদেশের মানুষ যে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে সেটি তিনি ভুলেই গেছেন, আর ব্যবসায়ীরা তো খুব ভালো করেই জানেন হাতেম গত ১৫ বছর যাবৎ ওসমানদের হয়ে কী কী করেছেন। অনেকে টিপ্পনী কেটে কানাঘুষো করেন, কে বসালো হাতেমকে সভাপতির পদে নির্বাচন ছাড়া! তিনি ৫ আগস্টের পর কী করে হর্তাকর্তা বনে গেলেন। আর তার এই কমিটিতে তো অনেক ওসমানীয় বলয়ের লোকে ভরপুর। তিনিও তাদের মধ্যে অন্যতম।

হাতেমের স্ট্যান্টবাজি ধরতে পেরে এবার বিকেএমইএর ব্যবসায়ীরা একাট্টা হন। সেলিম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে গঠিত তথাকথিত কমিটি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ও সচিব বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন বৈষম্যের শিকার বিকেএমইএ’র সাধারণ সদস্যরা। অভিযোগপত্রের সাথে সাবেক এমপি ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি সেলিম ওসমানের স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্রও সংযুক্তি আকারে প্রদান করেন ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগপত্রে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) দেশের নিটওয়্যার প্রস্তুতকারকদের একটি জাতীয় বাণিজ্য সংস্থা। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সম্প্রসারণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনামলে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা তাদের কার্যকলাপের জন্য সবসময়েই ছিলেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। ২০১০ সাল থেকে টানা ১৪ বছর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। প্রথমবার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নামকাওয়াস্তে কয়েকটি নির্বাচন হলেও পরবর্তীতে ‘তথাকথিত সমঝোতা’র মাধ্যমে পর্ষদ করে নিজের অনুগতদের নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করেছেন। বিকেএমএই তে সব কিছুই চলতো সেলিম ওসমানের নির্দেশনা অনুযায়ী। এমনকি কে কোন পদে থাকবেন সেটাও নির্ধারণ করে দিতেন তিনি। ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত ২৪ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সভাপতির পদ থেকে সেলিম ওসমান পদত্যাগ করেন। তবে তিনি কমিটি পুনর্গঠন করার ঘোষণা না দিয়ে নতুন সভাপতি নির্বাচন করেন এবং তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পর্ষদকে অনুরোধ করেন যা এই ধরনের নেতৃস্থানীয় সংগঠনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সেলিম ওসমান তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান নির্বাহী সভাপতি হাতেম দীর্ঘদিন ধরে আমাকে, বিকেএমইকে ও নিট সেক্টরের উন্নতির জন্য সহায়তা করে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি পরিচালনা পর্ষদের সকলের কাছে অনুরোধ রাখতে চাই, আমার বিদায়ের পর পর বিকেএমইএ ও নিট সেক্টরের উন্নয়নকল্পে মোহাম্মদ হাতেম এর অবদান এবং প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তাকে এই নতুন বিকেএমইএ পরিচালনার জন্য সভাপতির দায়িত্বভার অর্পণ করা হোক (সংযুক্তি দ্রষ্টব্য)।" অনুগত পর্ষদও বিনা বাক্যব্যয়ে তার কথা মেনে নিয়েছেন এবং মোহাম্মদ হাতেমকে সভাপতি, সাবেক স্বৈর-শাসকের দোসর সেলিম ওসমানের অনুগতদের নিয়েই গঠিত হয়েছে প্রহসনের বর্তমান পর্ষদ।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ হাতেম বিগত তিন বছর যাবত নির্বাহী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে ২০২১ সালে নির্বাহী সভাপতির একটি নতুন পদ সৃষ্টি করে সেখানে তাকে বসান সেলিম ওসমান। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের পুরোটাই সেলিম ওসমানের অনুগত থেকে মোহাম্মদ হাতেমও পুরোপুরি ক্ষমতার সদ্বব্যবহার করেছেন। তিনি সরকারের কতটা আজ্ঞাবহ সর্বশেষ তার প্রমাণ দিয়েছেন গত ২২ জুলাই। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে বিকেএমইর তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি (বর্তমান সভাপতি) মো. হাতেম বলেন, ‘এরকম একটি সঙ্কটকালে আমরা এমন সিচুয়েশন দেখবো সেটা আশা করিনি। যে তান্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা তা উদঘাটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। আমরা সরকারের পাশে সবসময়ই ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।" (তথ্যসূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=L8CJCNoywTI)।


অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ হাতেম নারায়ণগঞ্জের বিসিক অঞ্চলে (ঝুট গামের্ন্টস এর পরিত্যক্ত অংশ) নিয়ন্ত্রণ ও জোরপূর্বক জায়গা-জমি দখল করে ভীতিকর এক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছেন, যা একটি সংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে কখনোই কাম্য নয়। সেলিম ওসমান ও তার অনুগতদের নেতৃত্বে বিকেএমইএতে কোটি কোটি টাকা লোপাট ও দুর্নীতি হয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। আমরা বৈষম্যের শিকার সাধারণ সদস্যরা সংগঠনটিকে সেলিম ওসমানের অনুগত ও আওয়ামীলীগ সরকারের দোসরদের রাহুমুক্ত দেখতে চাই। বিগত চৌদ্দ বছরে সংগঠনটির নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা অনুসন্ধানকল্পে বর্তমান সরকারের মদদপুষ্ট পর্ষদকে বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি বলেও আমরা মনে করি। এবং দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনায় সুযোগ্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এরপর থেকে নিজের চেয়ার বাঁচাতে নানা জায়গায় ছুটছেন মোহাম্মদ হাতেম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ ঢেলে নিজের চেয়ার বাঁচানোর জন্য ধর্না দিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে সকল তথ্য যাচাই-বাঁছাই করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওসমান পরিবারের সাথে হাতেমের দীর্ঘদিনের সখ্যতা, সেলিম ওসমানের পদত্যাগের চিঠিতে হাতেমকে উত্তরসূরি হিসেবে বিকেএমইএ’র সভাপতি হিসেবে বসানো, ওসমানদের শেল্টারে বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, বিসিক সংলগ্ন এলাকায় ভূমিদস্যুতা, ওসমান পরিবারর ক্ষমতায় ব্যবসায়ীদের নিকট চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের চাপে ফেলে বিচার সালিশের নামে বিপদে ফেলে অর্থ আদায়সহ আরো বেশকিছু গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সকল ধরণের স্ট্যান্টবাজি খোলাসা হয়ে যাওয়ায় এবার হন্য হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের পিছু ছুটছেন হাতেম। নানাজনকে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তদ্বির করানোর অপচেষ্টা করছেন। এই কাজে হাতেমের দুই ছেলের মধ্যে বড় হাসিন আরমান অয়ন এবং ছোট ছেলে হাসিন রিয়ান অনিককেও ব্যবহার করছেন। অতীতে এই দুইজন ওসমান পরিবারসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সেল্ফিবাজিতে ব্যস্ত থাকলেও এখন পিতার সংগঠনের চেয়ার বাঁচাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাইবার যোদ্ধা হিসেবে স্ট্যান্টবাজি করছেন। তারাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বাবার চেয়ার বাঁচাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তদ্বির করানোর অপচেষ্টা করছে বলে জানিয়ে সূত্র। তবে ২২ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বাসভবনে গিয়ে হাতেমের দেয়া বক্তব্য সারা দেশে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা হাতেমসহ তার দুই ছেলের স্ট্যান্টবাজির বিষয়টি ধরতে পেরেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি, মহানগর বিএনপি, নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতিসহ নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের বিশিষ্টজনেরাও ৫ আগস্টের পর হাতেম যে স্ট্যান্টবাজি চালু করেছিলো সেটি বুঝতে পেরে ওসমানদের দোসর হাতেমকে অপসারণের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। বিকেএমইএর বেশিরভাগ সদস্যই হাতেমের দ্রুত অপসারণ চান। এদিকে হাতেমের ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বিসিক এলাকার স্থানীয় জনগণ। ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিরোধ লাগিয়ে সংঘর্ষ বাধানোর হীন যে পরিকল্পনা হাতেম নীলনকশায় করেছিলো সেটি নিয়েও ত্যক্ত বিরক্ত ব্যবসায়ীরা। তারা এমন কুঠিল লোকের পদত্যাগে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সবাই প্রত্যাশা করছেন অতি দ্রুত হাতেমকে অপসারণ করে ওসমান প্রভাবমুক্ত হবে বিকেএমইএ।


উল্লেখ্য, মোহাম্মদ হাতেম বিগত তিন বছর যাবত নির্বাহী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে ২০২১ সালে নির্বাহী সভাপতির একটি নতুন পদ সৃষ্টি করে সেখানে তাকে বসান সেলিম ওসমান। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের পুরোটাই সেলিম ওসমানের অনুগত থেকে মোহাম্মদ হাতেমও পুরোপুরি ক্ষমতার সদ্বব্যবহার করেছেন। তিনি সরকারের কতটা আজ্ঞাবহ সর্বশেষ তার প্রমাণ দিয়েছেন গত ২২ জুলাই।


সেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে বিকেএমইর তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি (বর্তমান সভাপতি) মো. হাতেম বলেন, 'এরকম একটি সঙ্কটকালে আমরা এমন সিচুয়েশন দেখবো সেটা আশা করিনি। যে তান্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা তা উদ্ঘাটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। আমরা সরকারের পাশে সবসময়ই ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।
 

এই বিভাগের আরো খবর