সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

প্লাস্টিকের বর্জ্যে শহরে অস্থায়ী জলাবদ্ধতা

লিমন দেওয়ান

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২২  

নারায়ণগঞ্জে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য দায়ী অবৈধ পলিথিন। এই অবৈধ পলিথিনের কারণে বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এই অবৈধ পলিথিন ড্রেনের মুখে থাকার কারণে বৃষ্টির পানি ড্রেনে ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারে না। এতে করে সামান্য বৃষ্টি হলেই নারায়ণগঞ্জ শহর পানিতে তলিয়ে যায়। যাতে কষ্ট করে সাধারণ মানুষ। অনেক মানুষ এই ড্রেনের ময়লা পানির কারণে বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হতে পারে না।

 

 এই পলিথিনকে অবৈধ করা হয়েছে কারণ এই পলিথিন যা মাটিতে গেলে ক্ষয় হয়না বা মাটির সাথে মিশে যায়না। এটি মাটিতে পানি ও প্রাকৃতিক যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে মাটির গুনগত মান হ্রাস পায়। গাছ তার খাবার পায়না। মাটি ও পানিতে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়ে। যা হয়ত পানি থেকে মাছের শরীরে যাচ্ছে। 

 

মাটিতে প্লাস্টিকের তৈরি টক্সিক রাসায়নিক পদার্থ গাছে মিশে যাচ্ছে। আর তা পরে শুধু পশু পাখি নয় মানুষের শরীরেও এসে পৌছায়। প্লাস্টিক মানুষের শরীরে আরো অনেক মরণ ব্যাধির পাশাপাশি ক্যান্সারের জন্য দায়ী। আর এই পলিথিনের কারণে আগের মতো কোনো সৌন্দর্য খাল-বিল এখন আর দেখা যায় না। সব খালে রয়েছে পলিথিনের বাহার। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি কেনো খাল-বিল নদী নালা

 

 সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ স্থানে পরে রয়েছে এই পলিথিন। ড্রেনের মুখগুলো পলিথিনে বন্ধ হয়ে পরে আছে। পানি যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। শহরের সব হকাররা তাদের জিনিসপত্র খুলে সব পলিথিন ড্রেনে ফেলছে এতে করে। ড্রেনের মুখ সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে দোকানদাররা ও ফেলছে এতে করে পরিবেশ পুরো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

 

 কাঁচাবাজার,শপিংমল,দোকানদার, চেইনশপসহ বিভিন্নস্থানে এই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই এ পন্য নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও এর উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার একটুকুও কমেনি। নির্ভরযোগ্য বিকল্পের অভাবে বাজার সয়লাব হয়ে আছে এই নিষিদ্ধ পলিথিনে।

 

 এবিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এই অবৈধ পলিথিনের কারণে জলাবদ্ধতা বা পরিবেশের ক্ষতি হোক তা তারা চান না। কিন্তু যদি আমার পলিথিন ব্যবহার না করি তাহলে আমরা আর কি ব্যবহার করতে পারি এমন সহজলভ্য কেনো পন্য বাজারে নেই। যদি থাকতো তাহলে আমার এই ধরণের অবৈধ জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতাম।

 

 এ বিষয়ে এক ক্রেতা মাহবুব তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন , দোকানদার দিলে আমরা কি করব। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার আমাদের জন্য সহজ। কিন্তু সেটা পরিবেশের জন্য খারাপ । আপনারা দেখেন চারদিকে শুধু পলিথিন আর পলিথিন। বন্ধ করার ব্যবস্থা তো দেখি না। তিনি বলেন জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের এই পলিথিন ত্যাগ করতে হবে। এই পলিথিনের কারণে বৃষ্টি হলে আমরা ড্রেনের ময়লা পানি দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। সিটি কর্পোরেশন মাঝে মাঝে ড্রেনে পরিষ্কার করলে দেখা যায় সেখান থেকে টনে টনে পলিথিন পাওয়া যায়।


 
এ বিষয়ে এক পথচারী রুবেল মিয়া জানান, বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে ২০০২ সালে। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণেই এই পলিথিন থেকে মুক্তি মিলছে না। সরকার বাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার পুরোবাস্তবায়ন হয়নি। এই পলিথিন ব্যবহার আমরা চাইলে কমিয়ে দিতে পারি। পলিথিন ব্যবহারের মতো এমন সহজ পন্য আর কি রয়েছে। 

 

আর আমরা জনগণ যদি সচেতন হই তাহলে আর আমাদের এই জলাবদ্ধতাসহ আরো অনেক সমস্যা থেকে আমরা উঠে আসতে পারবো। এই যে বৃষ্টি হলে যে নারায়ণগঞ্জ শহরে পানি উঠে যায় এই ড্রেনগুলো পুরো প্লাস্টিক দিয়ে ভরে থাকে। এটাতো অনেক খারাপ একটা বিষয়। আমরা যে পলিথিন ব্যবহার করি এগুলো যদি আমরা ব্যবহার করার সত্ত্বে ও সঠিকস্থানে ফেলি তাহলে মনে হয় আমাদের এই জলাবদ্ধতার স্বীকার আর হতে হবে না। এসএম/জেসি 
 

এই বিভাগের আরো খবর