শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

ফতুল্লা বিএনপির রাজনীতিতে ধস

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

 

জেলা বিএনপির আওতাধীন ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজনীতিতে বিভক্ত যেন কোন মতেই পিছু ছাড়ছে না। গত বছরের (৫ ফেব্রুয়ারী) ফতুল্লা থানা বিএনপির ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার পর ফতুল্লায় বিএনপির রাজনীতিতে শৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়।

 

 ঐক্যবদ্ধভাবে কিছুদিন দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে ফতুল্লা থানা বিএনপির অংশগ্রহণ দেখা গেলে। দীর্ঘ ১৯ বছর পর একই বছরের (১৩ জুন) ফতুল্লা থানা বিএনপির দ্বি-বার্ষিকী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে বিভিন্ন টানাপোড়নের পরই ফতুল্লা থানা বিএনপিতে বিভক্তের রাজনীতি লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে বিভক্তি লক্ষ্য না করা গেলে ও গত বছরের (৪ আগষ্ট) জেলা ও মহানগর বিএনপির যৌথভাবে কর্মসমূচি পালনে সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোড় দিয়ে মহাসড়কে উঠতে গেলে জেলা গোয়েন্দা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

 

 তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢিলের বিপরীতে শটগানের ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের ছোড়া গুলিতে  ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ২টি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সাধারণ সম্পাদক বারী ভূঁইয়াকে সর্বদা তার সভাপতির পক্ষে মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে লক্ষ্য করা যায়। কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মোল্লাকে ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানানোর পরপরই টিটুর রাজনীতি সাইড লাইনে আসতে থাকে একই সাথে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদারকে নিয়ে এককভাবে ফতুল্লা থানা বিএনপির ব্যানারে মিছিল মিটিং শুরু করেন। 

 

এর পরপরই তাদের মাঝে প্রকাশ্য বিরোধ লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীতে সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু রাজনীতিতে ফিরে আসলে তিনি তার সভাপতির পদ বুঝে নিলে ও কমিটিতে থাকা বিভক্তি ছুঁটেনি। এদিকে থানা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মোল্লাকে স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়ে বারী ভূইয়া এবং থানা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদারকে স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। এক কমিটিই এখন তারা দুই কমিটি তৈরি করে ফেলেছেন।

 

সূত্র বলছে, গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপের মুখে পরে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলেই আওয়ামী লীগের ফেলে আসা সেক্টর লুটেপুটে খেতে উঠে পরে লেগেছে বিএনপি। এদিকে ফতুল্লা থানা আওতাধীন প্রতিটি এরিয়াকেই শিল্পাঅঞ্চল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কারণ প্রায় ৫০০ এর অধিক গার্মেন্টস-ডাইং, যমুনা- মেঘনা তেলের ডিপো, বালু সেক্টর, জমি সেক্টর, বিভিন্ন চাঁদাবাজি সংগঠন প্রায় নিয়মিত কোটি কোটি টাকার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই অঞ্চলে।

 

 যা নিয়ে বর্তমানে  বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাদের মাঝে প্রকাশ্য বিরোধের পর সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। ঘটেছে হতাহতের মত ঘটনা। এদিকে গত (১৮ আগষ্ট) থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূইয়া পৃথক বলয়ের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে এলাকা দখল নিয়ে দুই গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ বাধে। ইতিমধ্যে কেউ প্রকাশ্যে না আসলে ও যে যার যার বলয়ের মাধ্যমে দখলদারিত্ব বানিজ্যে চলমান রেখেছে। 

 

তা ছাড়া বিসিক এনায়েতনগর ইউনিয়নের আওতায় থাকায় বিসিকের ২ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মানিকের মাধ্যমে জোরপূর্বকভাবে বিসিকের প্রায় ৮টি গার্মেন্টস-হোসীয়ারীর মালামাল নামছে। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এড. আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সুমন বারী ভূঁইয়ার প্যানেলে থেকে তারা আরেক সাইডে থেকে তাদের বলয়ের ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন্ভাবে সব মাসদাইরের বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সেক্টর দখলের দায়িত্ব দিয়েছেন।

 

 তা ছাড়া বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে নিয়ন্ত্রণে সেই সেক্টর চলে এসেছে বলে শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া যমুনা ও মেঘনা ডিপো ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা সেই ওয়ার্ডের একজন নেতা ও যুবদল নেতাদের মাধ্যমে দখলে নিয়ে এসেছে।  একই সাথে হাঁট-ঘাট সবই। তা ছাড়া ফতুল্লার ইসদাইর এলাকার বিভিন্ন ডাইং ব্যবসা থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, কিন্তু গত ৫ অক্টোবরের পরপরই প্রায় কোটি টাকার চাঁদা বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে ফতুল্লার এই শিল্পাঞ্চলগুলো ঘিরে।

 

 একই সাথে এনায়েতনগর ইউনিয়নের আতাধীন বিসিক শিল্পাঅঞ্চলে বড়-মাজারী-ছোট মিলিয়ে প্রায় শতাধিকের বেশি গার্মেন্টস-ডাইং রয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর একজন যুবদল নেতা, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই সেই সেক্টর নিজেদের দখলে নিয়ে এসেছে। তা ছাড়া মাসদাইর এলাকার মাজারী ও ছোট সাইজের গার্মেন্টসগুলো সেই যুবদল নেতা কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে মিলেই দখলে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

 

কাশীপুর ইউনিয়ন জুড়েই সেই ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও একজন যুবদল নেতা তাদের সাঙ্গপাঙ্গ দ্বারা জমি দখল, কয়েকটি মিনি গার্মেন্টস থেকে ওয়েস্টিজ মালামাল ও ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করা, ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা ডিস ব্যবসা দখল, বাজার কমিটি দখল, মালিক সমিতি দখল, ঈদগাহ কমিটি ও স্কুল কমিটি দখলের পায়তারা, পাওয়ার হাউজ দখল, ইট-বালুর ব্যবসা দখল, জমি দখল, লুটপাট-চাদাঁবাজি সবই চলমান। 

 

একই সাথে এই ইউনিয়নেই মহানগর নগরের একজন যুবদল নেতার নামে চলছে রাম-রাজত্ব খিল মার্কেট হোসাইনীনগর এলাকায় প্রায় ২০০ এর অধিক মিনি গার্মেন্টস পুরোই দখলে নিয়েছে কথিত যুবদল নেতা নামধারী অনেকেই। তা ছাড়া কুতুবপুর ইউনিয়নের জুড়েই বিভিন্ন ব্যবসায়ী সেক্টর, লোড আনলোড মালিক সমিতি, ডাইং, গার্মেন্টস, সরকারি-বেসরকারি জমি, পাগলার নৌ-পথের শ্রমিক সংগঠন, ট্রাক স্ট্যান্ড সবই দখলে নিয়েছে ফতুল্লা থানা বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা।

 

 তা ছাড়া বক্তাবলী এলাকার হাট-ঘাট, ইটভাটা, তেলের ব্যবসা সবই দখলে নিয়েছে নামধারী সেই ইউনিয়নের বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। বর্তমানে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তের মাধ্যমে সংকেত আসছে এবার জেলা বিএনপির আওতাধীন ফতুল্লায় সেই সংকেতের হাওয়া লাগার সম্ভবনা বেশি। যার মূল কারণ হচ্ছে ফতুল্লার থানার আওতাধীন ৫টি ইউনিয়নেই যে বর্তমানে চলছে সংঘর্ষ যে পরিমানে দখল দারিত্ব।

এই বিভাগের আরো খবর