ফতুল্লার বিসিক যেন আরেক কেজিএফ
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের স্বর্ণখনি কোলার গোল্ড ফিল্ড (কেজিএফ)। ১৮৭৫ সাল থেকে পৃথিবীর অন্যতম এই বড় খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন শুরুর পর হাতবদলে এসময় অবৈধ মাইনিং (খনন) করে বিপুল পরিমান স্বর্ণের মজুদ ও অবৈধ সম্পদের জোরে কী করে সরকারের উপর চাপ তৈরি করে সন্ত্রাসীরা, এনিয়ে ভারতীয় মুভি ‘কেজিএফ’ বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলে।
শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও কেজিএফ এর আদলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি, মাসদাইর, ইসদাইর, কাশিপুর এলাকার বিসিক ও এর বাইরের পোশাক তৈরি কারখানার ঝুট ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা, এক্সেসরিজ, ডায়িং, সুতা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে আরেক কেজিএফ প্রতিষ্ঠা করেছে কুখ্যাত ওসমান পরিবার।
গডফাদার হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান, ব্যবসায়ীদের জমদূত হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান মূলত এই এলাকার ঝুটব্যবসা, ইন্টারনেট, ভূমিব্যবসা, এক্সেসরিজ, ডায়িং ব্যবসার নিয়ন্ত্রক হয়ে গোটা এলাকাটিকে সন্ত্রাসীদের জন্য সোনার খনিতে পরিণত করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এবং নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ হায়দার খান কাজল, বিকেএমইএ’র সভাপতি (তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি) মোহাম্মদ হাতেম, বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের নেতা মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, নারায়ণগঞ্জ হোসেয়ারি এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল মূলত এই গোটা এলাকায় ওসমানদের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। ঝুট ব্যবসা, কথায় কথায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে লাভের একটি বড় অংশ ওসমানদের হাতে তুলে দিতেন তারা।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হয় রাজনীতি
শুধু বিসিক ও আশপাশের এলাকায় ছোট বড় অন্তত ৫০০ পোশাক তৈরি কারখানার অবস্থান এখানে। এখানকার ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ গোটা এলাকার বিতর্কিত ব্যক্তিরা এসব ব্যবসায় ওসমানদের প্রভাবে ফুলেফেপে ওঠেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির মূল দায়িত্ব খালেদ হায়দার খান কাজল, মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, নাজমুল আলম সজল (হোসেয়ারি) উপর ন্যস্ত ছিল।
আর হাতেমের নিয়ন্ত্রণে ছিল গোটা এলাকার জুট ব্যবসা, বিচার সালিশ। এদের প্রত্যেকের নিয়ন্ত্রণে ছিল বিশাল বিশাল বাহিনী। ব্যবসায়িকসূত্রেই বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের নিয়ে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ক্যাডারদের হাতে ছিল ঝুট নামানো, কেনা, বিক্রি, মহড়ার মূল দায়িত্ব। এটি আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতো অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমান।
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, ও তার ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ঈসমাইল রাফেল প্রধানের নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর মাসদাইরের ক্যাডাররা অয়ন ওসমানের পক্ষে এসব নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের তত্ত্বাবধানে অয়ন ওসমানের জেডএন কর্পোরেশনের ইন্টারনেট সংযোগও এখান অর্ধকোটি টাকার মতো আয় হতো।
আজমেরী ওসমানের পক্ষেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা গোটা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ চলতো। মূলত এই গোটা এলাকার ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে ওসমান পরিবার তার সন্ত্রাসীদের লালন-পালন ও নানা কুকর্মে ইনভেস্টমেন্টের অর্থের জোগান দিতো। সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সময় শামীম ওসমানের বন্ধু খালেদ হায়দার খান কাজলের প্রত্যক্ষ সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের অস্ত্র লুট করে রিয়াদ-রাফেলের নেতৃত্বাধীন শামীম-অয়নের ক্যাডাররা।
এসব অস্ত্র দিয়ে শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ,রাফেলসহ অন্যান্য ক্যাডারদের মহড়া ও এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। জালকুড়ি এলাকায় কেজিএফ স্টাইলে ক্যাডারদের নিয়ে অয়ন ওসমানের গুলি ছোড়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ৫ আগস্টের পর মাত্র ৪টি অস্ত্র উদ্ধার হলেও প্রায় সবগুলোই শামীম ওসমানের ক্যাডারদের হাতে।
৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ওসমানরা পালিয়ে গেলেও গোটা এলাকায় তাদের দোসররা খোলস বদলাতে শুরু করে। তারা বিএনপির বিভিন্ন পদ এবং পদছাড়া নেতাদের কাছে ডেকে জুট, ইন্টারনেটসহ নানা ব্যবসার প্রলোভনে ওসমানদের নিয়ন্ত্রনাধীন ব্যবসা বুঝিয়ে দেয়। এরমধ্যেই ভাগবাটোয়ারা কে কি পাবেন, কী দিতে হবে তার একটি ছক আকেন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দুবাইয়ের আজমান শহরে শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমানসহ পুরো পরিবার পাচার করা অর্থে কেনা বাড়িতে আছেন। শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানও তার মা,স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে আছেন। শামীম ওসমানের ক্যাডার শাহনিজাম, শাহজালাল বাদল, আজমেরী ওসমানের ক্যাডাররাও দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। মালেয়শিয়া আছেন ছাত্রলীগ ক্যাডার হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও রাফেল প্রধানসহ অন্যরা।
মূলত দূর থেকেই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিককে ফোন দিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের মনোনিত বিএনপি নেতাদের ঝুট ব্যবসা, ইন্টারনেটসহ তাদের নেতৃত্বাধীন ব্যবসাগুলোর রক্ষক করেছেন। বিনিময়ে এসব ব্যবসার অর্থের একটি বড় অংশ তাদের হাতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সেখান থেকেই সেই অর্থে নারায়ণগঞ্জের নানা জায়গায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা। এখনো নানাহাত ঘুরে এই ব্যবসায়িক অঞ্চলের অর্থ ওসমানদের হাতে চলে যাচ্ছে।
কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ঝুট ব্যবসা :
গত ৫ আগস্টের পর পটপরিবর্তনে রিয়াদ-রাফেল দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমালে ও সব সমীকরণ মিলিয়ে মাসদাইর ও বিসিকের ব্যবসায় হাত-বদল হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একই পরিবারের হাতে। এদিকে বিগত দিনে রিয়াদ ও রাফেলের নিয়ন্ত্রাধীন মাসদাইরে ছড়ি ঘুরাতেন ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদের চাচাতো ভাই অনিক প্রধান, তার ভাই অমিত প্রধান, রিয়াদের আরেক চাচাতো ভাই সুমন প্রধান, ভাই সিয়াম প্রধান, হিমেল প্রধানসহ রিয়াদের চাচা জসিম প্রধান ও রিয়াদের বাবাসহ এলাকায় নানা অত্যাচার করতেন।
কিছুদিন পূর্বে প্রকাশ্যে চাষাড়া বালুর মাঠ থেকে তুলে নিয়ে নিজের বাড়ির সামনেই খুন করা হয় দানিয়ালকে। রিয়াদ-রাফেলের গোটা পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল। জেলা যুবদেলর সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনিও এই পরিবারের নিকটাত্মীয়। ৫ আগস্টের পর ব্যবসায়ী নেতা হাতেম, তার ভাতিজা, মশিউর রহমান রনি, তাঁর, ভাই, ভাগিনা, ভাতিজাসহ, রনির ফুফা এনায়েতনগর ৬,৭,৮নং ওয়ার্ডের মেম্বারদের নিয়ে ওসমানদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়।
তাদের তত্বাবধানেই রাফেলের নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্টারনেট ব্যবসা তার ছোট ভাই রাসেলকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। বিগত দিনে যুবদল নেতা রনির মৃত্যু দুলা ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু লীগের মহানগর শাখার সভাপতি এবং তিনি ছিলেন বিসিকের অন্যতম ঝুট সন্ত্রাসদের মধ্যে একজন। বিগত দিনে তারই ছোট ছেলে সিফাত ছাত্রলীগের পদ নিয়ে রাফেল ও রিয়াদের সাথে বিসিকের ৩০টি নিটিংয়ের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করতেন।
পট পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগ মামার পিছু ছেড়ে এসেছেন যুবদল নেতা মামার ছায়াতলে আর নিয়েছেন ২৯টি নিটিং। এদিকে রনির ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে অন্যতম বাধা হিসেবে ছিলেন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ। যাকে ঘিরে গত (২৯ আগষ্ট) রনির ঘনিষ্ঠ নেতা ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর ও এনায়েতনগর ইউনিয়েনর ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিরাজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে বিসিকের সংঘর্ষ ঘটে।
বর্তমানে সিরাজ ও জাহাঙ্গীরকে মশিউর রহমান রনি দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যাবসায়ী নেতা হাতেমের সাথে থাকতে। যাকে ঘিরে সিরাজের নামে রনি নিয়েছেন ৭টি গার্মেন্টসের ঝুটসহ সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ আর সেটার টোকেন দিয়েছেন সেই বিকেএমইএর শীর্ষ নেতা। সেগুলো হলো- এবি এফ গার্মেন্টস, খাতুনসহ আরো কয়েকটি।
তা ছাড়া বর্তমানে মাসদাইর এলাকায় রনির ভাই রুবেল, এনায়েতনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি জুম্মন ও তার বাবাসহ এনায়েতনগরের ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মাসদাইর রেখেছেন দখল। এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির নামে ফকির এপারেলসের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করেন রনি। যা গতসপ্তাহে মাল নামলে ও এখনো হয়নি হিসেবের ভাগ। সকলের একটাই কথা রনি বিদেশ থেকে আসলেই, টাকার ভাগ হবে।
নভেম্বরে সিঙ্গাপুর হয়ে মালেয়শিয়া যান যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি। সেখানে অবস্থারত তার দুই ভাই ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ ও রাফেলের সাথে এসব ব্যবসা ও অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করেছেন তিনি।
বিসিকের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে হাতেমের ভাতিজা :
হাতেমসহ তারঁ ছেলে ও দুই ভাতিজার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আছে, বিসিকের ৩নং গেইটের সামনে ইনোভেটিভ নীট্যাক্স লিমিটেড, নিমারেক ডিজাইন লিমিটেড, লা রিভ নীটওয়ার লিমিটেড, ফ্ল্যাকজেন ড্রেজ মেকার লিমিটেড, আরফোর ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, জারা স্টাইল লিমিটেড, সায়েম নীট ফ্যাব্রিক্স, এমএম নীট ওয়্যার, ১নং গলির ইউনাইটেড নীট ফেব্রিক্স, টেক্চার নীট ওয়্যার লিমিটেড, স্টারলেট কম্পোজি লিমিটেড।
এমএস ফ্যাশন নীট, ওয়ান ট্যাক্স নীট ওয়্যার, নিউফাতেমা নীট ফ্যাশন, ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স এর প্রথম গল্লিতে সিহাব নিট ওয়্যার, টমাস নীটিং, কিডস ওয়্যার নীট ফ্যাশন, এসএসএস নীট ওয়্যার লিমিটেড, বোরাক নীট ওয়্যার লিমিটেড, এমএস জুথি নীটিং, আহিল নীট ফ্যাব্রিক্স, এসকেও নীট ওয়্যার, জেধার নীটিং, শাহপীর নীট ওয়্যার, মাশফি নীট ওয়্যার, রীতা নীট ওয়্যার, ১নং গেইটের সাফিয়া এপারেলস লিমিটেড, ফাইয়াজ ফ্যাশন লিমিটেড।
হাওলাদার এমব্রোডারি, জাস্ট নীট ওয়্যার, টেক্সার নীট ওয়্যার লিমিটেড, অটোমেশন নীটওয়্যার লিমিটেড, ফাহিম টেক্স লিমিটেড, ট্যালেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড, এবিএফ ফ্যাশন লিমিটেড, এমএস ডাইং ডায়িং ও তার শাখা অনামিকা, স্টারলেট অ্যাপারেলস লিমিটিডে, ট্রাসকো এপ্যারেলস লিমিটেড, ফেইম ল্যাক্সওয়ার লিমিটেড, ৪নং গলির সায়েম নীট ফ্যাবিক্স, এমএস সোয়েব নীট ওয়্যার, মেসার্স ফারদিন নীট, নিহাম অ্যাপারেলস, ডিআর কাটিং, ইয়াং ফোর ইভার টেক্সটাইল লিমিটেড, ইউরো নীট স্পিন গার্মেন্ট প্রমুখ। এসকল প্রতিষ্ঠানের টোকেন হাতেম, তার ছেলে ও ভাতিজারা বিভিন্নজনদের বিতরণ করেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
৫ আগস্টের পর যেভাবে বিসিক, মাসদাইর, ইসদারের ব্যবসা বন্টন :
সরকার পতনের পর ওসমান সাম্রাজ্যের পতন হলেও শত কোটি টাকার টাকার উৎস ছাড়তে চাননি ওসমানরা। তাদের পোষ্যব্যক্তিদের দিয়ে বিএনপি নেতাদের কাছে হাতবদল ও ভাগবাটোয়ার বিস্তর হিসাব কষে নিজেদের কাছে টাকার ভাগ পৌঁছে দেয়ার মাস্টারপ্ল্যান করেন ওসমানরা। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিক পালিয়েছেন তাদের ব্যবসা দেখা, ঝুট নিয়ন্ত্রণসহ বিসিক এলাকার গোটা দায়িত্ব অর্পণ হয় হাতেমের উপর।
তড়িঘড়ি করে বিকেএমই সভাপতি বনে যান হাতেম। স্বৈরাচারদের দোসর আখ্যা দিয়ে বিকেএইএর কমিটি থেকে দুইজন পদত্যাগ করলেও দূর থেকে ওসমানদের চাপে আবার কথা বদলে দেন তারা। জানা গেছে, ফতুল্লা বিসিকে বড়, মাঝারি ও ছোট মিলিয়ে প্রায় ৫০০ তৈরি পোশাক ও নিটিং কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বড় রয়েছে ১০৮টি সবগুলোর ন্যায় বড়গুলো ও মোহাম্মদ হাতেমের দখলেই।
তিনি যখন যাকে গার্মেন্টস থেকে মালামাল নামানোর পারমিশন দিচ্ছেন তখনই বিএনপির নব্য কিছু নেতাকর্মীরা হাতেমের জয়জয়কার বলে তার কথায় সেগুলোতে মালামাল নামে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, (বিকেএমইএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাহেবের বলার পরেই বিএনপির কিছু লোকেরা গার্মেন্টস থেকে ঝুটসহ ঝুটসহ অন্যান্য পণ্য কারখানা থেকে বিনা মূল্যে বা নামমাত্র দামে নিয়ে যাচ্ছে সেই বিগত দিনের মতোই।
সূত্র মতে জানা গেছে, ফতুল্লার বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে ঘুরেফিরে হাতেমের নামটিই ব্যবহার করেন নানাজন। সরকার পতনের পরও গোটা ফতুল্লায় ঝুট ব্যবসার প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন হাতেম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, বিসিক এলাকায় ঝুট ব্যবসা করতে গেলে প্রথম অনুমোদন নিতে হয় হাতেমের।
বিসিক এলাকায় ঝুট নিয়ে যেসকল অসন্তোষ শোনা যায় এরপেছনে হাতেমকেই দায়ী করেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে ওসমানদের ছায়া হিসেবে কাজ করেছেন মোহাম্মদ হাতেম। স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওসমানদের ছায়ামুক্ত হতে পারেনি বিকেএমইএ। বর্তমানে এই হাতেম নিজের অবস্থান আগামী দিনে ও ওসমানদের সময়ের মতো ভালো জায়গায় রাখতে নেমে গেছেন গার্মেন্টস এর ঝুট সেক্টর বন্টনে।
বর্তমানে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীদের নামে মোহাম্মদ হাতেমের কথায় ঝুট নামানো হয়। এদিকে জানা গেছে, হাতেম যাকে পছন্দ করেছেন তাদেরই নাম বিভিন্ন গার্মেন্টস মালিকদের ফোন দিয়ে বলে দিয়েছেন। আর গার্মেন্টস মালিকরা ও মোহাম্মদ হাতেমে জিম্মি থাকায় তাকে ছাড়া কিছুই বুঝছে না। খোঁজ নিয়ে বের হয়ে এসেছে গত ৫ আগষ্টের পর হাতেমের প্রেসক্রিপশনে কারা ঝুটসহ প্রত্যকটি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন সেখান থেকে কিছু সংখ্যাক তালিকা প্রকাশ করা হলো।
বিকেএমই এর সভাপতি হাতেম বিসিকে এককগুচ্ছ কায়েম করতে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদকে ছোট-বড় মোট ২২টি গার্মেন্টস এর ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন। সেগুলো হলো, নীট গার্ডেন গার্মেন্টস, লারিব-২, জেমসের গল্লির ২টি গার্মেন্টস, লতিব গার্মেন্টস, তায়েবের গলির সকল, ওইনটেক্সে গার্মেন্টস, বিসিক ডার্চ বাংলা ব্যাংক গলি সবগুলো, রাজিয়া, ফ্রীডমসহ আরো বেশি কয়েকটি।
বর্তমানে এই রাসেল হত্যা মামলায় কারাগারে খাকায় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন তারই লোক-বাচ্চু, আকাশ, রুহুল, আলতাবসহ আরো বেশ কয়েকজন। এনায়েতনগর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলামের নামে দেওয়া হয়েছে ৭টি গার্মেন্টসের ঝুটসহ সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করার পারমিশন দিয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। সেগুলো হলো- এবি এফ গার্মেন্টস, খাতুনসহ আরো কয়েকটি।
এ দিকে ইয়াং ফোর এভার গার্মেন্টস ও স্টার লেট গার্মেন্টসের দুইটি শাখার নিয়ন্ত্রণ হাতেম দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের বিশেষ পেশার কিছু লোকদের। সেখান থেকে তারা ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন। তা ছাড়া হাতেমের ফোনে মহসিন গার্মেন্টস, প্যান্টেক্স, স্কারলেটের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করেন জাকির খানের বড় ভাই কবির খান। জিকু খান পেয়েছেন লারিং এবং জাকির খানের চাচা মনির খানকে দিয়েছেন প্রাউড।
তা ছাড়া হাতেম ফোর ডিজাইন গার্মেন্টস দিয়েছেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রনির ভাগিনা ছাত্রদল নেতা রিফাতকে। কথিত এই হাতেম ফকির এপ্যারেলসের সকল মালামাল নামানোর দায়িত্ব দিয়েছেন একটি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের। একই সাথে আওয়ামী লীগের আমলে ও বর্তমানে ও এই হাতেমের মধ্যস্ততায় এনায়েতনগরের একজন নেতার ভাগিনার দখলে রয়েছে ২৯টি নিটিং।
এ ছাড়া ও এই হাতেম তার অফিসসহ বিসিকের তার ব্যবসা বানিজ্যে পাহাড়ায় রাখতে যুবলীগ নেতা পরিচয় থাকা রুপম ও ফতুল্লা থানা যুবদল নেতা তাইজুল ইসলাম আলামিনের নামে দিয়েছেন আর-এস-৪ এর প্রতিটি শাখার সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন এরা। এদিকে ফতুল্লা থানা বিএনপি সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ হাতেমের গার্মেন্টস এবি এর থেকে ঝুট নামায়।
আর জেবন গার্মেন্টস দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাৎকে। এদিকে বিসিকে আজমেরী ওসমানের ঝুট সন্ত্রাসী রুবেল দেওয়ানের লোক যুবলীগ নেতা প্লাবনকে দিয়ে এখনো বিসিকের বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে বিকেএমই এর সভাপতি হাতেম ফাস্ট ও সেকেন্ড পার্টি হয়ে ঝুট নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে আরো বেশ কয়েকটি ছোট-বড় গার্মেন্টসের ঝুটসহ সকল প্রকারের মামলামাল নামানো বন্ধ রয়েছে। সেগুলো বর্তমানে হাতেমের দখলেই রয়েছে। সেগুলো দেওয়ার জন্য ও হেভিয়েট নেতা খুঁজছেন (বিকেএমইএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনিও ওসমানদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন :
বর্তমানে আওয়ামীলীগের দোসর বিকেএমইএ'র শীর্ষ পদে আসীন এক নেতার বদৌলতে যুবদল নেতা রনি তার ক্লিন ইমেজ রেখে তার লোক, ভাই, ভাগিনাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিয়ে থাকেন বিসিকের বেশির ভাগ গার্মেন্টস। এর মধ্যে তামাই গার্মেন্টস, এবি এফ, নিহাম, ফকির এপারেলস, এলোবেডিট, ওয়েভটেক্স, খাতুন, এবি।
এ ছাড়া ও আরো বড় বড় একাধিক গার্মেন্টসের নিয়ন্ত্রণ এখন মশিউর রহমান রনির বদৌলতে তার লোকদের দখলে এ ছাড়া মাসদাইরের ফারিয়া গার্মেন্টস, সেঞ্চুরী গার্মেন্টস, আমানা গার্মেন্টস, শোভন গার্মেন্টসসহ এমন আরো বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস ও তার ভাগিনা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিফাত এবং এনায়েতনগর ইউনিয়ন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি জুম্মান ও তার বাবা জিলানীর দখলে বিসিক মাসদাইর জুড়ে বহু নিটিং জিম্মি করে রেখেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে তার লোক হিসেবে বিসিক ও মাসদাইর জুড়ে কাজ করছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক পাইলিং জাহাঙ্গীর, এনায়েতনগর ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, রাজনীতি না করে ও মাসদাইরের সকল অপকর্মের প্রকাশে ও গোপনের শেল্টারদাতা রনির বড় ভাই শেখ রুবেল, সেলিম, শহীদ, মিজানসহ আরো বেশ কয়েকজনের মাধ্যমেই সব নিয়ন্ত্রণ করেন এই যুবদল নেতা রনি।
এ দিকে বিগত দিনে তার আওয়ামী লীগের আত্মীয় স্বজন যা করেছেন এখন তাদের থেকে ব্যবসাসহ সকল কৌশল বুঝে নিয়ে যুবদল নেতা রনি সব নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় রয়েছেন। তা ছাড়া যথাযথ ভাগ ও তার ছাত্রলীগের ভাইদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ও করে রেখেছেন এই যুবদল নেতা রনি। এদিকে এর আগের সেপ্টেম্বরের ২৯, ৩০ এবং অক্টোবরের ১ তারিখে ছাত্রলীগ নেতা রাফেল ও রিয়াদকে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে হাংতুয়া এলাকায় দেখা যায় যা রীতিমতে অনেকটাই ভাইরাল হয়। আর বর্তমানে রনি তার ছাত্রলীগ ভাইদের সাথে ব্যবসায়ী মিটিংয়ের উদ্দেশ্য মালয়েশিয়া যাওয়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে।
ছাত্রদল, যুবদলের নেতারাও বঞ্চিত :
শামীম ওসমান, অয়ন ওসমানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের বহু ক্যাডার থাকলেও রাফেল-রিয়াদ ও তার গোষ্ঠীর লোক ছাড়া অত্র এলাকায় বাকিরা ঝুট, ইন্টারনেট ব্যবসার লভ্যাংশ পেতোনা। এতে করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারাও ক্ষিপ্ত থাকলেও শামীম ওসমান অয়ন ওসমানের ভয়ে রিয়াদ-রাফেলকে কিছু বলার সাহস করতো না।
যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির হাতে ওই সকল ব্যবসা সোপর্দ হওয়ার পর তিনিও আগের পথেই হেঁটেছেন। খালাতো ভাই, আপন ভাই, ফুফাতো ভাইসহ আত্মীয়দের মধ্যে পুরো ব্যবসার লভ্যাংশ বন্টন করলেও তার কর্মী হিসেবে পরিচয়দারীদের বুঝিয়েছেন তিনি এসব ব্যবসার সাথে জড়িত নন, কেন্দ্র থেকে তার প্রতি নির্দেশনা তিনি যাতে কোন কিছুতে না জড়ান। পরে এগুলো দেখবেন বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
বিভিন্ন হাত ঘুরে ঝুট-ইন্টারনেট ব্যবসার টাকা ওসমানদের হাতে, যা বলেন বিএনপি নেতারা :
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে আজকে আমরা এই অবস্থায় আছি। স্বৈরাচারের সাথে যারা ছিলো তাদের সাথে যেই এখন আতাঁত করবে আর নিজের স্বার্থের জন্য তাদের ও বেনিফিটেড করবে এটা কোনভাবেই আমরা মেনে নিবো না। এটা হবে শাস্তিযাগ্য অপরাধ।’
তিনি বলেন, ‘যদি এমন কেউ করে থাকে আর তার প্রমান আমরা পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দল থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না তাহলে আজকে ছাত্র-জনতার জীবন বিসর্জন দিয়ে যে স্বৈরাচারের অবসান ঘটানো হয়েছে সেটার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘যদি এমন কিছু হয়ে থাকে দল তদন্ত করে তার বিচার করবে।’
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আপনারা সাংবাকিররা পারেন না এমন কিছু নাই। আপনারা সাংবাদিকরা সত্যটা খুঁজে বের করে সংবাদ প্রকাশ করবেন। তার পরবর্তীতে যদি দলের তদন্তে তা প্রমাণ হয় তা হলে অবশ্যই দল তাঁর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘যদি কেউ আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করার চেষ্টা করে থাকে আর তার প্রমাণ থাকে তাহলে অবশ্যই দলীয় হাইকামান্ড তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’
ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু যুগের চিন্তাকে বলেন, যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তা অনেকটাই দুঃখজনক বিষয়।
মাসদাইরে শামীম ওসমান-অয়ন ওসমানের যত আগ্রহ :
দানিয়াল হত্যা মামলায় রিয়াদ-রাফেলের পরিবারের নাম আসায় শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমানের প্রভাবে পার পেয়ে যান তারা। এক সপ্তাহ পলাতক থাকার পর তারা আবার এলাকায় ফিরে এসে আবারও পুরনো রামরাজত্ব কায়েম করেন। ইউপি নির্বাচনে এনায়েতনগরের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বারকে জেতাতে গিয়ে সেখানে যান রিয়াদ। যদিও রোজিনা মেম্বারকে ফেল করাতেও কন্ট্রাক্ট নেন রিয়াদ।
তবে ৫ আগস্টের পর ওই এলাকায় আওয়ামী ঝুট সন্ত্রাসদের সমন্বয় করানোর অভিযোগ আছে রোজিনার বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বরের যে ঘটনায় শামীম ওসমান সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন তা রীতিমত বিস্ময় ছড়ায়। এনায়েতনগর ইউপির ওই ভোটকেন্দ্র দখলে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পিটুনি খেয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ সাংসদ শামীম ওসমানের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের কুকুরের মতো পেটানো হয়েছে।
এ নিয়ে সাংসদ শামীম ওসমান এক র্যাব কর্মকর্তার কাছে পিটুনির কারণ জানতে চান। পরে র্যাব কর্মকর্তা সাংসদকে কেন্দ্র দখল চেষ্টার কথাটি জানায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টায় কেন্দ্রে যান শামীম ওসমান। তাকে অভিযোগ করে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ বলেন, ‘আমাদের কুত্তার (কুকুর) মতো পিটিয়েছে।’ তখন শামীম ওসমান উপস্থিত র্যাব কর্মকর্তাদের অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন।
জবাবে সিদ্ধিরগঞ্জের র্যাব-১১ এর স্কোয়াড্রন লিডার এ কে এম মনিরুল আলম বলেন, ‘ওদেরকে মারি নাই স্যার। ওরা দেখেন এসব জিনিসপত্র নিয়ে (ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা দেখানো হয়) আসছে। ওখানে ককটেল আছে। তারা এখানেই ছিল। আপনি সবাইকে জিজ্ঞাসা করেন।’ এর আগে এই কেন্দ্র দখলের সময় বাথরুমে অবরুদ্ধ হন সাংসদের ঘনিষ্ঠ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ।
কেন্দ্র দখল করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রিয়াদ ও তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের পিটুনিও দেয়। উদ্ধার করে ককটেল, দেশীয় অস্ত্রসহ বিপুল সংখ্যক লাঠি।মূলত ঝুট ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ অক্ষুন্ন রাখতেই শামীম ওসমানের সেই তৎপরতা ছিল।
পদ ছাড়া নেতাদের নিয়ে অপকর্ম করাতেন শামীম ওসমান :
শামীম ওসমানের বেশিরভাগ ক্যাডারদেরই পদ ছিলোনা। সেসব নেতাদের নিয়ে অপকর্ম করাতেন শামীম ওসমান। পদ ছাড়া এসব নেতা, পাতি নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই তল্লা, ইসদাইর, মাসদাইর, পঞ্চবটি, কাশিপুর, গাবতলী এলাকার। আজমেরী ওসমানের ক্যাডার ইসদাইরের নাসির, পাগলা হামিদ, লিমন, কাজী আমির, মনির, ইফতি, সনেট, পাতি নেতা জনি, শাকিল, রুপু, সবুজ এদেরও নামসর্বস্ব পদ ছিলো।
তবে একটা বিশাল ক্যাডার নিয়ন্ত্রণ করতেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল। এখন পদ নাই নামধারী বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ কর্মীরা মিলে পুরনো কুকর্মেই যুক্ত রয়েছেন। কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশের নামে পরিচালিত অর্ধশতর বেশি সংগঠনের মাধ্যমে বিসিক এলাকায় যারা চাঁদাবাজি চালাতো, তারাও বিএনপির নাম সর্বোস্ব নেতাদের সাথে মিশে গিয়ে কুকর্মে ব্যস্ত।
৫ আগস্টের পর ডিসেম্বরে নতুন তালিকা :
ওসমানদের বিদায়ের পর বিসিক ও তৎসংলগ্ন এলাকার ঝুট ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঝারি পদের নেতাদের দ্বারস্থ হন মোহাম্মদ হাতেম। তবে সর্বশেষ নানা ঘটনায় বিসিকের আগের কুকীর্তির বিষয়ে অনেকে মুখ খোলায় এবার বিএনপির মূলদলসহ অঙ্গসংগঠনের অন্যান্য নেতাদের সংমিশ্রনে ভাগ-বাটোয়ারার নতুন তালিকা করেছেন মোহাম্মদ হাতেম।
তবে নতুন তালিকায় পুরনো তালিকার অনেকে বাদ পড়ে যাওয়ায় গত ১৫ বছরের নানা কুকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তারা। তারা বলছেন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে মোহাম্মদ হাতেম বিসিকের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের নতুন ভাগবাটোয়ার তালিকা নিয়ে অনেকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছেন। এতে বিএনপির অনেক নেতার ভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, শৃঙ্খলা ফেরানো :
ছাত্রজনতার বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট যেই দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেটি যেন কোন দুর্বৃত্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধুলিস্যাত না হয়ে যায়। যেহুতু গোটা এলাকাটা একটি ব্যবসায়ীক জোন।
তাই সেখানে ব্যবসায়িদের নিরাপত্তা এবং প্রতিষ্ঠানএলাকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের বিশেষ নজরদারী প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বিকেএমইএ, চেম্বার অব কমার্সসহ বাণিজ্যমন্ত্রণালয়েরও বিশেষ তদারকি করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাতে কোন দুর্বাত্তায়ন না হয়, সেব্যাপারটি কঠোরভাবে দমনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রাইফেল ক্লাবের ১৪২ অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার মাত্র ৪টি :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব থেকে সর্বমোট ১৪২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি লুট করা হয়েছে। এরমধ্যে লুট হওয়া এতো অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র চারটি অস্ত্র। ১৩ আগস্ট পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকা দু’টি বস্তা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব- ১১)।
ঘটনাস্থলে পৌছে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস-ই নিশ্চিত করেন বস্তায় থাকা অস্ত্রগুলো সব রাইফেল ক্লাবের। নারায়ণগঞ্জের প্রচার সংখ্যায় শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক ‘যুগের চিন্তা’ পত্রিকার শীর্ষ সংবাদ ছিল: ‘রাইফেল ক্লাবের অস্ত্র লুটের নেপথ্য নায়ক কাজল’। তবে চারমাস পেরিয়ে গেলেও শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, রিয়াদ-রাফেলসহ ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন। সূত্র জানিয়েছে, ইসদার, মাসদাইর, পঞ্চবটি, কাশিপুর, তল্লা, খানপুর এলাকার আশেপাশের ছাত্রলীগ নেতাদের হাতেই রয়েছে এসব অস্ত্র।
রাইফেল ক্লাবের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে যা বলছে প্রশাসন :
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন তরিকুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করতেছি। সেই সাথে আমরা তৎপর আছি। মাঝে মধ্যে ব্লকরেইড অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। পাশা পাশি আমাদের সোর্স কাজ করতেছে। আমরা সর্বাত্বক চেষ্টা করছি উদ্ধারের জন্য। আশা করি উদ্ধার হয়ে যাবে।’
ফতুল্লা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুরো জেলার সাথে ফতুল্লার প্রতিটি এলাকায় নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। আমরাও এগুলো উদ্ধারের জন্য কাজ করছি।’ এন. হুসেইন রনী /জেসি
- সোনারগাঁয়ে সমন্বয়কদের গাড়িতে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
- ছেলেকে পানিতে ফেলে হত্যার পর পুলিশের কাছে ধরা দিল বাবা
- গত সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলতে পারেনি মানুষ : দিদার
- না.গঞ্জ জেলা শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের কমিটি অনুমোদন
- সাকসেস হিউম্যান রাইটস সোসাইটির বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপন
- বিপিজেএ জেলা শাখার নব নির্বাচিত সভাপতি এনামুল, সম্পাদক সহিদ
- মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রশাসনের অভিযান
- সয়াবিন লিটারে বেড়েছে ৮ টাকা, দোকানে ১৫
- দীর্ঘদিন পর না.গঞ্জ ক্লাবে ভোটের পরিবেশ : জুয়েল
- ওসমান পরিবারের দালাল ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি হচ্ছে : এড. টিপু
- জুলাইয়ের বিপ্লবীকন্যাদের কথা শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা
- সদর উপজেলার ভূমি অফিসে সেবাগ্রহিতারা ভোগান্তিতে
- বাবার ঝুট বণ্টনের টোকেনে ছেলে নেন পার্সেন্টেজ!
- রানার পরিবহন সেক্টরের ক্রাইম পার্টনার সুমন-রুহুল
- সমালোচনায় মোহাম্মদ আলী
- না.গঞ্জ ক্লাব নির্বাচনে লড়াইয়ে সোলায়মান-জুয়েল
- বাণিজ্য উপদেষ্টা বরাবর বিকেএমইএ’র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ
- বিজয় দিবসের মেলা উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উপ-কমিটির সভা
- বিকেএমইএ এখনো সেলিম ওসমানের নির্দেশে চলছে : এড. মাসুম
- প্রশাসনের হস্তক্ষেপে লেংটা মেলা নিয়ে দুই পক্ষের কার্যক্রম স্থগিত
- মেঘনা নদীতে পুলিশ দেখে পালালো নৌ ছিনতাইকারীরা, স্পিড বোট জব্দ
- গণঅভ্যুত্থানের থিমে সাজানো হচ্ছে বাণিজ্যমেলা,টিকিট মিলবে অনলাইনেও
- লক্ষ্যার মরণদশা রুখবে কে?
- সোনারগাঁও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম গ্রেপ্তার
- সেই মোহাম্মদ আলী এখন গডফাদার ওসমান পরিবারের দালাল: এড. মাসুম
- ওসমানদের পালাতে সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে : তরিকুল সুজন
- সাইনবোর্ড দখলে নিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা
- ঝুট সেক্টর থেকে সব বাণিজ্যিক জায়গায় এখনো ওসমান দোসররা
- ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের অপসারণ দাবি
- কোর্ট পুলিশে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের হয়রানি!
- ফতুল্লার বিসিক যেন আরেক কেজিএফ
- ঝুট ব্যবসায়ী হাতেমের অপসারণ দাবি
- সেলিম ওসমানের নির্দেশে সভাপতি হাতেম
- বাণিজ্য উপদেষ্টা বরাবর বিকেএমইএ’র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ
- পতনের পর এখনো টাকার ভাগ পান শামীম ওসমান-অয়ন ওসমান
- ওসমানদের জিম্মি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না.গঞ্জ ক্লাব
- না.গঞ্জ ক্লাব নির্বাচনে লড়াইয়ে সোলায়মান-জুয়েল
- যুবদলের রনির কাণ্ডে বিস্মিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ
- সমালোচনায় মোহাম্মদ আলী
- বিকেএমইএ’র ইজিএমে হাতেমের স্ট্যান্টবাজি
- নেতার নামে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ভাই-ভাগিনা
- সেই মোহাম্মদ আলী এখন গডফাদার ওসমান পরিবারের দালাল: এড. মাসুম
- সাইনবোর্ড দখলে নিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা
- বিএনপি নেতা নজু মাদবরের অপকর্মে অতিষ্ঠ কুতুবপুরবাসী
- রানার পরিবহন সেক্টরের ক্রাইম পার্টনার সুমন-রুহুল
- বাবার ঝুট বণ্টনের টোকেনে ছেলে নেন পার্সেন্টেজ!
- ওসমানদের পালাতে সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে : তরিকুল সুজন
- ঝুট সেক্টর থেকে সব বাণিজ্যিক জায়গায় এখনো ওসমান দোসররা
- দোকানে মালামাল ফুটপাতে চালান, চাঁদাবাজি তিনগুন
- কোর্ট পুলিশে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের হয়রানি!
- আসছে ২০০ টাকার নোট
- সৌদি নারীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশি পুরুষ !
- প্রতি মিনিটে কী ঘটেছে মানব দেহে ?
- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরিবার : ৩৯ জন স্ত্রী, মোট সদস্য ১৮১
- পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী !
- লক্ষণেই বুঝে নিন আপনি অধঃপতনের দিকে যাচ্ছেন
- সুন্দরীরা পুরুষের হৃদরোগের কারণ!
- শহরে নতুন আলো (ভিডিও)
- সাপের পেট থেকে বেরিয়ে আসে অক্ষত দেহে !
- ঈদে সালামি বেশি আদায়ের কৌশল !
- একটি লুঙ্গির দাম ৭ হাজার টাকা !
- একা থাকার যত সুবিধা!
- আলিঙ্গন করার চাকরি, প্রতি ঘণ্টায় ৫৮০০ টাকা !
- ১০ নারীর ৭ জনই পুরুষকে ধোঁকা দেয়!
- `টয়লেট পেপার` লিখলে আসছে পাকিস্তানের পতাকা !