ফের আলোচনায় বিএনপির কমিটি

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের শিকার হয়ে কোনঠাসা অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট পটপরিবর্তনের পর মুক্ত বাতাসে উড়তে শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বর্তমানে নেই কোন মামলা, হামলার ভয় যাকে ঘিরে নিবিঘ্নে দলীয় সকল প্রকারের কার্যক্রম গোছাতে পারছে। এদিকে বিএনপির রাজনীতিকে অনেকটাই গতিশীল ও পরিচ্ছন্ন করতে প্রতিযোগীতামূলক ও গতিশীল করার লক্ষে এবার সম্মেলনের মাধ্যমে সারা দেশে তৃণমূলের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করবে বিএনপি। সেই লক্ষ্যে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে তৃণমূলের সব কমিটি পুনর্গঠন শেষ করতে চায় দলটি। এ বিষয়ে গত সোমবার দলের শীর্ষ নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। এদিকে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আন্দোলন-কর্মসূচির চাপ না থাকলেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সেজন্য নানা কৌশলে এগোচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। তৃণমূলে ব্যাপকভাবে ধানের শীষের প্রচারণা ও গণসংযোগ করতে বার বারই নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর পাশাপাশি বিএনপির বর্তমান ও অতীত তুলে ধরে বলা হয়েছে কর্মী সভা ও বর্ধিত সভা করার নির্দেশ থাকলে ও নারায়ণগঞ্জে তা হতে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। 

গত ২ বছর যাবৎ কমিটি নিয়েই জেলা বিএনপি সম্মেলন করলে হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। আর মহানগর বিএনপি এখনো করতে পারেনি সম্মেলন ও কমিটি পূর্ণাঙ্গ। এ ছাড়া ও মহানগরের প্রত্যেকটি থানা ও উপজেলা বিএনপির কমিটি সম্মেলনে গঠনে হলে ও হয়নি পূর্ণাঙ্গ। এদিকে বর্তমানে জেলা বিএনপির কমিটিতে সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। তা ছাড়া জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে অনেকটাই যোগ্যতা রাখেন এই নেতা। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বিগত দিন থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। একই সাথে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি অনেকটাই গতিশীল এ ছাড়া এদের নেতৃত্বেই সর্ব প্রথম কম সময়ের ইউনিট কমিটি তথা রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন লক্ষ্য করা গেছে বিগত দিন এবং বর্তমানেও জেলা থেকে বেশি দলীয় কর্মসূচি পালন করতে হয় মহানগর বিএনপিকে। আর যা তারা যথারীতি মোতাবেক পালন করে আসছে। ইতিমধ্যে ফে আলোচনায় উঠে এসেছে বিএনপির কমিটি গঠন। ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর মহানগরসহ আরো বেশ কয়েকটি জেলা ও মহানগরের ভেঙে দেওয়া কমিটি গঠন হয়েছে গত কয়েকদিনে। যাকে ঘিরে ধারনা ও নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভাষ্য অনুযায়ী আলোচনা চলছে যে, চলতি মাসে বা শীগ্রই আসতে পারে জেলা ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

এদিকে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দল পুনর্গঠনে মনোযোগ দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বেশি জড়িত থাকায় সেই কাজ শেষ করতে পারেনি দলটি। এ ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করে বিএনপি। ২০২১/২০২২ সালে বেশিরভাগ শাখায় আংশিক এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে যার অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। দীর্ঘ এই সময়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি হালনাগাদও করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০১৯ সালে গঠিত কমিটি ভেঙে গত ৪ নভেম্বর দশটি জেলা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ এবং আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। তার মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক এবং চট্টগ্রাম মহানগর, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এবং সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। একই দিনে মৌলভীবাজার জেলা, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, ময়ময়নসিংহ দক্ষিণ এবং শেরপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদিত হয়েছে। 

সেই সূত্র ধরে বোঝা যাচ্ছে শীগ্রই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটিকে রাজপথে গতিশীল করে জেলাতে একটি পদে রদবদল দিয়েই কমিটির আলোচনা চলমান। এদিকে বর্তমানে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপিতে সাধারণ সম্পাদক বিতর্কিত গোলাম ফারুক খোকনের পরিবর্তে যোগ্য সাধারণ সম্পাদক ও মহানগরে বর্তমান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে যোগ্য হিসেবে বলছেন মাঠ পর্যায়ের নেতকার্মীরা। যাকে ঘিরে এই কমিটিকে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ করে বর্তমান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির কমিটিতে পূর্ণাঙ্গ করে সদস্য বাড়ালে আগামীতে মহানগর বিএনপি অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। 

 তা ছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রিয় সহকর্মী, শুভেচ্ছা রইল। নির্দেশক্রমে জানাচ্ছি যে, আপনার বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, থানা কমিটি থেকে শুরু করে মহানগর ও জেলা কমিটি সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ গঠন সমাপ্ত করতে হবে। এই পত্র প্রাপ্তির পর আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদ্বয় এবং মহানগর ও জেলার সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিবগণের সঙ্গে বৈঠক করে অতিসত্বর সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।’ যাকে ঘিরে কমিটি প্রসঙ্গে ফের আলোচনা চলে আসায় নড়ে চড়ে বসেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। তা ছাড়া বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে নিয়ে একটি মহল করছে নানা ষড়যন্ত্র যা নিয়ে তাকে পদ থেকে বিতাড়িত করতে চাইছে কিন্তু বর্তমানে গিয়াসবিহীন জেলা বিএনপির ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত যাকে ঘিরে গিয়াস উদ্দিনকে কোনভাবেই মাইনাস করা সম্ভব না, বলছে তৃণমূল। এদিকে বর্তমানে রূপগঞ্জ জুড়ে ব্যাপক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরেছে কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। যা অনেকটাই প্রকাশ্যে কিছুদিন পূর্বে বসুন্ধরা কাণ্ডে তাকে দল থেকে বহিস্কার করার কথা উঠলে উনি কেন্দ্রে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ ও জোরদার লবিংয়ের মাধ্যমে পদে বহাল থাকলে ও শীগ্রই তিনি পদচুত্য হতে পারে বলছে তৃণমূল।