রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

বর্ষার আগেই বেহাল দশা ফতুল্লার

সাইমুন ইসলাম

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২৩  

 

# প্রতিবছরই এই অভিশাপ নিয়ে আক্ষেপ স্থানীয়দের
# আশা দেন জনপ্রতিনিধিরা, নিরুপায় সিস্টেমে

 

 

আকাশ যখন কালো মেঘের ঘনঘটায় ছেয়ে যায় চারদিক, ঠিক তখন আকাশের পাশাপাশি ফতুল্লাবাসীর মুখেও দুশ্চিন্তার কালো ছাপ স্পষ্ট হয়। আকাশ যখন তার কালো রুপ দেখিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরে ফতুল্লার জনপদে তখন বৃষ্টি শেষে আকাশ ঠিকই আগের মতো উজ্জ্বল হয়ে যায় কিন্তু উজ্জ্বল হয়না ফতুল্লাবাসীর মুখ। কারণ তারা জানে এই বৃষ্টি তাদের ভোগান্তী কতটা বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন তার আষাঢ় গল্পে লিখেছিলেন নীল নবঘনে, আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।  

 

সে লাইনের মতো বৃষ্টি আসলে খুব দরকার না পরলে কেউ বাইরে যেতে চায়না। তবে অসংগতি হলো বৃষ্টি শেষ হলেও বাইরে যাওয়ার জোঁ থাকেনা এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের। কারন সামান্য বৃষ্টি হলেই এ জনপদ তলিয়ে যায় ড্রেনের পানিতে। আর এই ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানির সংস্পর্শে আসতে চায়না কেউ। তবে বাধ্য হয়ে কাজের সুবাদে তাদের বাহিরে বের হতে হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতা আর কাদামাটি বহুল সড়কে ভোগান্তী যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা। বর্ষা মৌসুমে এ ভোগান্তী  দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকে এবং এটা বেড়ে যায় বহু গুন।

 

প্রতিবারের মতো এবারো ফতুল্লায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে যাচ্ছে কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। বর্ষা না আসতেই গোটা ফতুল্লার ভঙ্গুর দৃশ্য ফুটে উঠেছে। ১ এপ্রিল (শনিবার) ফতুল্লার কয়েকটি সড়ক ঘুরে বেশ কয়েকটি সড়ককে তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ফতুল্লা রেললাইন থেকে পিলকুনি ও তক্কারমাঠমুখী সড়ক, দাপা থেকে জাকির মেম্বারের বাড়ি হয়ে ফতুল্লা রেললাইন সড়ক, পঞ্চবটি থেকে মডার্ন হাউজিং হয়ে লালপুর সড়কটি অন্যতম। এ সড়কগুলো ছাড়াও বেশ কয়েকটি সড়কে আংশিক জলাবদ্ধতা দৃশ্যমান হয়েছে। তবে বর্ষা আসলে ইসদাইর, টাগারপার, লালপুর, ফতুল্লা রেলষ্টেশন সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

 

এতে করে ব্যাপক উৎকন্ঠায় দিন পার করছে ফতুল্লাবাসী। কারন সামান্য এক দিনের বৃষ্টিতেই বেহাল দশা সড়কে সড়কে, তবে ভরা বর্ষায় কতটা নাজুক হবে পরিস্থিতি সেসব ভেবে দুশ্চিন্তায় সবাই। অথচ এই ফতুল্লার অভিবাবক হিসেবে রয়েছেন প্রভাবশালী সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। তিনি ঘোষনা দিয়েছিলেন ফতুল্লাকে নতুন বউ এর মতো সাজাবেন। কিন্তু নতুন বউ তো দুরের কথা, ফতুল্লার অবস্থা শ্রীহীন। জলাবদ্ধতা ছাড়াও আরো বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত গোটা ফতুল্লা।

 

বছরের পর বছর এমন অবস্থা চলমান থাকলেও তা থেকে উত্তরনের কোনো পথ বের করেনি জনপ্রতিনিধিরা। এ নিয়ে যেনো ভাবার কেউ নেই। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে ফতুল্লা এলাকাবাসীর মধ্যে। তবে বর্ষা মৌসুম কে সামনে রেখে এমন পরিস্থিতি উত্তরনে কোনো সুসংবাদ দিতে পারেনি ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন। সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, বর্তমানে জমে থাকা পানি পাম্পের মাধ্যমে অপসারণ করা হচ্ছে।

 

তবে এতে সবচেয়ে বড় অসংগতি হলো প্রচুর পরিমানে বিদ্যুত বিল আসে যা ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক পরিশোধ করা হয়তো বেশিদিন সম্ভব হবেনা। এ বক্তব্যের দ্বারা এ বর্ষায় যে অতিমাত্রায় ভোগান্তি অপেক্ষা করছে ফতুল্লাবাসীর জন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তিনি এ সময় ফতুল্লাকে জলাবদ্ধতা নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য এমপি শামীম ওসমান সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।

 

এ ব্যাপারে ফতুল্লা ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আব্দুল আউয়াল যুগের চিন্তাকে জানান, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমার আওতাধীন এরিয়াতে ৭ বার বড় খালগুলো পরিষ্কার করিয়েছি। সর্বশেষ ২ মাস আগেও বড় খাল পরিষ্কার করিয়েছি। ছোট ছোট খাল ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ড্রেন গুলো খোলা অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর উপর ঢাকনা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশই কমে যাবে।

 

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান এর সাথে কথা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সচেতনতা গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কয়েকদফা সচেতনতামূলক আলোচনা সভা করা হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে ফতুল্লা ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. হাসমত আলী জানান, আমার আওতাধীন রাস্তাটি নিচু প্রকৃতির। এটার সাময়িক সমাধান হিসেবে পাম্প ব্যবহার করে পানি অপসারন করছি। তবে স্থায়ী সমাধান হিসেবে এলজিইডি এবং জেলা পরিষদ বরাবর রাস্তাটি সংস্কারের আবেদন করেছি।

 

ফতুল্লার যখন এই বেহাল দশা তখন বক্তাবলীর কানাইগড়ে একটি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান প্রধান অথিতির বক্তব্যে বলেন, তিনি বক্তাবলীকে নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলবেন। তবে ফতুল্লাবাসী বলছে আগে ফতুল্লাকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলুক। পড়ে না হয় বক্তাবলীকে আধুনিকায়ন করুক। এ অঞ্চলের মানুষ এ জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী ভাবে মুক্তি চায়।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর