শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

বাংলাদেশের মানুষেরা পৃথিবীর সেরা : পর্তুগিজ এমপি

প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৮  

সাক্ষাৎকার (যুগের চিন্তা ২৪ ) : পর্তুগাল-বাংলাদেশের সম্পর্ক বহু পুরনো। পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এসেছিল ষষ্ঠদশ শতকে। ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পর্তুগিজ নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতেন। তৎকালীন তারা চট্টগ্রামের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তবে মোগল এবং আরাকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশিদিন সেই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি পর্তুগিজরা। সপ্তদশ শতকের মধ্যেই তারা চট্টগ্রামের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। যদিও এখনও পর্যন্ত তৎকালীন পর্তুগিজ বংশধরেরা চট্টগ্রামের পুরাতন অংশে বসবাস করছেন।

 

পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করে। পর্তুগিজ ধর্মযাজক ম্যানুয়েল দ্য আসসুম্প সাঁও প্রথম বাংলা ভাষার সেই ব্যাকরণ রচনা করেন। সুদীর্ঘ পথচলায় পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান।


দুদেশীয় সম্পর্ক অত্যন্ত প্রাচীন হলেও বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক কার্যক্রম আশানুরুপ প্রসারিত হয়নি। যদিও ২০১০ সালে দ্বৈত-কর পরিহার করতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথা বলা হলেও এখনও পর্যন্ত দুদেশের বাণিজ্য তেমন প্রসারিত হয়নি।

 

ষষ্ঠদশ শতকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পর্তুগিজ নাবিকরা বাংলাদেশে এলেও বাংলাদেশিদের পর্তুগালে আগমন শুরু ১৯৯১ সালের পর থেকে। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে পর্তুগালে বাড়তে থাকে বাংলাদেশিদের সংখ্যা। পর্তুগালে বসবাসরত বেশিরভাগ বাংলাদেশিই আবার কোনো না কোনো ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত। অনেকেই গল্পের ছলে বলে থাকেন ষষ্ঠদশ শতকে পর্তুগিজরা আমাদের দেশে ব্যবসা করতে গিয়েছিলেন আর বিংশ শতাব্দীতে আমরা তাদের দেশে ব্যবসা করতে আসছি।

 

পর্তুগাল-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, পর্তুগালে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং অভিবাসন বিষয়ে সরকারের ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি কথা হয়েছে পর্তুগালের সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল সোশ্যালিস্ট পার্টির পোর্তো শহর থেকে নির্বাচিত এমপি থিয়াগো বারবোজা রিবেইরোর সাথে। পর্তুগালের সরকারি দল সোশ্যালিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারণীর অন্যতম সদস্য তিনি। এছাড়াও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগে ১৮ জুলাই (বুধবার) ছিল পর্তুগালের সংসদ অধিবেশনের শেষ দিন। অধিবেশন শেষে সংসদ ভবনের ‘সালা লিসবন’ হলে আলোচনায় পর্তুগালের বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রাণের দাবি বাংলাদেশে পর্তুগালের স্থায়ী দূতাবাস খোলার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। 

হাই মি. থিয়াগো! কেমন আছেন?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : আমি ভালো আছি। এখানে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 

সাম্প্রতিককালে পর্তুগালের অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণ কী বলে মনে করেন?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : পর্তুগালের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের সরকারের যথাযথ উদ্যোগগুলো অন্যতম। এর মধ্যে পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন ছাড়াও উৎপাদন নির্ভর নানা পদক্ষেপ রয়েছে।

 

পর্তুগালে বিগত দিনে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এটার কারণ কী? আপনি কি মনে করেন পর্তুগাল বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে যথাযত উদ্যোগ নিতে পেরেছে?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : পর্তুগাল বর্তমানে ইউরোপ তথা পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপ্রিয় দেশ। আমাদের আবহাওয়া চমৎকার এবং আমাদের প্রাকৃতিক সংস্থানও রয়েছে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে আমাদের সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

 

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। অভিবাসী নিয়ে পর্তুগালের ভাবনা কী? আপনি কি মনে করেন বর্তমান সরকার অভিবাসীবান্ধব?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : আমাদের দল পর্তুগিজ সোশ্যালিস্ট পার্টি ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসীদের পক্ষে উদার একটি দল। অভিবাসীদের ব্যাপারে আমাদের দল সব সময় নমনীয় এবং ২০০৭ সালের অভিবাসী আইন আমাদের দলের অবদান। মানবিক দিক বিবেচনায় সোশ্যালিস্ট পার্টি সবসময় অভিবাসীদের সমর্থন করে আসছে। দেশীয় এবং বৈদেশিক সব জরিপ বলছে, আমরা ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অভিবাসীদের সবচেয়ে ভালোভাবে গ্রহণ করি। গত কিছু দিন আগে ইতালি ও স্পেন নৌকাভর্তি অভিবাসীদের ফিরিয়ে দিলেও আমরা তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার পক্ষে।


পর্তুগালে অনিয়মিত অভিবাসী যাদের রেসিডেন্স নেই কিন্তু সোশ্যাল সিকিউরিটিতে ট্যাক্স পে করছেন, তাদের ব্যাপারে সরকারের ভাবনা কী?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : আমরা তাদের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ একটি প্রক্রিয়া তৈরি করছি। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যারা পর্তুগালে বসবাস করছেন এবং সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখছেন, তাদের জন্য অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো সহজ করতে আমরা একমত। সম্ভবত মাস কয়েকের মধ্যে সংসদ থেকে বিস্তারিত আকারে এটি পাস হয়ে আসবে।

 

বাংলাদেশি অভিবাসীদের ব্যপারে আপনার ধারণা কী?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : বাংলাদেশের মানুষেরা সেরা মানুষ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি পর্তুগালের অভিবাসী কমিউনিটিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ্ঠ। আমার ব্যক্তিগতভাবে বহু বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছে এবং একসাথে কাজ করেছি। বাংলাদেশের মানুষেরা সৎ, পরিশ্রমী ও অন্যদের ব্যাপারে যতœবান বলে আমি মনে করি। নিজেদের কমিউনিটির উন্নয়নেও বাংলাদেশিরা বেশ আন্তরিক। এক কথায় বলতে গেলে ‘বাংলাদেশ ইজ দ্য বেস্ট’। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশিরা পর্তুগালে আসবেন এবং পর্তুগাল হবে তাদের সেকেন্ড হোম।

 

বাংলাদেশে পর্তুগাল দূতাবাস না থাকার কারণে বাংলাদেশিরা অনেক সমস্যায় পড়েন। এ ব্যপারে আপনার মন্তব্য কী?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : বাংলাদেশে পর্তুগালের স্থায়ী দূতাবাস না থাকার কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন বলে আমি বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। বাংলাদেশে পর্তুগালের স্থায়ী দূতাবাস করার ব্যাপারে আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশ কমিউনিটিসহ আরও আলোচনা চলবে এ ব্যাপারে। আমাদের বিদেশে বেশ কিছু নতুন দূতাবাস করার কথা রয়েছে। আশা করছি, বাংলাদেশে দূতাবাস করার ব্যাপারে আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।

 

সুযোগ পেলে বাংলাদেশ ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : অবশ্যই। আমি আমার এখানকার বাংলাদেশি বন্ধুদের নিয়ে বাংলাদেশ ঘুরতে যেতে চাই। বাংলাদেশের কথা শুনেছি, অনেক সুন্দর দেশ।

 

বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

 

থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো : পর্তুগাল সবসময় নতুনদের স্বাগত জানায়। বর্তমান সময়ের মতো ভবিষ্যতেও বাংলাদেশিরা পর্তুগালে আসবেন। কাজ, পড়াশুনা, বসবাসের জন্য পর্তুগাল হবে তাদের সেকেন্ড হোম।

 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাঈম হাসান পাভেল।

এই বিভাগের আরো খবর