বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

বিএনপির জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবে একমত জামায়াত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২৪  


দেশের স্বার্থে বিএনপি যে জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাব দিয়েছে, তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী একমত। এমনটাই জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একমত হয়েছি, দেশের সকল মানুষকে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।’

 

 

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এতে নেতৃত্ব দেন। বৈঠক শেষে যমুনার গেটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠক চলে এক ঘণ্টার বেশি।

 


জামায়াতের আমির বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় আমরা একমত হয়েছি, দেশের সকল মানুষকে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার দলমত-বর্ণ–নির্বিশেষে। মতবিরোধ থাকবে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাই যেন একমত থাকতে পারি, সেই আহ্বান আমি দেশবাসীর প্রতি জানাই।’

 


বিএনপি জাতীয় ঐক্যর কথা বলেছে ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছে—আপনারা এই বিষয়ে একমত কি না?—এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যর কথা অবশ্যই এসেছে। উদ্বেগ নিয়ে আমরা আলোচনায় করেছি। সেই উদ্বেগ ওই অর্থে নয় যে দেশ মনে হয় গোল্লায় গেছে। বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে শান্তিশৃঙ্খলা কারা বিঘ্নিত করতে—সেটা চিহ্নিত করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় ঐক্যর মাধ্যমের মোকাবিলা করতে হবে।’

 


জামায়াতের আমির বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী দিনে দেশ কীভাবে শান্তিশৃঙ্খলার মধ্যে থেকে একটা কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে আগাতে পারে—সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে আমাদের সবার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য কীভাবে করা যায়, প্রশাসনে কীভাবে গতি আনা যায়—এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

 


নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। কিন্তু আমরা যেটা আগে বলেছি, নির্দিষ্ট কিছু সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি আগেই জানিয়েছি।’

 


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যর যে ঊর্ধ্বগতি—যার কারণে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে—এটাকে লাঘব করার জন্য, মানুষের সাধ্যের মধ্য কীভাবে আনা যায়—সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনে রমজান আসছে। এটাকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, এসব বিষয় নিয়ে আমরা পরামর্শ করেছি।’

 


বিভিন্ন মহল থেকে ইসকন নিষিদ্ধের কথা উঠেছে—এ বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, ‘শুধু ইসকন না, যারা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, তাদের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিতে হবে।’

 


বৈঠকের বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘দুটো দল (বিএনপি-জামায়াত) থেকে আমরা জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বক্তব্য পেয়েছি। বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, যেকোনো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও উগ্রতা রুখে দেওয়া যায়, সেই সহযোগিতা প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চেয়েছেন।’

 


মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘দুটো দলই তাঁকে (প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস) কী কী করা গেলে আরও ইতিবাচক হতে পারে—এমন প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে, তারা সরকারকে আগের মতো সহযোগিতা করার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে বাংলাদেশে যাতে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা, অন্য কোনো ধরনের উন্মত্তা তৈরি না হয়—সেটার জন্য সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলছি।’

 


প্রধান উপদেষ্টার কাছে রাজনৈতিক দলের দেওয়া প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম বলেন, ‘তাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে, কমিউনিকেশন গ্যাপ দূর করার জন্য অংশীজনদের সঙ্গে বসা। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সামনের দিনেও যোগাযোগ করব। যাতে জাতীয় ঐক্য, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায়, সেই পরামর্শ সবাই দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সবাই আন্তরিক।’     এন. হুসেইন রনী  /জেসি