বৃহস্পতিবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১

বিকেএমইএ এখনো সেলিম ওসমানের নির্দেশে চলছে : এড. মাসুম  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪  

 


# সেই মোহাম্মদ আলী এখন গডফাদার ওসমান পরিবারের দালাল
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মানবাধিকারকর্মী এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, গত ১৪ বছর নারায়ণগঞ্জকে শামীম ওসমান ও তাদের দোসররা জিম্মি করে রেখেছিলেন। এই শামীম ওসমানের পেত্মাতাদের অনেকেই এখনো নারায়ণগঞ্জে রয়েছেন, আর বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

 

আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠন বিকেএমইএ বিগত দিনগুলোর মতোই সেলিম ওসমানের নির্দেশে চলছে। এই অবস্থাতে আর চলতে দেওয়া যেতে পারে না। বিগত দিনে সারা নারায়ণগঞ্জে সেই ওসমানীয় তাণ্ডব দেখেছি আমরা এখন ওসমানীয় কুটনীতি দেখছি। সেই কুটনীতির শিকার হচ্ছে প্রশাসনও।

 


গতকাল রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪১ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

 


তিনি বলেন, আমাদের আর কত বার বলতে হবে আমরা ত্বকী হত্যার বিচার চাই। আমরা স্বৈরাচারের আমলে ১১ বছর যাবৎ দাবী করে আসছি ত্বকী হত্যাসহ সকল কিশোর হত্যার বিচার চাই। চিহ্নিত মহল কর্তৃক নারায়ণগঞ্জে যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তাদের সকলের বিচার চাই। কিন্তু আমরা শুধু বলেই যাচ্ছি, কিন্তু কোন সুরাহ পাচ্ছি না।

 

 

স্বৈরাচার আজকে বিদায় নিয়েছে ৩ মাসের ও বেশি সময় হয়ে গেল। এই তিনমাসের মধ্যে আমাদের প্রত্যাশা ছিলো ত্বকী হত্যার চার্জশীট আদালতে দাখিল হবে, সুষ্ঠ তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করবে কিন্তু আমরা সেরকম কোন লক্ষণ পাচ্ছি না।

 


তিনি আরো বলেন, শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে চলে গেছে। তার বিরুদ্ধে এখনো দূর্নীতির একটা মামলা হয় না। কেন হয় নাই কারণ হলো তাদের দোসরা প্রেত্মাতারা এখনো রয়েছে। এদিকে রাইফেল ক্লাব থেকে কতগুলো অস্ত্র লুট হয়েছে এখনো তা উদ্ধার হয় নাই। এই অস্ত্রগুলো নিয়ে নারায়ণগঞ্জে সেই ওসমান ও তাদের দোসররা হামলা করেছিলেন।

 


তিনি বলেন, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের দোসরদের শাস্তি চাই। আমি দেখেছি গত ১০ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জে একজন মানুষ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানসহ ওসমান পরিবারের সাথে থেকে রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতা সেজে তাদেরকে সহযোগীতা করেছে তাদের সকল অন্যায় অপকর্মের উপদেষ্টা হয়ে কাজ করেছে।

 

 

এমনকি সকল নির্বাচনে বিভিন্ন্ সমিতি, বিভিন্ন ক্লাবে, চেম্বার অব কর্মাসের নির্বাচনে, বিকেএমইএ এর নির্বাচনে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু এখন আমরা দেখলাম স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে স্বৈরাচারের দোসর এই ব্যাক্তিটি এখনো নারায়ণগঞ্জে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আপনারা জানেন এই ব্যক্তিটি হচ্ছে মোহাম্মদ আলী। মোহাম্মদ আলী কি করেছে তা আপনারা জানেন।

 

 

ওসমান পরিবারের হয়ে মোাহম্মদ আলী কি না করেছে, ওসমান পরিবারের দালালী করেছে । এরশাদের সময় তার পার্টি করেছে, বিএনপির সময় এমপি হয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছর ওসমান পরিবারের উপদেষ্টা হয়ে নান অপকর্মও করেছে। ত্বকী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে সেই মোহাম্মদ আলী উল্টো উস্কানী দিয়েছে ওসমান পরিবারকে। সেই মোহাম্মদ আলী এখন ওসমান পরিবারের পক্ষে নানা দৌড়ঝাপ করছে।

 

 

পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টাও করছে । একই সাথে ওসমান পরিবারের সাম্রাজ্য রক্ষা করতে মোহাম্মদ আলী দৌড়ঝাপ করছে। আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা খতিয়ে দেখেন এই লোকটি ওসমান পরিবারের সমস্ত কিছু এই মোহাম্মদ আলী রক্ষা করছে।

 


তিনি বলেন, এই ওসমান পরিবার পালিয়ে যায় কী ভাবে ? ওসমান পরিবারকে সহায়তা করে যাচ্ছে । শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অন্তর্র্বতী কালীন সরকারের কাছ ত্বকী সহ সকল হত্যার বিচার চাই। সেই ওসমান পরিবারের দালালরা এখনো বহাল তবিয়তে তাদের গ্রেফতার চাই, বিচার চাই।‘

 


তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পূর্বে দেখলাম ওসমান পরিবারের ৮টি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে আর রাইফেল ক্লাবসহ তাদের কাছে থাকা সেই বেআইনী অস্ত্রগুলো কোথায়। সেই বেআইনী অস্ত্রগুলো নিয়ে তো তারা বিমানে উঠে দেশ ছাড়ে নাই। তাহলে সেগুলো কোথায় সেগুলো উদ্ধারে তো আমরা প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখছি না। র‌্যাবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা অনেক বড় বড় অপারেশন করেন।

 

 

তাহলে এখনো আজমেরী ওসমানকে তো গ্রেফতার করতে দেখলাম না। তা ছাড়া অন্যান্য আসামীদের তো গ্রেফতার করতে দেখলাম না। সেই র‌্যাবকে আবারো বলছি আপনারা ঘৃনার পাত্র হবেন না। আপনারা সুষ্ঠভাবে তদন্ত করুন আর ত্বকী হত্যাসহ সকল হত্যার আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করুন। আসামীরা আপনাদের আশেপাশেই থাকতে পারে, এটা আমাদের সন্দেহ। বাংলাদেশে পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তার পদে আজমেরী ওসমানের এক ভগ্নিপ্রতি রয়েছে। তাকে একটু নজরদারিতে রেখে জিজ্ঞেস করুন কোথায় তাদেরকে লুকিয়ে রেখেছেন সেটা আপনারা দেখুন।

 


তিনি বলেন, এদিকে শামীম ওসমানের আমলে যে হকাররা যানজটের সৃষ্টি করেছে তারা এখনো আছে। তাহলে আজকে কারা এদেরকে লালন পালন করছে। নারায়ণগঞ্জে আমরা প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করি না। প্রশাসন শুধু শুনে আর হ্যাঁ বলে এর বাহিরে আর কিছু তারা করতে চায় না। এই প্রশাসন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলতে পারে না। আপনারা দয়া করে সক্রিয় হন, আর ত্বকীসহ সকল হত্যার বিচার করতে হবে। আর ওই গডফাদারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলীর উপরে নজর রাখুন তার সকল তৎপরতার উপরে খেয়াল করুন। তিনি ওসমান পরিবারের হয়ে নারায়ণগঞ্জে আর কি কি ষড়যন্ত্র করছেন।

 


এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন।

 

 

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সিপিবি শহর সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী বিকু, বাসদ জেলা সংগঠক এসএম কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।    এন. হুসেইন রনী  /জেসি