রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

বিকেল হলেই বিসিক শিল্পনগরী সাজে বাহারি ইফতারে

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩  

 


শিল্প অধ্যুষিত এলাকা নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরী। ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ ব্যস্ত সড়কের পাশেই যার অবস্থান। দূর দূরান্তের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিকের কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন শিল্প এলাকা এই বিসিক। যেখানে বিভিন্ন পোশাক কারখানার লক্ষাধিক মুসলিম পোশাক শ্রমিকের বসবাস।

 

 

যারা সারাদিনের কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝেও রমজানের রোজা রাখতে পিছিয়ে নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আঁচর যখন রমজানের ইফতারের বাজারে তখন তাদের বেশিরভাগই অফিস শেষে বিকেলের পর ইফতার ছাড়াই একদম খালি হাতে ঘরে প্রত্যাবর্তন করেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে ইফতারের চড়া বাজারে তারা আজ বড় অসহায়। 

 

 

এ দিকে রমজান মাস চলায় বিকেল হলেই বিসিক সাজে বাহারি ইফতারিতে। বিকেল হলেই বিসিকের সড়কের দুই পাশে থরে থরে বাহারি রঙের ইফতারির দোকান নিয়ে বসেন ইফতারি বিক্রেতারা। তবে আয়োজনের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। ক্রেতাদের অভিযোগ গত বছরের তুলনায় এ বছর ইফতার সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। কিন্তু কিছুই করার নেই।

 

 

যারা অফিস, কারখানা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাদের ইফতার কিনে খাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। বিসিকের সড়কের পাশে ইফতার সামগ্রীর দোকানগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় জিলাপি, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা বুট, বুন্দিয়া, খেজুর, মুড়ি, চপ, রোল, কাবাব, বিভিন্ন ফল, শরবত সহ রকমারি আইটেম।

 

 

কী নেই বিসিকের বাহারি এই ইফতার বাজারে! আজ মঙ্গলবার রমজানের পঞ্চম দিনে বিসিক এক নম্বর ও দুই নম্বর গেটের সামনে, কলাবাগান মোড়, ভাঙ্গা ক্লাব মোড়, শাহী মসজিদের সামনের সড়ক ভরে উঠেছে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু ইফতারির আইটেমে। ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিসিকের ইফতার বাজার জমে উঠলেও দাম শুনে নাখোশ ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ভিড় কম, ক্রেতাও অনেক কম। এবার ইফতারির আইটেমের দাম বেড়েছে কয়েক গুন পর্যন্ত। 

 

 

রমজানের প্রথম দিন থেকেই বিসিকের ভাঙ্গা ক্লাব মোড়ে ইফতার বাজার জমে উঠে। ইফতার বিক্রেতা মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, রমজানের প্রথম দিকে তেমন ক্রেতা না থাকলেও এখন ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। কিন্তু আমরা যে পরিমাণ ক্রেতা আশা করেছিলাম, সেটা এখনো দেখা যায়নি। আশা করছি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়বে।

 

 

এ দিকে দুপুর থেকেই বিসিকের শাহী মসজিদের সামনে দোকানিরা ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন। দুপুরের পর থেকেই ইফতার কিনতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করতে শুরু করে। আজ বিকেলে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা মানুষের তুলনামূলক বেশি ভিড় ছিল। যা গত চার দিনের থেকে বেশি। ইফতার কিনতে আসা রমজান মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, জিলাপি, সমুচা, পরোটা, আলুর চপ, বেগুনি, বুট, বুন্দিয়া কিনেছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার একটু দাম বেশি।

 

 

বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের দোষ দিয়ে কী হবে। ইফতারের পণ্যের যেভাবে দাম বাড়ছে, তারাইবা কম দেবে কী করে। তবে দাম আরেকটু কমানো যেত। সরেজমিনে ঢাকা মুন্সিগঞ্জ সড়কের বিসিক এলাকায় দেখা গেছে, শতাধিক ইফতার সামগ্রী বিক্রির অসংখ্য দোকান বসেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রমজান মাস জুড়েই ইফতার সামগ্রীর বিষয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে। তারা নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী কিনতে পুরো রমজান মাস জুড়েই আগ্রহ নিয়ে এসব দোকানে আসেন। বিসিকের ভাঙ্গা ক্লাব মোড়ের ইফতার বিক্রি জমজমাট হলেও ইফতার বিক্রির আরেক পয়েন্ট কলাবাগান মোড়ে তেমন ক্রেতা ছিল না। দোকানিরা ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতা আশানুরূপ ছিল না বলেই জানিয়েছেন দোকানিরা। 

 

 

ভোজন বিলাস রেস্টুরেন্ট মূল সড়কের ফুটপাতে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সেখানে ক্রেতাদের তেমন ভিড় ছিল না। এ বিষয়ে ভোজন বিলাস রেস্টুরেন্টের এক কর্মী বলেন, শিল্প এলাকা হাওয়ায় আমাদের ক্রেতা বেশিরভাগই গার্মেন্টসের পোশাক কর্মী। মাসের শেষের দিকে অনেকের হাতে টাকা থাকে না তাই বিক্রি অনেক কম। যতটুকু বিক্রি হয়, তা কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়েছে।

 

 

এই রেস্টুরেন্টের পাশে আরেক ইফতার বিক্রেতা বলেন, রোজার প্রথম দিকে তেমন একটা বিক্রি হয় না তবে কয়েকদিন পরে বিক্রি বাড়বে বলে তিনি জানান। এই দোকানের ইফতার ক্রেতা মো. রাকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, একেক দোকানে একেক দাম। আবার একেক দোকানে একেক রকম ইফতার সামগ্রী। কেউ বেশি নিচ্ছে, আবার কেউ কম নিচ্ছে। তুলনামূলকভাবে ইফতারের দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। আমরা নিরুপায়, কম হোক বেশি হোক নিতে হবে।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর