শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

বিবর্ণ শীতলক্ষ্যা, বাড়ছে দূষণের মাত্রা

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : বর্ষা মৌসুম শেষ হাতে না হতেই  শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। কুচকুচে কালো আর উৎকট দুগন্ধে পানি ব্যবহার তো দুরের কথা শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে চলাচল দুরহ  হয়ে উঠেছে।

নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর থেকে নরসিংদীর  পলাশ পর্যন্ত কমপক্ষে অর্ধশতাধিক নালা, ড্রেন ও খাল দিয়ে এসে  বিভিন্ন শিল্পকলকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি এসে মিশছে শীতলক্ষ্যায়। 

রাজধানীর শ্যামপুর, পাগলা, নয়ামাটি, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল, শিমরাইল,  আরামবাগ, ডেমরা কোনাপাড়া  রপগঞ্জ, সোরনাগায়ের কাচঁপুর  সহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় পাচঁ হাজারের বেশী শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ডাইং বর্জ্য, ক্যামিকেল বর্জ, শিল্পবর্জ্যসহ পলিথিন, পয়নিস্কাশন বর্জ্যসহ নানা রকমের বর্জ্য মিশ্রিতি পানি ও ময়লা আবর্জনা  বিভিন্ন খাল বিল, ক্যাণেল ও ড্রেনেজের মধ্যে ছেড়ে দিচ্ছে। 

এসব বর্জ্য মিশ্রিত পানি গড়িয়ে এসে কোন রকম পরিশোধন ছাড়াই সরারসি মিশছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। যার কারনে  নারায়ণগঞ্জের সকল খাল বিল ও নালার পানি দুষিত হয়ে পড়েছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসেবে অনুযায়ি প্রতিদিন শুধু অপরিশোধিত ১৫ কোটি লিটার ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল বর্জ্য বিভিন্ন খাল বিল দিয়ে এসে শীতলক্ষ্যা নদীতে এসে পড়ছে।

এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পয়নিস্কাশন ও গৃহস্থালী বর্জ্য, পলিথিন, বাজারের উচ্ছিষ্ট অংশ, হোটেল রেস্তোরার বর্জ্যসহ আরো কয়েক কোটি লিটার বর্জ্য এসে মিলছে শীতলক্ষ্যায়। 

সুত্রটি আরো জানায়, শীতলক্ষ্যা নদীতে (ডিও মেনাস ডিজলভ অক্সিজেন )  পরিমান থাকার কথা ৪ থেকে ৬   মিলিগ্রাম প্রতিলিটার।  
কিন্তু বর্তমানে শীতলক্ষ্যার পানিতে আছে মাত্র ১ থেকে ২ মিলিগ্রাম প্রতিলিটার। নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বেশী মাত্রায় কমে যাওয়ায় নদীতে জলজপ্রানী বা মাছসহ কোন প্রাণী টিকতে পারছেনা।   

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (পবা) নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক জানান, পরিবেশ দূষণকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নাম মাত্র জরিমানা করেই দায়িত্ব শেষ করছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। 

কিন্তু তারা পরিবেশ দূষণ বন্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা নেয়না। বছরের পর বছর নোটিশ দেয়ার পর যে সব প্রতিষ্ঠান এখনো  ইটিপ প্লান্ট নির্মাণ করেনি তাদের কারখানা বন্ধ ও মিসগালা করেনি। 

তাদের একটি গদবাধা বক্তব্য লোকবলের অভাবে তারা মনিটরিং করতে পারছেনা। তারা কার্যকর ব্যবস্থানে নিলে বিদ্যমান আইনেই পরিবেশ দুষন রোধ করা সম্ভব। 

সোনারগাঁ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির জানান,  বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে প্রচন্ড ¯্রােতের কারনে দুষিত ও বর্র্জ্য মিশ্রিত পানি সরে গিয়ে নদীর পানি কিছুটা স্বচ্ছ আকার ধারনে করে। 

কিন্ত শুস্ক মৌসুমে নদীতে ¯্রােত কমে যায় এবং শিল্প কলকাখানার অপরিশোধিত বর্জ্য এসে মিশে পানি দুষিত হয়ে উৎকট দুর্গন্ধ সৃস্টি হচ্ছে। 
উৎকট দুর্গন্ধ ও কাচলে রংয়ের কারনে শীতলক্ষ্যার শীতল জালের কাছে দাড়িয়ে থাকাই দুরুহ হয়ে পড়ে। নাকে রুমাল চেপে ধরে খেয়া পাড়াপাড় হতে হয় যাত্রীসাধারনকে। 

শীতলক্ষ্যা নদীতে পার হয়ে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জে আসেন বন্দরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফসসাল রহমান জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এতটাই বিষাক্ত এবং দুর্গন্ধ যে নাকে রুমাল চেপে নদী পারাপার হতে হয়। 

তিনি বলেন, নদীর পানি যতই কমছে ততই বাড়ছে দূষণের মাত্রা। এই পানি  দিয়ে গোলস তো দুরে কথা পানি হাতে বা শরীরের কোন অংশে লাগলে চুলকানিসহ নানা ধরনের রোগবালাই হচ্ছে।   

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা  বিভাগের  রোগ নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ডা: তানভীর আহমেদ চৌধুরি জানান, শিল্পকারখানার ক্যামিকেল  মিশ্রিত বজ্য মিশ্রিত  পানি  খাল ও নদীতে মিশে পরিবেশের  মারাতœক দূষণ হচ্ছে।  এই দুষিত পানি ব্যবহারের কারনে মানুষের শরীরে খোশপাচড়াসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। 

তবে র্দীঘ মেয়ার্দী এই পানি ব্যবহার করলে শরীরে ক্যানসারসহ নানা ধরনের বড় রোগ হতে পারে বলে আশংকা এই চিকিৎসকের। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসেবে অনুযায়ী শুধু নারায়ণগঞ্জ অংশে তরল বর্জ্য নির্গমনকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩১৮টি।  প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানেই  পরিশোধন প্রকল্প ইটিপি প্লান্ট রয়েছে। কিন্তু তারপরও দিন দিন পানির রং কলচে থেকে কালচে হচ্ছে। 

এলাকাবাসির অভিযোগ বেশীর ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই খরচের কারনে ইটিপি চালায়না। রাতের আধারে এসব ক্যামিক্যাল বর্জ্য মিশ্রিত পানি ছেড়ে দেয় খাল বিলে। নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নয়ন মিয়া জানান,  নারায়ণগঞ্জে তরল বজ্য নির্গমনকারি ৩১৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইটপি প্লাট স্থাপন করা হয়েছে। 

কিন্তু তারা রাতের বেলায় অপরিশোধিত পানি সরাসরি নদী বা খালে ছেড়ে দেয়। জনবল সংকটের কারনে তাদরে মিনিটরিং করা যাচ্ছেনা।  
তিনি বলেন, এসব কারখানা মনিটরিং করতে পরিবেশ অধিদপ্তর অনলাইন মনিটনিরং সিস্টেম ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।  ইটিপি স্লো মিজাইনিং ডিভাইসে   সফটওয়ার বিসেয় রেকর্ড রাখা হবে। 

এছাড়া  ইটিপিতে আলাদা বিদুৎতের সাব মিটার স্থাপন করা হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে যাদের ইটিপি আছে কিন্তু চালায়না তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবো। এতে  নদী দূষণের মাত্রা কমে আসবে। 

শুস্ক মৌমুসে  নদীতে পানির দূষণ বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, শীতলক্ষ্যাসহ নদী দূষণের জন্য দায়ি কারনগুলো চিহ্নিত করে সশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। 

যাতে মন্ত্রনালয় তাদের নতুন এজন্ডোয় তা অন্তর্ভুক্ত করে জনস্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর