শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

বিষন্ন হাতেম, তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪  

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর ওসমান পরিবার তাদের দোসর হিসেবে মোহাম্মদ হাতেমকে বিকেএমইএ’র শীর্ষ পদে বসিয়েছিল তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে। তবে সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের পদত্যাগের চিঠির সূত্র ধরে ওসমানদের নীলনকশা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় হাতেমকে দিয়ে যে আগামীতে সেটি হচ্ছেনা এটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। রাজনীতিক, ব্যবসায়ীবৃন্দ, মিডিয়ার কঠোর সমালোচনার মুখে মোহাম্মদ হাতেম বিকেএমইএর সভাপতি পদ বাঁচাতে হন্য হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন, নানা জায়গায় অর্থ লগ্নি করেও তদ্বির করানোর চেষ্টা করেছেন তবে কোথাও কেউ আশার আলো দিতে পারেননি। ওসমানদের হয়ে গত ১৬ বছর হাতেম ব্যবসায়ীদের উপর নানাভাবে শোষন, অত্যাচার ও খবরদারি করেছে। ওসমানদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। ওসমানদের বিপক্ষে কোন ব্যবসায়ী নুন্যতম প্রতিবাদ করলে কিংবা তাদের কথার অবাধ্য হলে ওসমানদের দোসর হিসেবে কুখ্যাত ব্যক্তিদের দিয়ে ওই মালিকে ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা হতো। আবার এই হাতেমকে দিয়েই সেই অসন্তোষ মিটমাট করার কথা বলে ব্যবসায়ীদের সাথে দেনদরবার করা হতো বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। হাতেমের মাধ্যমে ওসমানদের এই চাঁদাবাজি, ফ্যাক্টরিতে অসন্তোষ তৈরিতে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। যার ফলে কেউই তখন ওসমানদের এই সিন্ডিকেটের বিপক্ষে অবস্থান নিতেননা। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর ২৫ আগস্ট অসুস্থতার কথা বলে পদত্যাগপত্র পাঠান সেলিম ওসমান। সেখানেই তাদের দোসর ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেমকে বিকেএমইএর সভাপতি করার নির্দেশ দেন সেলিম ওসমান। এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ২২ জুলাই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার থাকাকালীন গণভবনে গিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের বিপক্ষে কথা বলেন। ছাত্রআন্দোলনে জড়িতরা চক্রান্ত করছে এবং তাদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেন হাতেম। এই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এদিকে ওসমানদের দোসর হাতেমের বিরুদ্ধে বিকেএমইএর ব্যবসায়ীরাও একাট্টা হয়েছেন। নভেম্বরে বিকেএমইএর বর্তমান পর্ষদের দুইজন সদস্য হাতেমকে ওসমানদের দোসর আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিপক্ষে হাতেমের অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেন। তবে পরবর্তিতে সেলিম ওসমানের চাপে সেই পদত্যাগপত্র সরিয়ে নেন তারা। তবে বিকেএমইএর অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও হাতেমের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। বৈষম্যের শিকার বিকেএমইএ’র সাধারণ সদস্যদের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন প্রীতম নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাফর আহমেদ এবং কেএএস নিটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর কবির। তবে তারা অভিযোগটি দায়ের করলেও অতীতে বৈষম্যের শিকার ও ওসমান পরিবার তথা হাতেম গংদের আগ্রাসনের শিকার বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীদের সমর্থনেই এই অভিযোগটি দায়ের করেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওসমানদের সময় থেকেই হাতেমকে যতটা না ব্যবসায়ী বলা চলে, তার চেয়ে বড় দাগে ঝুট ব্যবসায়ী, জমি দখলদার, ভূমিদস্যুতার সেটেলমেন্ট ব্যবসায়ী, ওসমানদের দখলদার বলা চলে। ওসমানদের হয়ে হাতেম গং সিন্ডিকেট জমির দালালিতেও সিদ্ধহস্ত ছিল।

সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে, হাতেমের ব্যাপারে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও খোঁজ খবর নিতে গোয়েন্দা সংস্থার উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন। শুধু হাতেম নয়, বিগত ১৬ বছর ওসমানদের হয়ে হাতেম গংদের মতো ব্যক্তিদের বিষয়েও ভালোভাবে খোঁজখবর ও তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এদিকে ক্রমাগতভাবে হাতেমের সকল অপকর্ম এবং ওসমানদের প্রেআত্মা হয়ে চেয়ার দখলের বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের নজরে এসেছে। তাই ব্যাপক দৌড়ঝাপ করেও তেমন কোন সুবিধা করতে পারেননি হাতেম। পত্রপত্রিকায় ও গণমাধ্যমে হাতেমের কুকীর্তি প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় সমন্বয়করাও হাতেমকে পাত্তা দেয়নি। সমন্বয়কদের ধরে হাতেম এই বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও সেটি ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। হাতেমের কুকীর্তি প্রকৃত চিত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কেউই এখন হাতেমের লোভলালসার টোপ গেলেননি। যার ফলে হাতেম এখন নিসঙ্গ, নিস্তব্দ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিসিক সূত্র জানিয়েছে, এখন হাতেম তেমন একটা বিসিকেও আসছেননা, বিকেএমএইএতেও ঠিকমত যাচ্ছেননা। ভূমিদস্যু ম্যানেজার হাসানকেও কাছে ভিড়তে বারণ করে দিয়েছে। অতীত কুকীর্তির কারণে নির্মম পরিণতির দিকে যাত্রা করে যারকারণে রীতিমত বিষন্ন হাতেম।
 

এই বিভাগের আরো খবর