Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

বিয়ের আগেই বাবা হয়েছিলেন নাজিমউদ্দিন!

Icon

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:০৪ এএম

বিয়ের আগেই বাবা হয়েছিলেন নাজিমউদ্দিন!

যুগের চিন্তা ২৪ : সন্তানের বর্তমান বয়স ২১ মাস। আর বিয়ের বয়স হয়েছে ১২ মাস। বিয়ের আগেই একজন নারীকে ভূঁইঘরের রুপায়ন টাউনের একটি ফ্ল্যাটে কৌশলে মদপান করিয়ে ধর্ষণ করেছিলেন এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এরপর বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ঐ নারীর সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও স্থাপন করেন তিনি।এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন সেই নারী।

পরে সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে ১ বছর আগে ওই নারীকে বিয়ে করে বাড়িতে তুলেন। ১০/১২দিন আগে ঐ নারীকে সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দেয় ওই ব্যাক্তি।  এর কয়েকদিন পর সেই সন্তানকে পিস্তল ঠেকিয়ে পুনরায় তার মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনেন তিনি।

গুনধর এই ব্যক্তি হলেন  সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন আহমেদ (বাঘ নাজিম)। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে জেলায় তার পরিচিতি রয়েছে। গতকাল তার বাড়ি থেকে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের হেফাজতে দিয়েছেন। তবে বিষয়টি জানেননা বলে দাবি করে নাজিমউদ্দিন আহমেদ সংবাদটি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান।

সুমাইয়া আলম নামের ওই নারী নাজিম উদ্দিন ওরফে বাঘ নাজিমের কাছ থেকে সন্তান উদ্ধারের জন্য বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, ঢাকা আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-৮৫/২০১৮)। আদালতের নির্দেশে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিশুটিকে নাজিম উদ্দিনের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। আজকে শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানা  গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, দেখতে অনেকটা ভোলাভালা হলেও নানা অপকর্মে পটু ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম। নির্বাচনের সময় তার মার্কা বাঘ থাকায় অনেকে তাকে বাঘ নাজিম বলেও ডাকেন। সাইনবোর্ড এলাকার গিরিধারা, সাদ্দাম মার্কেট, রুপায়ন টাউনসহ আশপাশের এলাকায় ভূমি দস্যু হিসেবে চিহ্নিত তিনি।

 এসব এলাকার মানুষের কাছেও মূর্তমান আতঙ্কের নাম বাঘ নাজিম। সাংসদ শামীম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে ওইসব এলাকায় তিনি নানা অপকর্ম করে বেড়ান এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের দেয়া তথ্যমতে, সাংসদ শামীম ওসমানের  কাছে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কেউ কোন প্রতিকার পায়না বলে জানা গেছে।

গত কয়েকদিন আগে সাংসদ শামীম ওসমান গিরিধারা এলাকায় একটি সমাবেশে যাওয়ার পর, নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এলাকার বেশ কয়েকজ ব্যাক্তি জমি দখলের অভিযোগ দিয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

তবে এবার তার বিরুদ্ধে কৌশলে মদ খাইয়ে শারিরিক মেলামেশা করার অভিযোগ করেছেন সুমাইয়া। পরবর্তীতে ভয় দেখিয়ে সেই নারীর সাথে একাধিকবার শারিরিক মেলামেশা করেছেন তিনি। এক পর্যায়ে সুমাইয়ার গর্ভে সন্তান এসে যায়।

সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য নাজিম উদ্দিনকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে সুমাইয়া। এরপর বাধ্য হয়ে বিয়েও করেন। কিন্তু বিয়ের পরও  শান্তি পায়নি সুমাইয়া। মদ্যপ অবস্থায় তাকে  মারপিট করতো নাজিম উদ্দিন।

সুমাইয়া জানান, ভুঁইগড়ের রুপায়ন টাউনের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারের সাথে বাস করতেন সুমাইয়া। তিনি চাকরী করতেন ঢাকার ফার্মগেটের একটি প্রতিষ্ঠানে। সুমাইয়া রুপায়নের যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেখানে কিছু সমস্যা ছিল। নাজিম উদ্দিস রুপায়নের এ্যাডভাইজার হওয়ায় সুমাইয়া ফ্ল্যাটের বিভিন্ন সমস্যার কথা নাজিমউদ্দিনকে বলতে গিয়েছিলেন।

এরপরই তার উপর কু-দৃষ্টি পড়ে নাজিম উদ্দিনের। দুই বছর আগে হঠাৎ করেই সুমাইয়াকে মোবাইলে ফোন করে রুপায়নের ১০ তলার ফ্ল্যাটে  ডেকে আনেন নাজিমউদ্দিন। এসময় নাজিমের সামনের টেবিলে মদের বোতল ছিল। এক পর্যায়ে কৌশলে নাজিম উদ্দিন সুমাইয়াকে মদ পান করায়।

পরে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করে। জ্ঞান ফিরে আসার পর ঐ নারীকে মুখ বন্ধ রাখতে হুমকি দেয় সে। পরবর্তীতে তাকে ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময় রুপায়নের ভিতরে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে এনে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনও করে বাঘ নাজিম। এতে এক সময় ঐ নারীর গর্ভে সন্তান এসে যায়।
সন্তানও জন্ম দেয় সুমাইয়া। কিন্তু  তিনি সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাননি। সন্তানের বয়স যখন ৮ মাস তখন চাপ প্রয়োগ করলে ২০১৭ সালের ১০ আগষ্ট নাজিম উদ্দিন বাধ্য হয় সুমাইয়াকে বিয়ে করতে।

কিন্তু এরপরও সুমাইয়ার উপর নির্যাতন বন্ধ করেনি সে ও তার অপর দুই স্ত্রী। এমনটিই জানিয়েছেন সুমাইয়া (সুমাইয়ার ধারণকৃত বক্তব্যের ভিডিওটি যুগের চিন্তা অফিসে সংরক্ষিত আছে। ) তিনি আরও জানিয়েছেন, ভূইঘরের রুপায়ন টাউনে নাজিম উদ্দিন নানা রকম অপকর্ম করে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সুমাইয়া আরও জানায়, বিয়ের পর তাকে তাঁর সন্তানসহ নাজিম উদ্দিন তার ভূইঘরের বাড়িতে এনে দুই স্ত্রী’র সাথে রাখেন। কিন্তু প্রতিদিন রাতেই মদ্যপ অবস্থায় তাকে মারপিট করতো সে। এর সাথে দুই সতীন মনোয়ারা ও শামীমআরাও নির্যাতন করতো তাকো।

চলতি বছরের গত ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ২১ মাস বয়সী সন্তান নাজিলা আক্তার নিতুসহ সুমাইয়াকে বাসা থেকে বের করে দেয় নাজিম উদ্দিন ও তার অপর দুই স্ত্রী। তিনি তার সন্তান নিয়ে ডেমরা এলাকার সেতুবন্ধন টাওয়ারে মায়ের বাসায় গিয়ে উঠেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর নাজিম উদ্দিন,তার দুই স্ত্রী  মনোয়ারা ও শামীমআরা ও রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন সুমাইয়ার  মায়ের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়। এসময় সুমাইয়ার পরিবারের লোকজনদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শিশু সন্তান নাজিলা আক্তার নিতুকে বাসা থেকে জোর করে নিয়ে আসে।

এ ঘটনায় সুমাইয়া আলম মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশকে শিশুটি উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেয়। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এসআই আমিনুল নাজিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। মামলায় উল্লেখ রয়েছে, সুমাইয়াকে বিয়ের সময় প্রথম ও ২য় স্ত্রীর কথা গোপন রেখেছিল নাজিমউদ্দিন।

এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ্ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের পিপিএম বলেন, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে শিশুটির বাবা নাজিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। আগামীকাল শিশুটিকে আদালতে  তোলা হবে।

এ বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি ঢাকায় ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। সুমাইয়ার বিয়ের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিয়ে আমাদের অনেক আগেই হয়েছে তবে কাবিন হয়েছে পড়ে। গতকাল তার সন্তান নাজিলা আক্তার নিতুকে উদ্ধারের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। সেই সাথে এক পর্যায়ে তিনি সংবাদটি বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন।

 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন