শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বেজায় খুশি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

ইউসুফ আলী এটম

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪  

 

মাসাধিককাল ধরে হকারশূন্য নরায়ণগঞ্জের সব ফুটপাত। পুলিশের কড়া নজরদারি থাকায় ফুটপাতে কোন দোকানই বসাতে পারছেন না হকাররা। মাঝখানে কয়েকদিন হকারের সাথে পুলিশকে ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মত্ত থাকতেও দেখা গেছে। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবৎ এই খেলাও বন্ধ হয়ে গেছে। হকারমুক্ত ফুটপাত এখন সুনসান। 

 

প্রসঙ্গত, শহরকে যানজট ও হকারমুক্ত করতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় গোলটেবিল বৈঠকের পরদিন থেকেই ফুটপাতে পুলিশের শ্যেনদৃষ্টি পড়ে। ফুটপাতে হকার বসলেই পুলিশকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায়। ফুটপাত দখল করতে হকাররা প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদানসহ লাগাতার মিটিং-মিছিল করে নানারকম হুমকি ধামকি এবং আল্টিমেটাম দিয়েও আন্দোলন জমাতে ব্যর্থ হয়।

 

সর্বোপরি ‘হকাররা এতো সাহস পায় কোত্থেকে’ এমপি সেলিম ওসমানের এমন হুংকারের পর হকাররা একেবারেই মুষড়ে পড়েন। ফলে বেশিরভাগ হকারই এখন পেশা বদলের চিন্তা ভাবনা করছেন বলে জানা গেছে। কর্মহীন অবস্থায় বসে বসে খেতে এখন অনেকের পূঁজিতে হাত পড়েছে। এভাবে আর কতোদিন চলে!

 

পেট চালাতে তাদেরকে অন্য পেশা বেছে নিতে হবে। বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামের পৈত্রিক নিবাসে ফেরত যাচ্ছেন। মামুন নামে ইসদাইরের এক হকার ইতোমধ্যেই তার ভাড়া বাসা ছেড়ে পরিবার-পরিজনসহ গাঁটরি-বোঁচকা নিয়ে জামালপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন বলে তার পড়শীরা জানিয়েছেন।      

 

ফুটপাতে হকারদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। আগের তুলনায় মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বিক্রি বেড়েছে, লাভও হচ্ছে আশাতীত। অথচ মাস দু’য়েক আগেও এমন অবস্থা ছিলো না। দোকান ভাড়া ওঠানোর মতো বেচাকেনাও হতো না।

 

দোকানে একজন ক্রেতার পদধূলি পেতে তাদেরকে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে হতো। সস্তায় কেনার জন্য নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বেশীরভাগ ক্রেতাই ফুটপাতে ভিড় জমাতেন। টাকা বাঁচনোর জন্য অনেক ধনীক্রেতাকেও ফুটপাতে লাইন ধরতে দেখা গেছে। ক্রেতাবঞ্চিত হয়ে মার্কেট ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করতেও পিছপা হতেন না। তাদের ক্ষোভের কারণও ছিলো।

 

বঙ্গবন্ধু সড়কের পানোরামা মার্কেটের এক ব্যবসায়ী ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, এতো টাকা সেলামি দিয়ে দোকান নিলাম। কয়েক লাখ টাকার মাল উঠালাম। কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। আর কতোদিন লোকসান দিবো! সব কাস্টমার ভিড় জমায় ফুটপাতে। ফুটপাত আমাদের পথের ভিখারীতে পরিণত করে ফেলছে।

 

এ ছাড়া ঈদ-পূজায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কিছু মুখচেনা নামধারি নেতা বিভিন্ন স্থানে মেলা বসিয়ে দোকান ভাড়া দিয়ে ক্রেতা হাইজ্যাক করার ফাঁদ পাতে। আমরা এসব দেখি আর দোকানে বসে বসে আঙ্গুল চুষি! তবে এখন মার্কেট ব্যবসায়ীরা দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তারা চান, সারা বছরই এমন পরিবেশ বজায় থাকুক। 

 

এতোদিন যারা ফুটপাতে কেনাকাটা করতেন, তারা এখন বাধ্য হয়েই মার্কেটে ভিড় জমাচ্ছেন। বিশেষ করে তৈরীপোষাক ও জুতোর দোকানেই তাদের ভিড় বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামনেই ঈদ-উল- ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে মার্কেট ব্যবসায়ীরা দোকানে নতুন মাল ওঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

 

ফুটপাতের একজন নিয়মিত ক্রেতা হতাশকণ্ঠে বললেন, ‘মার্কেটে যেতে ভয় পাই। মার্কেটে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশী নেয়। ফুটপাতে বিক্রি হওয়া একই পণ্য মার্কেটে কিনতে গেলে ডবল দাম দিতে হয়। কারণ জানতে চাইলে আমাদের সাথে মার্কেটের কর্মচারিরা খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। অনেকে খিস্তিখেউর ঝারতে ঝারতে বলেন, এতো টাকা দোকানভাড়া দিয়া যদি লাভ না করি, তয় কি আমার ফ্যামিলিরে আপনারা খাওয়াইবেন? কন্তো দেহি, এই কথার কোন উত্তর আছে!’  এস.এ/জেসি        
 

এই বিভাগের আরো খবর