শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বেপরোয়া অটো-মিশুক চালকরা লাগামহীন

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

 

# তাদের বিরুদ্ধেও কাজ চলছে : এডি.এসপি সাগর

 

নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত করার জন্য প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম কর্মী মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। তা ইতোমধ্যে বাস্তবায়নও হচ্ছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে শহরে অবৈধ স্ট্যান্ড, অবৈধ পরিবহন, অটো ইজিবাইক, মিশুক শহরে প্রবেশ করতে পারবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে ফুটপাতে হকাররা বসতে পারবে না।

 

শহরের যানজট মুক্ত পরিবেশ তৈরী করে মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার এই সিদ্ধান্তকে নগরবাসি সাধুবাদ জানান। কিন্তু অবৈধ স্ট্যান্ড, হকার না থাকলেও শহরে দেদারছে প্রবেশ করছে অটো ইজিবাইক, মিশুক, অটো রিকশা। অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ অর্থের ফায়দা নিয়ে তাদেরকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে।  

 

এদিকে শহর জুড়ে যানজট আগের থেকে কিছুর কমলেও অবৈধ অটো রিকশা, মিশুকের রাজত্ব চলছে পুরো শহরে। এছাড়া শহরে প্রবেশ নিষেধ ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা শহরময় তাণ্ডব চালাচ্ছে। কিন্তু, এসব প্রবেশে নিষেধ থাকলেও তাতে যেন শিথিলতা রয়েছে। এছাড়া নগরবাসি বলছে হকারদের ক্ষেত্রে যেভাবে কঠোরতায় অনড় রয়েছে সেই ভাবে মিশুক, অটো রিকশা, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের ক্ষেত্রে তেমন কঠোরতা দেখা যাচ্ছে না। আর এই সুযোগে তারা শহরে প্রবেশ করে যানজটের সৃষ্টি করছে। যার ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ পথচারীরা।

 

জানা যায়, মিশুক চালাক, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাকদের বেপরোয়া গতির কারনে অনেক মা তার সন্তানকে হারান। তারচিত্র ফুটে উঠে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা এলাকায়। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বন্দরে একরামপুর এলাকায় ইজিবাইকের ধাক্কায় রায়হান (৭) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী জনতা উত্তেজিত হয়ে সেই ইজিবাইকে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

 

এই ঘটনায় নিহত শিশুর পিতা সোহেল মিয়া গনমাধ্যমকে জানান, আমার ছেলে রায়হান তার মামা জিলানী মিয়ার একরামপুর এলাকাস্থ এডঃ কামরুন নাহার ময়না ভাড়াকৃত বাসায় বেড়াতে আসে। পরে সন্ধ্যায় আমার অবুঝ ছেলে রায়হান রাস্তা পার হওয়ার সময় বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আসা অটো ইজিবাইক আচমকা ধাক্কা দিলে উল্লেখিত শিশু মারাত্মক ভাবে জখম হয়।

 

স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মুমূর্ষু অবস্থা উদ্ধার করে বন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে ঢামেক হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে তার মৃত্যু হয়। আর এই ভাবে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটো রিকশা, মিশুক চালকদের কারণে অনেকের প্রাণ ঝরে যাচ্ছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনের বেলায় চাষাঢ়া থেকে মন্ডলপাড়া আসতে  যানজট না থাকলে ১০ মিনিটের মধ্যে আসা যায়। কিন্তু যানজট থাকলেও তা অনেক সময় ঘন্টা পার হয়ে যায়। এছাড়া ৩০ মিনিট কিংবা তারও বেশী। যানজট না থাকলে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ থাকলেও যানজটের কারণে অনেক সময় মানুষকে অতিবাহিত করতে হয় রাস্তায়।

 

অপরদিকে শহর ঘুরে দেখা গেছে, পুরো শহরজুড়ে বৈধ রিকশার পাশাপাশি অবৈধ রিকশার দাপট। শহরে চলাচল নিষিদ্ধ ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা আর মিশুক পুরো সড়ক দখল করে নিয়েছে। এসব অবৈধ যান বাহনের কারণে শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে হকার না থাকায় মানুষ স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারছে। কেননা হকারের বেলায় প্রশাসন কঠোর থাকলেও এই সকল পরিবহনের ক্ষেত্রে কঠোর নেই। সড়কের যানজট নিরসনে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও তারা পুরোপুরি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। অবৈধ ইজিবাইক, মিশুক আর ব্যাটারি চালিত রিকশার সঙ্গে পেরে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ।

 

আব্দুল্লাহ নামের একজন পথযাত্রী জানান, ব্যাটারি চালিত অটো, ইজিবাইক, মিশুক বেপরোয়া চালকদের কারণে আমরা ঠিকমত রাস্তা পারাপার হতে পারি না। তারা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এছাড়া এই চালক গুলো তাদের পরিবহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় অনেক মানুষ দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাই এদেরকে কোন ভাবেই শহরে প্রবেশ করতে না দেয়া হয় সেই দাবী জানাই প্রশাসনের কাছে।

 

ভুক্তভোগীদের মতে, নগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে হলে অবৈধ স্ট্যান্ড, হকারের পাশা পাশি শহরে ইজিবাইক, মিশুক ও ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় যানজটের কারণে এ শহর অচল হয়ে যাবে। সরেজমিন চাষাঢ়া মোড়ে দেখা গেছে ইজিবাইক, মিশুক আর ব্যাটারি রিকশা জটলা। জিয়াহল কিংবা খাজা সুপার মার্কেটের সামনে এসব অবৈধ যান দাঁড় করে রেখে যাত্রী ওঠা নামা করছে। যাত্রীদের জন্য অপেক্ষারত দেখা গেছে অনেককে। শুরু এখানেই নয়, ২নং রেলগেট, কালিরবাজার মোড়, চারারগোপ, ১নং রেলগেট, জিমখানা এলাকাগুলো এখন অঘোষিত অবৈধ যানবাহনের স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

 

সচেতন মহলের মতে, অবৈধ এসব যান চলাচলের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ যদি এখনি কঠোর না হয়, তা হলে এ শহরে চলাচল করা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে নগরবাসী।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক রুহুল আমিন সাগর জানান, আমরা হকার, অবৈধ স্ট্যান্ড এবং অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করছি। সেই সাথে এগুলো একটা পর্যায়ে নিয়ে আসছি। তাছাড়া অটো মিশুক নিয়েও আমরা কাজ করছি। কয়েক দিনের মাঝে এটাও ঠিক হয়ে যাবে। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর