রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বেহাল দশায় বিপন্ন জনজীবন

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৩  

 

# বাংলোর গেটের সামনে রাতের বেলায় ভুতুড়ে পরিবেশ
# অলৌকিক কারণে জ্বলে না এখানকার স্ট্রীট লাইট
# বর্ষা এলেই পানি ও কাদায় মিলে মিশে একাকার
# স্থায়ী সমাধানে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ
# বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নিবে : জেলা প্রশাসক

 

 

জেলা প্রশাসক একটি জেলার রাষ্ট্র নিযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক। যাকে বলা হয় জেলার মুখ্য আমলা ও ভূমিরাজস্ব কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসক একই সাথে ডেপুটি কমিশনার, ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর এবং ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। তাই জেলা, জাতীয় বা বৈদেশিক উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এখানে যাতায়াত হওয়াটাও অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই একজন জেলা প্রশাসকের বাসভবন বা বাংলো এবং তার আশেপাশের পরিবেশের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যের উপর অনেকটাই নির্ভর করে একটি জেলার সৌন্দর্যবোধ, ফুটে ওঠে জেলার চিত্র।

 

আর সেই কারণেই শুধু বাসভবন নয়, এর আশেপাশের পরিবেশ ও রাস্তাঘাটও নিরাপদ, সুন্দর, মসৃণ এবং আকর্ষণীয় হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এর ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনের এলাকা। বেশ কয়েক বছর যাবৎই বৃষ্টির মৌসুম আসলেই নারায়ণগঞ্জের পত্র-পত্রিকাসহ জাতীয় মিডিয়ায়ও জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনের সড়কটির বেহাল দশা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ এখন একটি ধারাবাহিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এখানকার সড়কটির নাজেহাল অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

 

এরই মধ্যে প্রায় একমাস যাবৎ জ্বলছে না বাংলোর সামনের কোন স্ট্রীট লাইট। একদিকে এখানে কাদা-পানির মাখামাখিতে নাজেহাল সড়ক দিয়ে চলাচল করা যানবাহন ও যাত্রীগণ। অন্যদিকে প্রায় মাস খানেক যাবৎ এর সাথে যোগ হয়েছে অন্ধকার ভুতুড়ে পরিবেশে। সবকিছু মিলিয়ে এখানকার চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, অন্য সব জায়গার রাস্তা মেরামত হলেও কোন এক অজানা কারণে মেরামত হয় না এখানকার রাস্তা। এমনকি এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও প্রায় একমাস যাবৎ আশেপাশের সব জায়গায় স্ট্রীট লাইট জ্বললেও জ্বলছে না এখানকার স্ট্রীট লাইট। তাই এখানে কোন ভূতের আছর পড়েছে বলে উপহাস করে হতাশা প্রকাশ করছেন তারা।

 

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় খানপুর হাসপাতালের মোড় এলাকা থেকে হাসপাতালের পানির ট্যাংকি মোড় পর্যন্ত সড়কটি অনেকটাই মসৃণ ও নিরাপদ। কিন্তু হাসাপাতালের শেষ প্রান্ত থেকে অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের বাংলো যেখান থেকে শুরু সেখান থেকেই সড়কের বেহাল দশা। দেখা যায় সেখানে ইট বিছিয়ে তার উপর মাটি ফেলে কোন রকম গর্তগুলো থেকে যানবাহন থেকে কিছুটা নিরাপদ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই মাটি বৃষ্টির পানির সাথে মিলে সৃষ্ট কাদায় রাস্তাটি খুবই নোংরা হয়ে আছে। গাড়ির চাকার চাপে সেই কর্দমাক্ত পানি ছিটিয়ে পড়ছে রিকশা, অটো ইজিবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনের যাত্রীদের উপর।

 

সন্ধ্যার পর দেখা যায় চাষাঢ়া থেকে শুরু করে হাসপাতাল ও ডিসির (জেলা প্রশাসক) বাংলোর সংযোগ পর্যন্ত স্ট্রীট লাইটগুলো জ্বলছে অথচ ডিসির বাংলোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন স্ট্রীট লাইটই জ্বলছে না। এখানে বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায় এই বাতি গুলে প্রায় এক মাস যাবৎ জ্বলছে না। তাদের মতে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই বাংলোর আশেপাশের সকল লাইট জ্বলছে কিন্তু শুধু এই বাসভবনের সামনেরগুলোই জ্বলছে না। তারা আরও জানান, এখান রাস্তার চিত্র গত সপ্তাহ খানেক আগে আরও করুণ ছিল। এখানে অনেক বড় বড় গর্ত ছিল, কিছুদিন আগে এখানে ইট এবং ভিটি মাটি দিয়ে গর্তগুলো ভরা হয়। তাই গাড়ি চলতে আগের চেয়ে এখন একটু কম ঝাঁকুনি খায়।

 

এখানে শিবলী নামের এক অটো চালক যুগের চিন্তাকে বলেন, এগুলো পত্রিকায় লিখে কি হবে। প্রতি বছরইতো শুনি পত্রিকায় আপনারা নিউজ করেন, কিন্তু কিছুইতো হয় না। আমরা প্রত্যেক বছর বৃষ্টির সময়ই এরকম দৃশ্য দেখি। আমরা শুনেছি অন্যান্য জায়গার রাস্তাঘাট খারাপ হলেও ডিসির বাসার সামনের রাস্তা থাকে সুন্দর ও নিরাপদ। অথচ এখানে অন্যান্য রাস্তা ঠিক থাকলেও ঠিক থাকে না এখানকার রাস্তা। মাঝে মাঝে দেখি এখানেও মেরামত করা হয়। কিন্তু সেই মেরামতের পর একটি বর্ষাকালও আমরা এই রাস্তা দিয়ে নিরাপদে যাইতে পারি না। তারা কিভাবে মেরামত করে জানি না। এই রাস্তার সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দেওয়ার মতো কোন ইঞ্জিনিয়ার কি আমাদের দেশে নাই।

 

হাজীগঞ্জ এলাকার রিকশা যাত্রী সালেহা আক্তার বলেন, আমি নিয়মিত এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। আমার মনে হয় কমপক্ষে পাঁচ বছরের ভিতর এই রাস্তার কোন পার্মানেন্ট কাজ করা হয়নি। কারণ প্রতিবছর বর্ষাকাল এলেই আমরা এই একই ধরণের ভোগান্তিতে ভুগি। সমস্যা যখন চুড়ান্ত পর্যায়ে যায় তখন মানুষ গালাগালি করতে থাকে। আপনারাও লেখালেখি করেন, আর দায়িত্বরতরা কোন রকমের লোক দেখানো মেরামত করে দিয়ে যান। তারপর যেইকে সেই। অর্থাৎ আবার সেই একই চিত্র।

 

ছবি তুলতে দেখে বাইক আরোহী রিফাত বলেন, কি করবেন ভাই এগুলো লিখে। এখানে মনে হয় কোন ভূত আছে। দেখেন না, আশেপাশের সব জায়গার বাতি জ্বলে কিন্তু এখানকার বাতি জ্বলে না। এখানে ডিসির বাসভবন, এখানকার রাস্তাই ভাঙ্গা, আবার এখানেই অন্ধকার। বলেন তো কোন আজব জেলায় বাস করি! অন্যকোন জেলার মানুষ এখানকার দৃশ্য দেখলে এই নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে তারা কি ধরণের ধারণা নিয়ে যাবে বলেন তো। ভাববে জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনেই যেহেতু এমন অবস্থা, সারা নারায়ণগঞ্জের অবস্থা না-জানি কতটা নাজুক। এখান দিয়ে জেলা প্রশাসক প্রতিদিন যাতায়াত করেন অথচ বিষয়টি নিয়ে তিনিও কিছু করছেন না।

 

এই বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নারায়ণগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক যুগের চিন্তাকে বলেন, আমিও বিষয়গুলো দেখেছি। এই কাজগুলোর দায়িত্বে আছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। আমি সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এস.এ/জেসি  
 

এই বিভাগের আরো খবর