সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে করোনা টিকা দিতে টাকা দাবি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে বিদেশগামী এক নারীকে টিকা দেওয়ার কথা বলে চার হাজার টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে বাপ্পী নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে বিদেশগামী এক নারীকে টিকা দেওয়ার কথা বলে চার হাজার টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে বাপ্পী নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে বিদেশগামী এক নারীকে টিকা দেওয়ার কথা বলে চার হাজার টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে বাপ্পী নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই যুবকের হাসপাতালের কোনো কর্মচারী না হলেও তাকে প্রায় সময়ই হাসপাতলে দেখা যায়। সে স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি হয়ে হাসপাতালে ঘোরাফেরা করে।


অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীও এই ঘটনার সাথে জড়িত। তারা টাকার বিনিময়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে দ্রুত টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। এমনকি মোবাইলে ম্যাসেজ ছাড়াও টিকা নেওয়া যায় ওই চক্রের সাহায্যে। একটি দালাল চক্র এই ঘটনায় বেশ কয়েকদিন যাবৎ সক্রিয় রয়েছে। ভুক্তভোগী নারী ঝর্না আক্তার জানান, গত রোববার (৩০ জানুয়ারি) তিনি নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যান টিকা নিতে।

 

নগরীর জল্লারপাড় এলাকার বাসিন্দা এই নারী যাবেন সৌদি আরব। টিকা নিতে গেলে তাকে একজন জানায়, ম্যাসেজ ছাড়াই ওইদিনই টিকা দেওয়া যাবে। তবে সরকারিভাবে বিনামূল্যের টিকার জন্য লাগবে ১০ হাজার টাকা। টাকার পরিমাণ শুনে টিকা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে ওই সময় হাসপাতালে থাকা বাপ্পী নামের ওই যুবক ঝর্নার সাথে আলাপ করেন। বাপ্পী ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে বলে জানায়। পরে ওই নারী রাজি হন। ম্যাসেজ ও লাইন ছাড়াই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় বাপ্পী। ঝর্নার সাথে থাকা তার খালুও ম্যাসেজ ছাড়াই টিকা দেন ওইদিন।


ঝর্না প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, টিকা নিলেও টাকা না দিয়েই চলে আসেন তিনি। পরদিন পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে নিবন্ধন করে ম্যাসেজের জন্য বলেছিল বাপ্পী। ওইদিনই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি। এদিকে টাকা না পেয়ে বারবার ফোন দিতে থাকে বাপ্পী। টাকা না দিলে টিকার ম্যাসেজ যাবে না এবং পরবর্তী ডোজের টিকা দিতে পারবেন না বলেও ভয় দেখান।

 

পরে এক আত্মীয়কে (নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স চালক) নিয়ে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে হাসপাতালে যান ঝর্না। এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। ওই সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শেখ ফরহাদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ মোস্তফা আলী। তাদের কাছে বিস্তারিত জানান ওই নারী।


অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাপ্পী নামে ওই যুবক মুঠোফোনে প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এলাকার পরিচিত হওয়ায় তিনি ঝর্না নামে ওই নারীকে সহযোগিতা করেছিলেন। তবে টাকা নেননি, এমনকি কোনো টাকাও চাননি বলে দাবি করেন বাপ্পী। তিনি বলেন, ‘তিনি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপ্রেজেন্টেটিভ হয়ে হাসপাতালে কাজ করেন। আজ দুপুরে তিনি হাসপাতালে যাননি। তিনি থাকলে বিষয়টি খোলাসা করতে পারতেন।’


ম্যাসেজ ছাড়াই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা কীভাবে করে দিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে বাপ্পী বলেন, হাসপাতালে তো এইটা অহরহ ঘটে। লাইনে না দাঁড়িয়েও টিকা দেওয়া যায়। এই বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. শেখ ফরহাদ প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, টিকা নেওয়া নারী যে যুবকের কথা বলেছেন সে হাসপাতালের কেউ না। সে বহিরাগত। হাসপাতালে টিকা নিতে আসা অনেক লোক থাকে। তাদের মাঝখানে কিছু অসাধু লোকও ঘোরাফেরা করে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও সচেতন থাকবে। ম্যাসেজ ছাড়া টিকা ব্যবস্থা কীভাবে হলো, এই বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমও বলেন, ‘এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ভলেন্টিয়াররাও তাহলে জড়িত রয়েছে।

 

কেননা ম্যাসেজ এসেছে কিনা তা নিশ্চিত করেন ভলেন্টিয়ারা।’ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, বিনামূল্যের টিকা প্রদানে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এইটা কেউ করলে সে বড় অপরাধ করেছে। টিকা প্রদানে অনিয়ম করলে কিংবা এর সাথে হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সাধারণ মানুষকেও দালালের খপ্পরে না পড়ার জন্য সচেতন থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরো খবর