রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

মশা মানছেনা মশারি, জীবন করছে অতিষ্ঠ

তানজিলা তিন্নি

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# ফগার মেশিনের ওষুধ পাচ্ছেনা অভিযোগ কাউন্সিলরদের
# প্রতিটি ওর্য়াডে মশা নিধনের কার্যক্রম চলছে : শ্যামল চন্দ্র পাল

 

 

নারায়ণগঞ্জে মশার উপদ্রবের বিষয়টি বর্তমানে বহুল আলোচিত। বছরব্যাপী মশার উপদ্রবের বিষয়টি নগরবাসীর মনে ডেঙ্গু রোগের শঙ্কা বাড়ায়। তবে বর্তমানে ডেঙ্গুর শঙ্কা কম। কারণ বর্তমানে কিউলেক্স মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে সাধারণত প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই মশার প্রাদুর্ভাব থাকে। এই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কর্তৃপক্ষের মশক নিধনের কর্মসূচি থাকলেও পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়েই বেড়েছে মশার উপদ্রব। এই অবস্থায় নগরবাসী মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। কেউ কেউ আবার অজান্তেই ভয় পাচ্ছে ডেঙ্গুরোগের। যার ফলে যে কোনো মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেলেই জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। শীত বাড়ার সাথে সাথেই ঘরে-বাইরে সব জায়গায় মশার উপদ্রব বেড়েছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

 

তাদের মতে, নিয়মিত মশক নিধন র্কাযক্রম পরিচালনা করা হয়না। মশক নিধনের জন্য যে স্প্রে ব্যবহার করা হয় সেটি তেমন কার্যকরী নয়। মশা নিয়ন্ত্রণে জলাশয়, নর্দমা ও আবর্জনা পরিষ্কার করার পাশাপাশি লার্ভা নিধন করাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র পাল যুগের চিন্তাকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রতি ওর্য়াডের কাউন্সিলরদের মশক নিধনের মেশিন ও ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তারা সেই মশক নিধনের সাহায্যে প্রতিটি ওর্য়াডে মশা নিধনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে মশার উপদ্রব বাড়ায় আমরা স্পেশাল টিমের সাহায্যে শহরে মশা নিধনের কাজ করছি। তবে তার কথা অনুযায়ী শহরে মশার উপদ্রবের বর্তমান অবস্থা আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি।

 

নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে থাকে। তবে সে সব উপায় অবলম্বন করেও মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার মিলছে না। কয়েল জ্বালিয়ে, মশার ওষুধ স্প্রে করেও মশার হাত থেকে মিলছে না নিস্তার। তবে এসব উপায় জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মশার কয়েলে যে পরিমান ধোঁয়া উৎপন্ন করে, তা ১০০টি সিগারেটের ধোঁয়ার সমান। এর ফলে অনেক রকম স্নায়ুঘটিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরকম অবস্থায় মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে করণীয় সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে দৈনিক যুগের চিন্তা।  

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়াডের কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ফগার মেশিনে ব্যবহার করা হয় যে ঔষধ সেই ঔষধটা শেষ হয়ে গেছে। এই ঔষধটা তো বাহিরেও কোথাও পাওয়া যায় না। এর পাশাপাশি ফগার মেশিন ব্যবহারে প্রচুর পরিমাণ অকটেনের খরচ হয়। তবে তা আমরা বাহির থেকেই কিনে ব্যবহার করতে পারি কিন্তু ঔষধটা না থাকার কারণেই ফগার মেশিনটা ব্যবহার করতে পারছি না। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি, তারা বলেছে যে দিবে কিন্তু এখনও তা দিচ্ছে না। তবে আমরা যে হ্যান্ড মেশিনটা রয়েছে সেটি ব্যবহার করছি মশা নিধনের জন্য।

 

এ দিকে মশার উপদ্রব বেড়েছে নারায়ণগঞ্জের ৮ নং ওর্য়াডেও। এই এলাকার মানুষের জীবন মশার কারণে অতিষ্ঠ। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় এখানে মশা নিধনের কোনো র্কাযক্রম তাদের চোখে পরছে না। এবিষয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. রুহুল আমিন যুগের চিন্তাকে বলেন ফগার মেশিনের যে ঔষধটা রয়েছে সেটি সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। অনেকবার বলেছি দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা দেই দেই বলে দেওয়ার কোনো খবর থাকে না  বর্তমানে মশার অনেক উৎপাত বেড়েছে যার কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। তবে নিয়মিত হ্যান্ড স্প্রে ব্যবহার করে আসছি।

 

একই চিত্র দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ সিটির ১০ নং ওয়ার্ডে। সেখানকার মানুষ রাতের বেলায় মশারির সাহায্যে মশার থেকে বাঁচলেও দিনের বেলায় মশার কামড়ে ভীত হয়ে থাকে। কেউ কয়েল ব্যবহার করে আবার কেউ স্প্রে ব্যবহারসহ নানান উপায় অবলম্বন করে তারা মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য। দৈনন্দিন কাজকর্মে অনেক ব্যাঘাত ঘটে এই মশার জন্য। কর্মস্থল বা দোকানে দিনের বেলায় বসা যায় না। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন যুগের চিন্তাকে বলেন, আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আমি এ ব্যাপারে আপনাকে কিছু বলতে পারবো না।

 

মশা নিধনের বিষয়ে নাসিকের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ যুগের চিন্তাকে জানায়, মশার উপদ্রব চরমভাবে বাড়ছে। আমার ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকালে দুই ঘন্টা করে স্প্রে ঔষধটা দেওয়া হয়। কিন্তু ফগার মেশিনটা বর্তমানে ব্যবহার করতে পারছি না মূলত ঔষধের কারণে। ফগার মেশিনটা ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন অকটেন। এছাড়া আরো বেশি যেটা প্রয়োজন সেটি হলো মানুষের সচেতনতা।

 

অতিষ্ঠ ১৫ নং ওয়ার্ডবাসীর এ বিষয় একই মতামত। তারাও মশার তাড়নায় অতিষ্ঠ। ১৫ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, শীতকালে মশাটা একটু বেশিই থাকে। এ জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। মশা ঔষধ দেওয়ার জন্য পাঁচজন লোক রয়েছে। তারা প্রতিদিন প্রতিটি এলাকায় স্প্রেটা দিচ্ছে। আর ফগার মেশিনটা ব্যবহার করা হচ্ছে না। আসলে গত দু’মাস আগেও ফগার মেশিনটা ব্যবহার করেছিলাম। বর্তমানে ফগার মেশিনের ঔষধটা নেই।

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের ১৭ নং ওয়াডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আব্দুল করিম বাবুর সাথে কথা বললে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, এবিষয় আমি মেয়র মহাদয়ের সাথে কথা বলবো। তবে আমাদের মশক নিধন কর্মীরা প্রতিদিন মশা নিধনের জন্য সকালে স্প্রে ব্যবহার করছে। তার মতে ফগারে মশা যায় না এটা শুধু মাত্রই ধোয়া। এতে সাধারন মানুষের ক্ষতি হয়।

 

কাউন্সিলরদের অভিযোগ যে ফগার মেশিনের ঔষধ তাদেরকে সিটি কর্পোরেশন থেকে দেওয়া হয়নি, কারণ ওষধ তাদের কাছে নেই। তবে এ বিষয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র পাল যুগের চিন্তাকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনে পর্যাপ্ত পরিমান মশক নিধনের ঔষধ রয়েছে। যার যখন যত টুকু দরকার পড়ে আমরা তাদের মশা নিধনের জন্য দেই।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর