Logo
Logo
×

স্বাস্থ্য

মহিলাদের আলট্রাসনোগ্রাফি করে পুরুষ ডাক্তার

Icon

মেহেদী হাসান

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪৭ পিএম

মহিলাদের আলট্রাসনোগ্রাফি করে পুরুষ ডাক্তার

 

# এটা মহিলাদের একটা মানসিক যন্ত্রণা : এবি সিদ্দিক  
# যারা ধার্মিক তারা করাবেনা :  সিভিল সার্জন

 

 

সারাদেশে স্বাস্থ্য সচেতনতায় সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের রোগীদের সেবার মান নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন সরকার। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের দায়িত্ব অবহেলা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীদের বাইরে দাঁড় করিয়ে খোশগল্পে মেতে উঠতে কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তাদের সাথে আড্ডায়  মত্ত হতে দেখা যায় সরকারি হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তারদের। অনেকে আবার রুমে দরজা লাগিয়ে মোবাইল ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে সময় পার করছেন।

 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পুরুষ ডাক্তাররা মহিলা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার ও নার্সদের দুই শিফটে ডিউটি দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ডাক্তার বা নার্সরা তাদের সময় অনুযায়ী ডিউটি পালন করেন না। তারা ডিউটি শেষ হবার ২-৩ ঘন্টা আগেই চলে যায়। গতকাল ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফি বিভাগের মহিলাদের আলট্রাসনোগ্রাফি করছেন পুরুষ ডাক্তার। এতে বেশির ভাগ মহিলা রোগী অস্বস্তিবোধ ও লজ্জাবোধ করছে।

 

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, আলট্রাসনোগ্রাফি বিভাগের ডাক্তার মামুন উর-রশিদ রোগীকে সেবা না দিয়ে মোবাইল ফোনে খোশগল্পে মেতে উঠতে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন রোগী জানান, আমি গাইনী বিভাগের ডাক্তারকে দেখিয়েছি। সে আমাকে আলট্রাসনোগ্রাফি করে নিয়ে আসতে বলেছে। আমি বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে এ আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য পাশের রুমে ১১০ টাকা ভিজিট দিয়েছি। সেখান থেকে আমাকে বলেছে ১১৬ তে পরীক্ষা করার জন্য। আমি সেই রুমে যাবার আগে ডাক্তারের কর্মরত এম.এল.এস রোজিনা বলেন আপনে বাহিরে বসেন।

 

স্যার ব্যস্ত, পরে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে দেখি ডাক্তার মামুন উর-রশিদ মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। তাকে গিয়ে পরীক্ষার কথা বললে সে বলেন আপনি বাহিরে দাঁড়ান আমি আপনাকে ডাকব, পরে আরও ১০ মিনিট চলে গেলেও ডাক্তার মামুন এর মোবাইল এর কথা শেষ হয় না। পরে আমি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না করে চলে আসি। এ বিষয়ে আরও কয়েকজন রোগী জানান, সরকারি হাসপাতালে মহিলা আলট্রাসনোগ্রাফি পুরুষ ডাক্তার করেন, এতে প্রায় সময় আমাদের লজ্জায় পড়তে হয়। সরকারি হাসপাতালে মহিলাদের জন্য কেন মহিলা আলট্রাসনোগ্রাফি ডাক্তার নেই।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নারীদের আলট্রাসনোগ্রাফি পুরুষ ডাক্তার দিয়ে করে সেটা আমরা মুসলিম দেশে মেনে নিতে পারছি না। এতে আমাদের মা-বোনরাও অস্বস্তি বোধ ও লজ্জা বোধ করে। সুতরাং আমি মনে করি এটা মহিলাদের একটা মানসিক যন্ত্রণা, তাই এই আলট্রাসনোগ্রাফি মহিলা দিয়েই করা উচিত। এই ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল অনেক পুরনো, এই হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য যদি মহিলা ডা. না থাকে তাহলে আমি মনে করি এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’র জন্য ব্যর্থতা এবং আমাদের জন্য এটা লজ্জা।

 

অতি তাড়াতাড়ি যদি এই হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাফি মহিলা ডাক্তার দিয়ে না করায় তাহলে আমরা হাসপাতাল ঘেরাও করব। রোগীকে বাহিরে রেখে সেবা না দিয়ে মোবাইল ফোনের কথার বিষয়ে এবি সিদ্দিক আরও বলেন, সরকারি হাসপাতাল হচ্ছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, এখানে সেবা আগে দিতে হবে পরে মোবাইল ফোনে কথা বলতে হবে। রোগীকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে ডাক্তার রুমের ভেতরে মোবাইলে কথা বলবে এটা আমরা নিন্দা জানাই। এবিষয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সংগঠনের সভাপতি হাজী নুর উদ্দিন জানান, পুরুষ ডাক্তার দিয়ে  মহিলাদের আলট্রাসনোগ্রাফি করা ঠিক না। এখানে যারা অভিজ্ঞ নার্স বা মহিলা ডাক্তার আছে তাদের দিয়ে করানো উচিত। আমরা নারায়ণগঞ্জ বাসীর পক্ষ থেকে এর নিন্দা জানাই।

 

আলট্রাসনোগ্রাফি মহিলাদের পুরুষ ডাক্তার করায় এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তার আছে, উনি যখন নাইট করে তখন অন্য ডাক্তার করে। আমাদের এখানে সীমিত ডাক্তার, এখানে তো গাইনী রোগীর পুরুষ ডাক্তার হলে কিছু করার নেই। যারা ধার্মিক তারা করাবেনা। এটাকে আপনারা কোন ইস্যু দাঁড় করাবেন না। রোগীকে রেখে ডাক্তারের মোবাইল ফোনের কথার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আগে রোগীটাকে দেখে পরে তার ফোনে কথা বলা উচিত। এবিষয়ে রোগী লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এস.এ/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন