শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

মাঠের রাজনীতিতে শক্তিশালী হচ্ছে ইসলামী দলগুলো

রাকিবুল ইসলাম :

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৪  

দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর যাবত ইসলামী দলগুলো মাঠের রাজনীতিতে তেমনভাবে ফিরতে না পাড়ায় অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে জামাতে ইসলামী দলকে কোন ভাবেই মাঠে ময়দানে প্রোগ্রাম করতে দেয় নাই বিগত সময়েয় ক্ষমতাচ্যুত সরকার। তবে ৫ আগষ্ট এই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর এখন ইসলামী দলগুলো নিজেদের মতো মাঠের রাজনীতিতে সভা সমাবেশ করে মানুষের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে নিচ্ছে। সেই সাথে যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের মতো করে সভা সমাবেশের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করছে। পাশাপাশি দীর্ঘ দিন মাঠে না থাকা কর্মীদের সক্রিয় করছে।

 

গত ৫ আগষ্টের পর নারায়ণগঞ্জের সবকটি ইসলামী দলের কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে। দলগুলো বিভিন্ন থানায় শহরে তাদের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে তুলতে প্রোগ্রাম করে যাচ্ছে। এছাড়া দলীয় সহযোগী  সংগঠনকে চাঙ্গা করে তুলছে। তার মাঝে নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলাম বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত পারিবারের পাশে দাড়িয়েছে অর্থ নিয়ে। কালিবাজার আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ্য ব্যবসায়ীদেরও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সেই সাথে সভা সমাবেশের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী হচ্ছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে রাজনীতির মাঠে নামতে না পাড়ায় দলীয় কার্যক্রম চালাতে পারে নাই। এখন কোন বাধা না থাকায় দলটি দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে কর্মীদের সক্রিয় করে তুলছে।

 

 

গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে ইউনিয়ন জামায়াতের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির মমিনুল হক সরকার। এছাড়া মহানগর জামায়াতের আমির হিসেবে দক্ষতার সাথে দলকে পরিচালনা করছে কেন্দ্রী্য় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা আবদুল জব্বার। একই দিনে দুপুরে নগরীর খানপুর চিলড্রেন পার্কে ইয়ুথ ফোরাম অব নারায়ণগঞ্জের আয়োজিত যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

 


অপরদিকে জেল জুলুম নির্যাতনের পরেও বিভিন্ন ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জ হেফাজতে ইসলাম সক্রিয় ছিলেন। সম্প্রতি ৫ আগষ্টের পরে নারায়ণঞ্জ জেলা মহানগর হেফাজতে ইসলামের কমিটি ঘোষনার মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন মনির হোসেন কাসেমী, মহানগর হেফজতে ইসলামের সভাপতি হন মাওলানার হারুনুর রশিদ,সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মীর আহম্মদ উল্লা ফুয়াদ। এই কমিটি ঘোষনার আগে মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ দিন জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে নেতৃত্ব দিয়েছে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। অপরদিকে জেলায় সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে মাওলানা আব্দুল আউয়াল। 

 

সম্প্রতি ৫ আগষ্টের পরে তাদের মাঝে দুরত্ব তৈরী হওয়ায় মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে জেলার উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়। আর মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানকে জেলা হেফাজতের সহ সভাপতি হিসেবে রাখা হয়। তবে মহানগর হেফাজতের শীর্ষ দায়িত্বে নেয়া দুজনেই মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন। তবে তারা কাদিয়ানীদের নিষিদ্ধ সহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। এখন ৫ আগষ্টের পরে মনির হোসেন কাসেমীকে নিয়ে নতুন ভাবে আরও শক্তিশালী হওয়ার জন্য কর্মীদের নিয়ে সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। তাছাড়া মনির হোসেন কাসেমী ২০১৮ সনের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানের বিপক্ষে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে পরাজীত হন । অভিযোগ রয়েছে তাকে পিস্তল ঠেকিয়ে নির্বাচনের মাঠে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে তখন।

 


এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ইসলামী আন্দোলনও ৫ আগষ্টের পরে থানা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা সমাবেশ করে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করছেন। সেই সাথে বাস ভাড়া কমানো সহ তারাও বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম নিয়ে মানুষের কাছে তাদের দলের অবস্থান তুলে ধরছেন। এছাড়া দলকে শক্তিশালি করার জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রমেও তারা কোন অংশে পিছিয়ে নেই। গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বাদ জুমআ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নাসিক ২২নং ওয়ার্ড শাখার বন্দর ১নং খেয়া ঘাটে গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইন সাকি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সাবেক সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ।

 


তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর খেলাফত মজলিশও তাদের মত করে থানা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিনিধি সম্মেলন করে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করে তুলছেন। তারই ধারা বাহিকতায় গতকাল খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ওয়ার্ড প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তারাও তাদের মত করে  সাংগঠনিক ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। খেলাফত মজলিশ নেতৃত্বে রয়েছেন মহানগর সভাপতি ডাঃ শরীফ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আহমদ, খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা আহমদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

 


কিন্তু বিগত সকারের আমলে তারা কেউই প্রকাশ্যে বড় আকারে সভা সমাবেশ করতে পারে নাই। সভা করতে গেলেও তাদেরকে প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়া কথা বলে তা আর করতে দেয়া হত না। কিন্তু ৫ আগষ্টের পরে প্রতিটি ইসলামী দলই নিজেদের শক্তিশালী করার জন্য সভা সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে তুলছেন।

 


মহানগর হেফাজতে ইসলামের সহ সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, দুর্নীতি সহ জুলুম-নিপীড়ন স্থায়ী নির্মূলে আমরাও আগেও মাঠে ছিলাম এখনো আছি। তাছাড়া দেশের আমূল সংস্কার প্রয়োজন একটি ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আমরা চাই সকল অনাচার চিরতরে দূরীভূত হয়ে যাক। সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে কুরআন সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।


নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মমিনুল হক সরকার বলেছেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা কোথায় এখন? আপনাদের যে অপকর্ম, এদেশের মানুষ যদি আপনাদের ধরতে পেতো তাহলে পিটিয়ে পিঠের চামড়া উঠিয়ে নিতো।


মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমার আদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে সদর্স সংগ্রহ করছে। একই সাথে বিগত সরকারের আমলে মানুষ যতটা নির্যাতিত ছিল তার পুনরাবৃত্তি যেন ঘটে তার জন্য মানুষের কাছে দাওয়াত পৌছানো হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণ সমাবেশ চলছে, যাতে করে মানুষ সহজে আমাদের দাওয়াত পায়।

এই বিভাগের আরো খবর