কথায় বলে "কারো পৌষ মাস,কারো সর্বনাশ"। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পরপর পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মাদক ব্যবসার অবাধ বিস্তৃতি দেখে তেমনটিই মনে হয়। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে বিগত সরকার পতনের সাথে সাথে পুলিশের কার্যক্রম থেমে যায়।প্রাণভয়ে পুলিশ কর্মস্হল ত্যাগ করে আত্নগোপনে চলে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে পুলিশ স্হাপনা সমূহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
লুটপাট হয় অস্ত্র সহ বিভিন্ন সামগ্রী। অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় অনেক স্হাপনা। নিহত হয় অনেক পুলিশ সদস্য।আন্দোলন চলা কালীন সময়ে ছাত্র জনতার ওপর পুলিশের নির্মম আচরণ সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেনি তাই তারা জনরোশের শিকার হয়েছে একথা যেমন সত্য পাশাপাশি লুটেরা এবং অপরাধ প্রবণ একটি গোষ্ঠী পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে অসাধু উদ্দেশ্যে মাঠে নেমে পড়েছে তাও অস্বীকার করা যাবে না।
অন্তর্র্বতী কালীন সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে কার্যকর করতে যা এখনও পুরোপুরি সম্ভব হয়ে উঠেনি।বলা চলে পুলিশি ব্যবস্থা এক প্রকার অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।পুলিশের এমন সর্বনাশা অবস্হায় অপরাধী চক্র মহানন্দে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।তাদের জন্য যেন প্রবাদ বাক্যের পৌষ মাস চলছে।
মাদক ব্যবসা এবং সেবন প্রায় বাধাহীন অবস্হায় পৌঁছেছে।মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা কখনই তেমন কার্যকর ছিল না বরং এই সর্বনাশা ব্যবসায় তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরও যতটুকু ভূমিকা ছিল তাও না থাকায় মাদক সেবন এবং ব্যবসা রমরমা অবস্থায় পৌঁছেছে। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধ সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
সংবাদে প্রকাশ বন্দর এলাকায় মাদক ব্যবসা দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে।আগে মাদক ব্যবসা নিয়ণ্ত্রিত হতো গুটি কয়েক চিহ্নিত ক্ষমতাশালী ব্যক্তির হাতে,ক্ষমতার পালাবদলে তারা গা ঢাকা দিয়েছে, পাশাপাশি পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অসংখ্য মাদক ডন গজিয়ে উঠেছে।নিরীহ এলাকাবাসী কোন রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না শিথিল আইন শৃঙ্খলাজনিত কারণে।
হাতের মুঠোয় মাদকদ্রব্য চলে আসায় মাদক সেবীর সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। কিশোর শ্রেণীর বড় একটি অংশ নতুন করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।তরুণ সমাজের মাদকাসক্ত হয়ে পড়া দেশ ও জাতির জন্য সবসময়ই অন্যতম প্রধান সমস্যা।এ সমস্যা সমাধান কল্পে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবস্হা গ্রহণের কথা বলা হলেও তা কখনই কার্যকর হয়নি,রয়ে গেছে কাগজে কলমে।
এর প্রধান কারণ লাভজনক এ ব্যবসায় ক্ষমতাবান ব্যক্তি এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা। তরুণ ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে যখন দেশে অভূতপূর্ব এক অভ্যুত্থান ঘটে গেল তখন একই প্রজন্মের বড় একটি অংশ মাদকের ভয়াল থাবায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই কষ্ট হয়। দীর্ঘ দিনের প্রকট সমস্যা সমূহ রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু সমস্যার আশু সমাধান প্রয়োজন।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নত এবং কার্যকর করার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে। তরুণ সমাজের বড় একটি অংশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন করে গজিয়ে ওঠা মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে জাতির জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর এক পরিনাম। মাদকাসক্ত প্রতিটি ব্যক্তি ভাল মন্দের ফারাক বুঝতে অক্ষম।
তারা অসুস্থ,বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত। মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির আওতায় আনা সময়ের দাবি।ইমেজ হারানো পুলিশ বাহিনী মাদক নির্মূলে কার্যকর ভুমিকা পালন করে তাদের হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলে তা হবে পুলিশ বাহিনীর বড় অর্জন।জাতি পাবে মাদক মুক্ত দেশ।
এক্ষেত্রে রাস্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত সরকারের নিঃশর্ত সহযোগিতার পাশাপাশি দেশের আপামর জনসাধারণের সমর্থন সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে বলে সচেতন মহলের বিশ্বাস।মাদকের ভয়াল থাবায় দেশের প্রায় প্রতিটি অঞলই আক্রান্ত।শিল্প সমৃদ্ধ, ঘন বসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলসমূহের অন্যতম।অপরাধ প্রবণতা এবং সণ্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যও নারায়ণগঞ্জের নাম বারবার সংবাদ মাধ্যমের খোরাক হয়।
সণ্ত্রাসী কর্মকান্ডের অন্যতম প্রভাবক মাদক।মাদক নির্মূল করতে পারলে সিংহভাগ অপরাধ কমে আসবে।কতিপয় অর্থ ও ক্ষমতা লিপ্সু দুর্বৃত্তের কারণে সণ্ত্রাস ও মাদকের জনপপদে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ।শান্তিপ্রিয় নারায়ণগঞ্জ বাসী এমন কলঙ্ক তিলক থেকে মুক্তি চায়। বিভিন্ন কারণে এতদিন যা সম্ভব হয়নি তা সম্ভব করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে।
নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্ক মুক্ত করার এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন এলাকাবাসীর সমন্বিত প্রয়াস, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং জবাবদিহিতা।এমন সন্মিলিত প্রয়াস নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ এগিয়ে আসবেন,নারায়ণগঞ্জ পরিণত হবে প্রকৃত অর্থেই শান্তির জনপদ, তেমন সুদিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে নারায়ণগঞ্জ বাসী। লেখক: বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা। এন. হুসেইন রনী /জেসি