মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আশ্বিন ১ ১৪৩১

মিষ্টির প্যাকেটে চাঁদাবাজির রামরাজত্ব

সৈয়দ রিফাত

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

 

# জমি কিনলে চাঁদা, বাড়ি করলে চাঁদা, ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জায়গায় দোকান বসিয়ে চাঁদা, জোরপূর্বক ডিস ও ইন্টারলাইন ব্যবসা, মাদক ব্যবসাসহ অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ বিপ্লব ও তার সহযোগী জামান, সফর ও দেলোয়ার পন্ডিতের বিরুদ্ধে

 

জানে আলম বিপ্লব। যাকে ফতুল্লার পুরো তল্লা এলাকাজুড়ে মানুষ যুবলীগ নেতা হিসেবেই চেনে। আদৌতে যুবলীগে ওয়ার্ড পর্যায়েও তার নেই কোন পদ পদবী। তবে, নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ায় পুরো তল্লাজুড়ে সন্ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করা বিপ্লব এখন নিখোঁজ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আর শামীম ওসমানের পলায়নের কারণে এলাকা ছাড়তে হয়েছে যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব ও তা সহযোগী জামান, সফর ও দেলোয়ার পন্ডিত। যদিও সম্প্রতি এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর শেল্টারে বিপ্লবের সহযোগীরা আবার ফেরত এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ছত্রছায়ায় বৃহত্তর তল্লা, সবুজবাজ, জেলা পরিষদ এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নেই যা বিপ্লব ও তার সহযোগীরা করে বেড়াতো না। পুরো এলাকায় কেউ জমি কিনলে চাঁদা, বাড়ি তৈরি করলে চাঁদা, গার্মেন্টেসের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জায়গায় দোকান বসিয়ে চাঁদা, জোরপূর্বক ডিসলাইন ও ইন্টারলাইন ব্যবসা, মাদক ব্যবসাসহ অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে জানে আলম বিপ্লবের বিরুদ্ধে।

 

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে ও মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা পরিষদ এলাকায় সরকারি জায়গা দখল করে অফিস খুলে বসেছিল যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব। যেখানে সবসময় অবস্থান করতো ফতুল্লা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহাব কন্ট্রাক্টরের পুত্র জামান, সফর এবং দেলোয়ার পন্ডিত। মূলত তারাই বিপ্লবের সব অপকর্মের রাজ স্বাক্ষী। এদের দিয়েই পুরো এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করতো বিপ্লব।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরো তল্লা এলাকার কোন জায়গায় কেউ জমি কিনতে বা বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে বিপ্লব তার লোকজন জামান ও সফরের মাধ্যমে মিষ্টির খালি প্যাকেট পাঠাতো। সেই প্যাকেট টাকা দিয়ে ভরাট করে দেওয়ার জন্য ওই সকল জমি বা বাড়ির নির্মাণকারী মালিককে ভরাট করে দেওয়ার জন্যে চাপ প্রয়োগ করা হতো। বিভিন্ন আকারভাদে চাঁদা আদায় করতো এই চাঁদাবাজরা। ৩ তলা বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ আর ৬ তলা বা তার বেশি উচু বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হতো বলে জানা গেছে।

 

 এছাড়াও পুরো এলাকায় নিজের সিন্ডিকেটের লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক ডিস ও ইন্টারনেটের ব্যবসা করাতো বিপ্লব। এমনকি জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সরকারি জায়গায় যতো দোকান আছে সেসকল জায়গায় চাঁদাবাজি করতো বিপ্লবের লোক। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক কিশোরগ্যাং সদস্য দিয়ে পুরো এলাকায় বিপ্লব, জামান ও সফরের নেতৃত্বে মাদক বেচাবিক্রি করা হতো বলেও জানা যায়।

 

সচেতন এলাকাবাসী বলছেন, অনতিবিলম্বে এইসকল চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা প্রয়োজন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দিনের পর দিন তারা যা করেছে তা কারোরই বোধগম্য নয়। এদের জন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারতো না। এখন ক্ষমতা হারানোর পর তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ এগুলোকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করানো।

এই বিভাগের আরো খবর