সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৯ ১৪৩১

মুকুল-মাকসুদে দুই এমপি’র ক্ষোভ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১ মে ২০২৪  

 

সেলিম ওসমান

  • # আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কী হাতে চুড়ি পড়েছেন
  • #একজন রাজাকারের সন্তান -ভূমিদস্যু কি করে পোষ্টার লাগায়
  • # বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে নির্বাচন করকে পারবে না

 

শামীম ওসমান

  • টাকার বিনিময়ে ঈমান বিক্রির খবর আমলে নিলে কাল থেকে কেউ মাঠে নামতে পারবে না

 

 

আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে যোগ হচ্ছে একের পর সমীকরণ। সেইদিকে লক্ষ্য করলেই যেন মুকুল-মাকসুদের পতনের ঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছে। এবার মুকুল-মাকসুদকে ঘিরে জোরালো ভাষায় হুশিয়ারী দিয়েছেন সাংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

 

এ ছাড়া ও তারা বন্দরের আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে বন্দরে নির্বাচন করতে পারেন না।  এদিকে মাকসুদকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, কেউ বলে টাকা দিয়ে নির্বাচন করা যায়। এই জনগণ কি এত সস্তা? যে কয়েকটা টাকার জন্য নিজেদের ঈমান বিক্রি করে দিবে। তবে এখানে এসে শুনলাম কেউ কেউ কিছু কথা বলছে। কথা গুলো যদি আমরা আমলে নেই, তাহলে আগামীকাল থেকে কেউ কিন্তু মাঠে নামতে পারবেন না। আমি সেলিম ওসমান না। আমরা জানি কি করতে হবে। তা ছাড়া একজন রাজাকার সন্তান, ভূমি দস্যু কি করে পোস্টার লাগায় তা প্রতিহতের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

তার পর থেকেই বন্দরের উপজেলা নিবার্চনে ঘোমট ভাব দেখা দিচ্ছে। মুকুল-মাকসুদ দুই গ্রুপই কোনঠাসা হয়ে পড়ায় ফর্মে উঠে এসেছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. রশীদ। এদিকে জানা গেছে মুকুল-মাকসুদ দুই ব্যক্তি দুই স্বার্থ নিয়ে নির্বাচনে এসেছেন। মুকুল এসেছেন বিএনপির মতো করে বন্দর উপজেলাকে কোনঠাসায় রূপান্তরিত করতে আর বিগত দিনের মতো জনগণকে ঠকিয়ে নিজের পকেট ভারী করতে। একই সাথে আরেক কুখ্যাত রাজাকার রফিকের ছেলে মাকসুদ হোসেন উপজেলা নির্বাচন করতে চাচ্ছেন তার ভাই ব্রাদার-ভাতিজা ও ছেলেদের সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা পুরো বন্দর উপজেলাকে জিম্মি করতে। তাদের দুইজনের পাতানো চিন্তা-ভাবনায় বারবারই সেলিম ওসমান পানি ডালার চেষ্টা করলে ও এবার শামীম ওসমানের হুঙ্কারে মুকুল-মাকসুদ পতনের ধারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে এমনটাই বলছেন বন্দরবাসী।

 

গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বন্দরে নাসিম ওসমান মডেল হাই স্কুল প্রাঙ্গনে এক মিলাদ মাহফিলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান বন্দর উপজেলার দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসামন বলেছেন, আমরা কারও বাড়ি বাড়ি ডাক দিই নাই। আমরা শুধু বলেছিলাম এই জায়গায় নাসিম ওসমানের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হবে। যাদের পোস্টার উড়ছে তারা কেও উপস্থিত হন নাই। অথচ কয়দিন আগে ‘সেলিম ভাই সেলিম ভাই’ বলতে বলতে তাদের মুখ থেকে ফ্যানা বের হয়েছিল। আজ যারা উপস্থিত আছেন তারা হলেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।

 

বিএনপি বঙ্গবন্ধুর অপমান করে বন্দরে নির্বাচন করতে পারেন না। কোথায় আমার আওয়ামী লীগের কর্মীরা, হাতে কি চুড়ি পরেছেন। একজন রাজাকার সন্তান, ভূমি দস্যু কি করে পোস্টার লাগায়। আর কেউ অবজেকশন দিলে উনি বলেন সরি, আর নির্বাচন কমিশন উনাকে ছেড়ে দেন। সমাজের উন্নতির জন্য, বন্দরের উন্নতির জন্য স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ লাগবে। আমাকে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ দেন। তাকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করতে হবে এবং সেই কাজের ধারা বজায় রাখতে হবে।

 

সেলিম ওসমান আরো বলেন, আমার মায়ের স্বপ্ন ছিল, নাসিম ভাইয়ের স্বপ্নগুলো আমি যাতে পূরণ করি। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি স্কুল করা, নাসিম ওসমান ব্রিজ করা, নবীগঞ্জ ব্রিজ করা। আমি সেভাবেই কাজ করে গেছি এবং সামনেও যাবো। আমি কে, কোন পরিবারের সেটা মূল বিষয় না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রত্যক্ষভাবে সম্মুখদিকে যুদ্ধ করেছি। রশিদ ভাই ছিলেন আমার সহকর্মী। নাসিম ওসমান একজন মুক্তিযোদ্ধা, তার সহকর্মী সানাউল্লাহ সানু।


একই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে উদ্দেশ্য বলেন, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পুর্ণ করার জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেছেন, আমার খুব বেশি ঘৃণা লাগে যখন কেউ বলে টাকা দিয়ে নির্বাচন করা যায়। এই জনগণ কি এত সস্তা? যে কয়েকটা টাকার জন্য নিজেদের ঈমান বিক্রি করে দিবে। তবে এখানে এসে শুনলাম কেউ কেউ কিছু কথা বলছে। কথা গুলো যদি আমরা আমলে নেই, তাহলে আগামীকাল থেকে কেউ কিন্তু মাঠে নামতে পারবেন না। আমি সেলিম ওসমান না।

 

আমরা জানি কি করতে হবে। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হোক। যার কপালে লেখা আছে সে নির্বাচিত হোক। এ সময় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে এখানে যেন কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেটা তোমরা দেখবা।’ বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে শামীম ওসমান বলেন, কেউ কেউ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কিছু কথা বলছেন। আমি কারো ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি আরো দুইটা মুখ এখানে আশা করেছিলাম। এটা তো কোন দলের প্রোগ্রাম না, এটা মিলাদ মাহফিল। এখানে সবাই আসবে।

 

বিভিন্ন কারণে হয়তোবা তার আসেন নাই, সেটা তাদের ব্যাপার। শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে পরিষ্কারভাবে অনুরোধ করছি, ঈমান কেউ বিক্রি করবেন না। কারা কারা নির্বাচন করছে আমি জানিও না। আজকে এখানে এসে কিছু কথা শুনলাম। আমার বড় ভাই সেলিম ওসমানের সামনে কেউ কেউ কিছু কথা বলেছেন। এই কথাগুলো শোনার পরে যদি আজ আমার ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান না হতো, তাহলে হয়তো আমি আজ একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে যেতাম। কিন্তু সেই কাজটা করবো না।

 

তাই যারা কথা বলবেন, বুঝে শুনে কথা বলবেন। কারণ মুখের বুলি ও বন্দুকের গুলি একবার বের হয়ে গেলে আর ফেরানো সম্ভব নয়। আর এটাই শেষ না সামনে আরো সময় আছে। মিলেমিশে ছিলেন, মিলেমিশে থাকেন।’ তিনি বলেন, শামীম ওসমান আরও বলেন, নির্বাচনে কেউ মহরা দেখাবেন না। যদি আমরা ক্ষমতাসীন দল হয়ে ক্ষমতা দেখাতাম তাহলে কিন্তু কেউ নির্বাচন করতেন না।

 

আমরা কাউকে হ্যাঁ/না বলি না। রাজনীতি যদি ক্ষমতার জন্য হয় তাহলে আমি চাইনা আমার সন্তান কিনবা সেলিম ভাইয়ের সন্তান কেউ রাজনীতি করুন। রাজনীতি যদি কাউকে ভালোবাসার জন্য করা হয়, সেটা হচ্ছে ইবাদাত। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা কাজিম উদ্দিনকে স্মরণ করে শামীম ওসমান বলেন, কিছুদিন আগে কাজিম ভাই ও রশিদ ভাই আমার বাসায় এসেছিলেন। আমি রশিদ ভাইয়ের সামনেই কাজিম ভাই কে বলেছিলাম, ভাই নির্বাচনটা এবার আপনি করেন। রশিদ ভাই পাশেই বসা। কাজিম ভাই বললেন, না ভাই; রশিদ ভাই মুরুব্বি নির্বাচনটা উনি করুক।

 

এটাকে বলে রাজনীতি। আমি ঐদিন কাজিম ভাইয়ের কাছ থেকে শিখেছি। শামীম ওসমান আরো বলেন, আমরা কিছু কাজ করতে চাই, বড় বড় অনেক কাজ নিয়ে আসছি। এইমাত্র যখন আমরা এখানে বসা, তখন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের জন্য নির্দেশ এসেছে। বন্দরের নির্বাচনে স্বশরীরে অবস্থান করার জন্য। অন্য সহযোগী সংগঠনের কাছেও ওই নির্দেশ আসবে। আমি একটা কথা বলতে চাই। নির্বাচনের সময় বিনা কারণে আমাদের ছবি ব্যবহার করবেন না। যার যার মত সে সে নির্বাচন করেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর