মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের ‘মাথায় হাত’

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৭ জুলাই ২০২১  

সারাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। দেশে চলছে আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। কঠোর লকডাউনে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষই দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে সবার সমস্যা এক রকম নয়। খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষগুলোর কাছে ‘লকডাউন’ মানেই তিনবেলা খাবারের অনিশ্চয়তা।

 

লকডাউনের কথা শুনেই তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। ঘর থেকে বের হতে না পারলে কেমনে হবে, কাজ না করলে খাবেন কী, কিভাবে সংসার চালাবেন- এ চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম। তাদের মতে, লকডাউন মানেই মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের ‘মাথায় হাত’। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে ৭দিনের কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। দেশে দিনদিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার রেকর্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের এই সিদ্ধান্ত।

 

জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহণসহ যন্ত্রচালিত সব ধরনের যানবাহন, শপিংমল-দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হলেই গ্রেফতার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে এমন বিধিনিষেধে রুটি-রুজি নিয়ে চরম চিন্তিত নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষগুলো। শহরের দুই রেলগেট এলাকায় দিনমজুর হায়দার আলী বলেন, সকাল থেকে কামের আশায় দাঁড়িয়ে আছি। দুপুর হয়ে এলো কাজে নেওয়ার জন্য কেউ আসলো না। একটা কাম দেন ভাই। কাম না করলে পরিবার নিয়ে খামু কি। কাম না থাকলে পেটে ভাতও নাই। লকডাউনে আমাগো মতো গরিব মানুষের মাথায় হাত পড়ছে।

 

মধ্যবয়সি রিকশাচালক জুলমত মিয়া বলেন, দিন আনি, দিন খাই। যেদিন কামাই নাই, সেদিন খাওয়াও নাই- ঠিক এমনই অবস্থা। করোনার সময় রিকশা চালাতে পারছি বলেই কিছু আয়-উপার্জন হচ্ছে। নয়তো না খেয়ে মরতে হতো। রাস্তায় লোকজন কম। তাই ভাড়াও কম। সরকারি সাহায্য পেলে ভালো হতো। কোনো মতে খেয়ে পরে দিন কাটাতে পারতাম। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কাজ করেন আমজাদ আলী। তার কষ্টটাও অনেকটা একই। ১৪দিন কাজ না-করলে বেতন কাটা যাবে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারও অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হবে বলে জানান তিনি।

 

আমজাদ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তো আর কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো আমাদের মতো বেসরকারি কর্মচারীদের। যাদের নুন আনতে পান্টা ফুরায়।শহরের ভ্রাম্যমাণ পান-বিড়ি বিক্রেতা নিখিল চন্দ্র দাস কষ্ট একই রকম। রাস্তায় বের না হলে খাবে কী, তাই নিয়ে সে চিন্তিত। সে বলেন, ঘরে মা ও তিন ছেলে- মেযে রয়েছে। বউ অন্যের বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি কাজ করেন। নিখিল ও তার বউয়ের উপার্জন দিয়েই চলে তাদের পরিবার। লকডাউনে তার আয় অর্ধেকে নেমেছে। রাস্তায় লোকজন কম বলে বিক্রি কম হচ্ছে। এ দুঃসময়ে অন্যের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে জানান তিনি।

 

দিগুবাবুবাজারের দিনমজুর আরমান মিয়া বলেন, বাজারে লোকজন এলে তাদের বাজার-সদাই বাসায় পৌঁছে দেই। তাতে ২০-৫০ টাকা করে দেয়। সারা দিন এভাবে কাজ করে যা পাই, তা দিয়েই চারজনের সংসার চালাই। কোনো ব্যবসা করব যে সে টাকাও নেই। বাধ্য হয়ে দিনমজুরের কাজ করি। কিন্তু লকডাউনে কাজের সুযোগ অনেক কমে গেছে। লকডাউনের জন্য বড় বড় মানুষেরা বাজারে এখন আর আগের মতো আসে না। তাই কাম কম,আয়ও কম। সংসার নিয়ে অনেকটা কষ্টেই আছি।  আমাগো মতো গরিবের দিকে তাকানোর লোক নাই।
 

এই বিভাগের আরো খবর