শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

মোস্তাকিমের মৃত্যুর পরও সচল আল-হেরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪  

 

# আল-হেরা ছাড় পেলে বেপরোয়া হবে আশেপাশের হাসপাতালগুলো

 

নগরীর খানপুর কাজীপাড়া বটতলা আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে টনসেলের ভূল চিকিৎসায় মোস্তাকিম (৮) নামের এক শিশুর মৃত্যুর ৫ দিনে ও কোন প্রকারের ব্যবস্থা গ্রহণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। সদর উপজেলার ফতুল্লা থানধীন বক্তাবলী মধ্যনগর এলাকার বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী পরিবার গ্রামের সহজ-সরল ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় এখনো নগরীর বুকে সচল অবস্থায় রয়েছে এই আল-হেরা জেনারেল হাসপাতাল এমনটাই মনে করছেন সুধিমহল।

 

জানা গেছে, গত রবিবার (১০মার্চ) খানপুর কাজীপাড়া বটতলা আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে আসে। আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে, টনসিলের অপারেশন শেষে বাচ্চার জ্ঞান আর ফিরেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে অপারেশন থিয়েটারে মরদেহ ফেলেই ডাক্তার, নার্সসহ ক্লিনিকের বাকি কর্মকর্তারা সবাই পালিয়ে যায়। যাকে ঘিরে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসা ও অবহেলায় শিশু মোস্তাকিমের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

 

হাসপাতালের মালিকপক্ষের একজন বার বারই বলতে থাকে ছোট বাচ্চাকে ময়না তদন্ত করলে কেমন দেখায় স্বজনদের নানা ভয় দেখিয়ে প্রশাসনিক অভিযোগ ছাড়াই কিছু অর্থের বিনিময়ে রফাদফা হয়ে যায় নিহত মোস্তাকিমের মরদেহ। সে দিন শুধু মোস্তাকিমই নয় আরো রোগীর স্বজনদের ছিলো নানা অভিযোগ অনেকেই সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই বলে উঠে আমার রোগী দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে কিন্তু এখনো তার কোন উন্নতি লক্ষ্য করছি না।

 

অপর দিকে অনেকেই এই হাসপাতালের স্টাফ ও নার্সদের বিরুদ্ধে দিয়েছেন নানা অভিযোগ। নানা অভিযোগ খোলাসা থাকলে ও সিভিল সার্জনের অফিস থেকে ঘটনাটি কি এ বিষয়ে ভালোভাবে তদন্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু পাঁচদিনে কতটুকু তথ্য তুলে আনলো সেই কমিটি তা নিয়ে ও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

 

ঘটনাস্থল থেকে জানা গিয়েছিলো, দীর্ঘদিন যাবৎ টনসিল সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন মোস্তাকিম পরর্তীতে তাদের বক্তাবলীর আত্মীয় আল-হেরা হাসপাতালের মালিক পক্ষেরই একজন কবিরের পরামর্শে আরেক পার্টনার বাবুলের সাথে যোগাযোগ করেন নিহতের বাবা রমজান মিয়া পরে গত শনিবার সকালে খানপুর এলাকার আল-হেরা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মোস্তাকিমকে।

 

পরবর্তীতে বিকাল (৫ টায়) আল-হেরার পাশেই গ্যাস্ট্রোলিভ ডায়াগনস্টিক হাসপাতালের চেম্বারকৃত ভারাটে ডাক্তার ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধায়নে টনসিলের আপারেশন হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নানা আলোচনার প্রেক্ষিতে আরো শোনা গেছে, নিহত মোস্তাকিমকে যখন প্রথম অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয় তখন কোন প্রকারের পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করেই ওটি করতে ডুকালে তার স্বজনরা নানাভাবে চিল্লাফাল্লা শুরু করেন।

 

এতে করে ডাক্তার দ্রতু এক্সরে ও একটি রক্ত পরীক্ষা লিখে দেন পরবর্তীতে সেগুলো করে তাকে আবারো ওটিতে ঢুকানো হয়। এরপর আর মোস্তাকিমের সারা শব্দ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করছেন রোগীর অনেক স্বজনরা। পরদিন সকালে রোগীর স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারে নিহত মোস্তাকিমের দেহ পরে থাকতে দেখে কিন্তু উনি যে মারা গেছেন নাকি জিন্দা আছেন এমনটা জানা নেই কাউর। এমনকি রোগীর ডাক্তারের যত কাগজপত্র রয়েছে সেগুলো একটি ও হাসপাতালে পাওয়া যায়নি।

 

পরবর্তীতে সকালে নানা মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে অনেকেই হাসপাতালে গেলে নিহতের লাশ সেই অপারেশন থিয়াটারেই পাওয়া যায়। মরদেহ ফেলেই ডাক্তার, নার্সসহ ক্লিনিকের বাকি কর্মকর্তাদের আর দেখা যায়নি। সর্বনিম্ন প্রায় ৬/৭ ঘন্টা খালি অবস্থায় পরে থাকে। যা নিয়ে বাকি ভর্তিকৃত রোগীদের বিব্রত অবস্থায় পরতে দেখা গেছে। কিন্তু ঘটনা কোন রকম ধামা-চাপা দিলেই আবারো সচল হয়ে ফিরছেন আল-হেরা তাদের বিরুদ্ধে কি কোন প্রকারের এক্যাশন হবে না এমনটাই বলছে আশেপাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। আরো শোনা যাচ্ছে। আল-হেরা ছাড় পেলে বেপোরয়ো হবে বাকি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলো।

 

সেই ঘটনায় নিহতের বাবা রমজান আলীর অভিযোগ অভিযোগ ছিলো, শনিবার সন্ধ্যায় আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধানে টনসিলের অপারেশনের জন্য ভর্তি করানো হয় মোস্তাকিমকে। অপারেশন শেষে বাচ্চাকে যা যা খাওয়াতে বলা হয়েছে তাই খাওয়ানো হয়েছে। আজকে ভোরে ফযরের ওয়াক্তে প্রসাব করিয়েছি। তারপর ১১টায় একটা ইনজেকশন দিয়েছিলো আর ১২টায় একটা ডোজ দিয়েছিলো, তারপর আর জ্ঞান ফেরেনি। সকালে অপারেশন থিয়েটারে মরদেহ রেখে ডাক্তার, নার্স সহ ক্লিনিকের সবাই পালিয়ে যায়। চিকিৎসকের অবহেলায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারে দাবি পরিবারের।

 

সেই ঘটনায় মালিকপক্ষে কবির হোসন জানিয়েছিলেন, আমি বাড়িতে ছিলাম। এসে শুনেছি শিশুটি মারা গেছে। শিশুর অপারেশন পর বাবা তার বাচ্চাকে জুস ও কেক খাওনোর পর থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। তবে ডাক্তারের চিকিৎসা ভুল ছিল না। আর পরিবার যে অভিযোগ করেছে ১১টায় ইনজেকশন দেয়া হয়েছে এটা সম্পূর্ণ ভুল। ওইটা মূলত ৮টায় দেয়া হয়েছে, আর সেটা ছিলো কাশির জন্য।

 

সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল কুদ্দুস মৃধা জানিয়েছিলেন, জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। বাদি ও বিবাদি যদি কোন অভিযোগ করে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে সিভিল সার্জন, তবে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

 

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান জানান, আল-হেরায় মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের তদন্ত টিম কাজ করছে। তারা কোন পক্ষ না নিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রেখেছেন। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর