রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

মৌমিতার অরাজকতা থামবে কবে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# প্রিপারেটরি স্কুল এবং অনাবিল বাস নিয়ে টনক নড়েছে প্রশাসনের
# এই পরিবহনগুলো ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলাফেরা করে : রফিউর রাব্বি

 

 

নানা সমস্যায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টর। নারায়ণগঞ্জের পরিবহন জগতের আলোচিত কয়েকটি ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল থেকে দাবি উঠছে পরিবহনের ইস্যুগুলো সমাধানের জন্য। এসকল বিষয় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনের কাছে জোড়ালো দাবি জানিয়ে কোন সুরাহা পাচ্ছে না সচেতন মহল। কারণ পরিবহন সেক্টরের অশুভ শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন।

 

যার কারণে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরের নানাবিধ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের টনক নড়ছে না। নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরে সবচেয়ে আলোচিত একটি পরিবহনের নাম মৌমিতা। এই মৌমিতা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন থেকে শুরু করে সচেতন মহলে আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই। কারণ মৌমিতার পারমিট নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত থাকলেও নারায়ণগঞ্জের প্রাণ কেন্দ্র চাষাড়া এলাকায় প্রবেশ করে পূরো শহরকে প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল করে তুলছে। তবে প্রশাসন মৌমিতার বিরুদ্ধে কঠোর হুসিয়ারী দিয়ে অদৃশ্য কারণে নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে।

 

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত পরিবহন মৌমিতাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা বিদ্যমান রয়েছে। এই পরিবহনটিকে নিয়ে প্রশাসন বরাবরই কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে। কারণ বেশ কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ ঘোষণা দেন মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলোকে স্টেডিয়ামে নিয়ে ডাম্পিংয়ে ফেলে দিবেন। কিন্তু এই ঘোষণার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও ডিসির এমন বাস্তব চিত্র লক্ষ্য করা যায়নি। এছাড়া মৌমিতার রুট পারমিট সাইনবোর্ড পর্যন্ত থাকলেও নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে দিব্যি দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

 

তবে এই মৌমিতাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র এবং সিনিয়র সাংবাদিকগণ একাধিকবার মৌমিতাকে নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোন রকম সুরহা পায়নি। মৌমিতার দাপটে শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া যানজটে নাকাল হওয়ার যাওয়ায় মৌমিতা এখন নারায়ণগঞ্জ শহরের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরও প্রশাসনের টনক না নড়ায় নায়াণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবর রহমান মাসুম ডিসিকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম বেঁধে দেন।

 

কারণ গত ২৭ ডিসেম্বরও একটি টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বলেন, জেলা প্রশাসক মৌমিতা পরিবহনকে বন্ধ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অথচ তিনি যখন নারায়ণগঞ্জে আসছেন তখন অনেক বড় গলায় বলেছে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলোকে স্টেডিয়ামের নিয়ে ডাম্পিংয়ে ফেলে দিবেন। স্টেডিয়ামের ডোবার মধ্যে নিয়ে অবৈধ গাড়ি গুলো ডুবিয়ে দিবেন বলেছেন ডিসি নিজে। আমার মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে ডোবার পালা আপনারই হচ্ছে, কিন্তু গাড়ি গুলো এখনো ডুবে নাই। আপনি ব্যর্থ হয়েছেন।

 

মৌমিতা পরিববহনের লাইসেন্স আছে সাইনবোর্ড পর্যন্ত, অথচ তারা বিনা অনুমতিতে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করে শহরের পরিবেশ দূষিত করছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে যানজট সৃষ্টির মূলে মৌমিতা দায়ী। আমি জেলা প্রশাসককে আহবান জানাই আপনি মৌমিতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। তাদেরকে শহরে প্রবেশ করা বন্ধ করতে হবে। নতুবা আমাদেরকে আবারও রাজপথে নামতে হবে। আমরা রাজপথে নামতে চাই না আপনাদের উপর আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু আপনরা যদি আস্থার জায়গায় না থাকেন  তাহলে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।

 

আমি জেলা প্রশাসককে এই মুহুর্ত্বে আল্টিমেটাম দিলাম, ১৫ দিনের মাঝে আপনি যদি মৌমিতাকে বন্ধ করতে না পারেন, তাহলে আমরা রাজপথে নেমে তা বন্ধ করে দিব। সেই অবস্থা যেন সৃষ্টি না হয় আপনি ডিসি হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এই বক্তব্যের পর এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কোন রকম টনক নড়েনি। তবে একটি বিষয় সবচেয়ে ভাবিয়ে তুলেছে নগরবাসীকে অনাবিল বাস নামে একটি পরিবহন মৌমিতার মত সাইনবোর্ড পর্যন্ত পারমিট থাকা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জে শহরে প্রবেশ করে বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছিল।

 

তবে এই অনাবিল এখন নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুলের নাম পরিবর্তন করায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রিপারেটরি স্কুলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কিন্তু মৌমিতাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এতে করে বাধ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক ১৫ দিনের নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দেন।

 

এ বিষয়ে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি যুগের চিন্তাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের এই পরিবহনগুলো ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলাফেরা করে। তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এই পরিবহনগুলো পরিচালনা করে আর এখান থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয় চাঁদা নেয়। নারায়ণগঞ্জে এই সমস্ত পরিবহনগুলো জনদুর্ভোগ তৈরী করার পরেও এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না শুধুমাত্র এই পরিবারটার কারণে এবং দিনের পর দিন বছরের পর বছর এই পরিবহনগুলো দুর্ভোগ কারণ হয়ে থাকছে আমাদের। তারপরও আমি সেখানে বলব প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দল ব্যক্তির উর্ধে উঠে জনমানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, মৌমিতা একটা বিশাল সিন্ডিকেট এই সিন্ডিকেটের সাথে স্থানীয় প্রশাসন প্রভাবশালীরা জড়িত। এরা এই শহরটাকে জিম্মি করে রেখেছে। অনাবিল সরাতে পারলেও মৌমিতাকে সরাতে পারল না কেন তার মানে মৌমিতার বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। আমরা নারায়ণগঞ্জের কোন সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় করি না আমরা যানজট মুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাই।

 

এজন্য কেউ তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তার অপসারণও আমরা চাই। কিন্তু আমরা নারায়ণগঞ্জে যানজটমুক্ত সুন্দর নারায়ণগঞ্জ চাই। তবে জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন সবাই যদি একসাথে কাজ করে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। এরপরও জেলা প্রশাসন ১৫ দিনের মধ্যে কোন রকম ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় নেমেই এটার সুরাহা করতে হবে। প্রশাসনের শাসন চালাতে হলে আমাদের কথা শুনতে হবে জণগনের কথা শুনতে হবে।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর