শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১৩ ১৪৩১

যুদ্ধেরপ্রশিক্ষণে থাকায় মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম ১মাস পর

বীর মুক্তিযোদ্ধা তারক চন্দ্র বাড়ই

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২  

 

একাত্তরে ডিসেম্বর মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানীদের পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছিলাম। নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা তুলে ধরার জন্য এই বিজয়ের মাসে ‘দৈনিক যুগের চিন্তা’য় একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনের কাহিনী তুলে ধরা হচ্ছে। আজ ছাপা হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা তারক চন্দ্র বাড়ই-এর পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমন করার কাহিনী।  

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা তারক চন্দ্র বাড়ই : মুক্তিযুদ্ধকালে আমার মা মারা গিয়েছিল। কিন্তু  আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষনে থাকার কারণে মা মারা যাওয়ার একমাস পর মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলাম। তখন আমার এত কষ্ট পেয়েছিলাম যে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু যেহেতু পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাকে যুদ্ধ করতে হবে, শত্রুর হাত থেকে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে হবে, সেই কারণে আমি মায়ের মৃত্যুশোক বুকে নিয়েই পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। মায়ের মৃত্যুশোক আমাকে কাতর করলেও মানসিক ভাবে দুর্বল করতে পারেনি। আমি একের পর এক অপারেশন করে গেছি। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মায়ের মৃত্যুর কথা মনে হলে আমার চোখে জল এসে যায়। কিন্তু আবার গৌরববোধও হয় যে, আমি মায়ের মৃত্যুশোকের চেয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছিলাম।

 

মুক্তিযুদ্ধকালে আমার প্রথম অপারেশন ছিল ডেমরা বাওয়ানি মিলে পাকিস্তানের পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাম্পে গ্রেড হামলা চালানো। সেই হামলা অত্যন্ত সফলভাবে করতে পেরেছিলাম। এরপর পাকিস্তানিরা ভয় পেয়ে রাতে আর ক্যাম্প থেকে বের হতে সাহস পায়নি।৭১ সালে আমি দুই নম্বর ঢাকেশ্বরী কটন মিলে কাজ করতাম এবং একই সাথে আমি গোদনাইল হাইস্কুলে নাইট শিফটে ক্লাস করতাম। একাত্তরে আমি ছিলাম এসএসসি পরীক্ষার্থী। ২৫ শে মার্চে পাকিস্তান বাহিনী বাঙালিদের উপর গণহত্যা শুরুর পর বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তখন পাকিস্তানিরা ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, সব এলাকায় গণহত্যা শুরু করে।

 

একদিন কয়েকজন পাকিস্তানী সৈন্য আমাদের দুই নম্বর ঢাকেশ্বরী বাজারে এসে ঢাকেশ্বরী মিলের দিকে বন্দুক তাক করে এলোপাথারী গুলিবর্ষন করে। তাতে মিলের একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। আমি সেই শ্রমিককে চাচা বলে ডাকতাম। পাকিস্তান আর্মি চলে যাওয়ার পর আমি তাকে টেনে মিলের ভিতর নিয়ে যাই। এরই মধ্যে তার আত্মীয়-স্বজনরা খবর পেয়ে চলে আসে এবং তাকে হাসপাতাল নিয়ে যায়। সেই নিরীহ শ্রমিককে পাকিস্তানের বর্বর সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করতে চেষ্টা করার পর  আমার মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হলো। আসলেই পাকিস্তানিরা আমাদের কাউকেই বাঁচতে দিবে না। এখন আমাদেরকে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হবে। এ সময়ে আমি মনে মনে এক প্রতিজ্ঞা করি যে, এই শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

 

পাকিস্তান বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়ে যে, আমরা আর ঢাকেশ্বরী মিলে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। এরপর আমরা জীবন বাঁচাতে আমাদের গ্রামের বাড়ি চলে যাই। ডেমরা থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আমাদের গ্রাম। গ্রামে এসে আমরা এলাকার ছাত্র-যুবকদের নিয়ে একটা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করি। প্রায় ৩০-৩৫ জনের মতো লোক সেই স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর সদস্য ছিলেন। আমাদের কাজ ছিল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সারারাত পাহারা দেওয়া, যদি পাকিস্তানিরা এসে এ গ্রামে হামলা করে, তখন যাতে আমরা এলাকার সমস্ত মানুষকে সচেতন করতে পারি এবং গ্রামবাসী যাতে নিরাপদে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে। আমাদের গ্রামের পাশেই ছিল শীতলক্ষ্যা নদী, সেই নদী দিয়ে পাকিস্তান সেনারা লঞ্চে করে টহল দিত।

 

এ সময় আমরা গ্রামে বসে সবাই মিলে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকি। তখনও আমরা জানতাম না যে, ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে এবং অনেকেই ভারত চলে যাচ্ছেন প্রশিক্ষন নিতে। একদিন আমাদের গ্রামের ভিতর দিয়ে একজন ভদ্রলোক ঢাকা থেকে নরসিংদী যাওয়ার পথে আমাদের সাথে কথা হয়। তাকে আমরা জিজ্ঞেস করি আপনি নরসিংদী যাবেন এই ডেমরা ভিতর দিয়ে এলেন কেন, আপনি পাকা সড়ক দিয়ে বাসে যাননি কেন?  তিনি বললেন, ঢাকা নরসিংদী সড়কে পাকিস্তান বাহিনী সব সময় টহল দেয় এবং কাউকে দেখে সন্দেহ তাকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলে। এই জন্য আমি গ্রামের ভিতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে নরসিংদী যাওয়ার জন্য এ পথে এসেছি।

 

তার সাথে আমাদের বেশ কথাবার্তা হয় এবং একপর্যায়ে তিনি আমাদের বলেন এই গ্রামের এত যুবক ছেলেরা আছে, তারা কেন মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছে না। আমরা তখন কিভাবে কোথায় যেতে হবে তা আমরা জানি না বলে জানাই। তখনই তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান। একথা শুনে আমরা তাকে অনুরোধ করি আমরা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারি তার ব্যবস্থা করার জন্য। তিনি কিভাবে ত্রিপুরার আগরতলায় যেতে হবে তার পথ নির্দেশনা জানিয়ে দেন। এরপর তিনি একটি কাগজ নিয়ে তাতে কিভাবে কোন পথে আগরতলা যেতে হবে তার একটি ম্যাপ একে দেন।

 

আমরা তার এসব কথাবার্তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকদিন আলাপ আলোচনা করলাম। এক পর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য আগরতলা চলে যাব। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই ভদ্রলোকের পথ নির্দেশনা এবং ম্যাপ নিয়ে আমরা আগরতলার দিকে রওনা হই। আমরা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ত্রিপুরা সীমান্তে ঢোকার পর হঠাৎ ভারতীয় সৈন্যদের মুখোমুখি হই। তারা আমাদেরকে দাঁড় করিয়ে বেশ কিছুক্ষণ জেরা করেন, আমরা কি জন্য এসেছি কোত্থেকে এসেছি এসব জানতে চান। আমরা বুঝিয়ে বলার পর তারা আমাদের সবার নাম একটি খাতার মধ্যে তালিকাভূক্ত করে।

 

এরপর আমাদের বলে তোমরা এখানে অপেক্ষা করো, তোমাদের মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমরা সেখানে এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ভারতীয় সামরিক বাহিনীর একটি ট্রাক আসে। সে ট্রাকে চড়ে প্রায় দুই ঘন্টা পর একটি পাহাড়ের নিচে আমাদের নামিয়ে দেয়া হয়। আমাদের বলা হয়, তোমরা হেঁটে পাহাড়ের উপরে ওঠো, সেখানে তোমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেটা ছিল ত্রিপুরার শিমুলিয়া এলাকা। আমরা তাদের কথামতো পাহাড় বেয়ে উপরে উঠি। সেখানে বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা আমাদেরকে গ্রহণ করেন। আমরা যখন সেখানে যাই তখন সকাল হয়ে গেছে। সামরিক কর্মকর্তারা আমাদের নাস্তা খেতে দিলেন।

 

নাস্তা খাওয়ার পর তারা আমাদেরকে পাহাড়ের একটি ঢালে দিয়ে যান। সেখানে নিয়ে কয়েকটি গ্রেনেড বের করে আমাদের হাতে দিয়ে বলেন, এই গ্রেনেড পাহাড়ের নিচের দিকে ছুড়ে মারো। আমরা ভয়ে গ্রেনেড হাতে নিতে পারিনি। পরে একজন সৈন্য নিজে একটি গ্রেনেড হাতে নিয়ে আমাদের দেখিয়ে পাহাড়ের নিচের দিকে ছুড়ে মারে। বিকট শব্দে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়। তখন তিনি আমাদেরকে বললেন, সেটা বিস্ফোরণের পর ৩৬টি টুকরা হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং এতে প্রায় ১০ জন পর্যন্ত লোক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

তোমরা এখন এই গ্রেনেড কিভাবে পাকিস্তানি সেনাদের উপর নিক্ষেপ করতে হবে তার হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়া গ্রহন করবে। এরপর কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা মিলে আমাদের দলের ১৮ জনকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করার কলা-কৌশল প্রশিক্ষণ দেন। সারাদিন আমাদেরকে গ্রেনেডের বিভিন্ন বিষয় হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়া হয়। এরপর সেনা কর্মকর্তারা আমাদের বলেন, তোমরা গ্রেনেড নিক্ষেপ করার কলা-কৌশল শিখে গেছো। এখন তোমরা বাংলাদেশে গিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের উপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের হত্যা করবে, তাদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।

 

এরপর দুই/তিন দিন বিশ্রাম নেয়ার পর একদিন আমাদের গ্রুপের প্রত্যেককে তিনটি করে গ্রেনেড দেয়া হয়। আমাদের নাম লিখে সেখানে স্বাক্ষর নেয়া হয়। বলা হয়, তোমরা বাংলাদেশে গিয়ে যেখানে পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাম্প দেখবে  সেখানেই দূর থেকে এই গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাবে। এভাবেই একের পর এক গ্রেনেড হামলায় পাকিস্তানি বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তারা একসময় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।

 

এরপর আমরা বাংলাদেশে চলে আসি। আসার আগে আমাদের প্রত্যেককে তিনটি করে গ্রেনেড দেয়া হয়েছিল। সেই গ্রেনেড আমরা কোমরে গামছা পেঁচিয়ে বেঁধে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। সীমান্ত দিয়ে ঢোকার পরেই আমরা গ্রামের পথ ধরে হেঁটে হেঁটে প্রায় দুই দিনে আমরা আমাদের এলাকার ফিরে আসি। গ্রামে ফিরে কয়েকদিন বিশ্রাম নেয়ার পর পাকিস্তান বাহিনীর কোন ক্যাম্পে গ্রেনেড হামলা করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে শুরু করি।

 

একদিন আমরা খবর পাই আমাদের গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে ডেমরায় বাওয়ানি মিলে পাকিস্তানীদের একটি বড় ক্যাম্প আছে। সে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা বিভিন্ন এলাকায় মানুষ হত্যা করে, মেয়েদের ধরে এনে নির্যাতন করে। আমরা সেই ক্যাম্পেই প্রথম গ্রেনেড হামলা করা সিদ্ধান্ত নেই। ক্যাম্পের চারিদিকে উচু দেয়াল ছিল। দেয়ালের পাশেই হালকা জঙ্গল। আমি কয়েকদিন আরও ২-৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে কিভাবে অপারেশন করব তার জন্য সে এলাকা ঘুরে রেকি করি। এরপর আমরা এলাকায় বসে অপারেশনের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করি।

 

আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমরা মধ্যরাতে গ্রেনেড হামলা চালাবো, যাতে এলাকার কেউ আমাদের দেখতে না পারে এবং পাকিস্তানিরা আমাদের সেখানে যাওয়ার বিষয়টি টের না পায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা একদিন রাত এগারোটার দিকে অপারেশনের জন্য আমাদের গ্রাম থেকে রওনা হই। আমরা ৬-৭ মাইল হেটে বাওয়ানি মিলের কাছাকাছি যাই। আমরা ছয় জন সেই অপারেশনে গিয়েছিলাম। সবাইকে  দুইটি করে গ্রেনেড দেয়া হয়েছিল। গ্রেনেডগুলো আমরা কোমরে গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে রাখি। তখন  আমাদের পরনে ছিল লুঙ্গি, যাতে কেউ আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বলে সন্দেহ করতে না পারে।  যে আমরা সাধারণ শ্রমিক তা যেন আমাদের পোশাক দেখে সবাই বুঝতে পারে।

 

আমরা যখন সেখানে পৌছি, তখনো কিছু লোকজন বাজারে এবং দোকানপাটে অবস্থান করছিল। আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সব দোকানপাট যখন বন্ধ হয়ে যায় তারপরে আমরা সেনা ক্যাম্পের দেয়ালের পাশে গিয়ে অবস্থান নেই। আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমরা সেখানে একটু দূরত্ব বজায় রেখে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে সবাই হাতে গ্রেনেড নিয়ে অপেক্ষা করবো। আমি যখন রেডি বলবো তখন সবাই গ্রেনেড নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুত হবে। আমি যখন থ্রো বলবো তখনই সবাই একসাথে গ্রেনেড ছুড়ে মারবে।  

 

দেয়ালের একেবারে কাছে ঘেষে আমি থ্রো বলে সংকেত দিলাম। তখনই আমরা ছয় জন একসাথেই ছয়টি গ্রেনেড ক্যাম্পের দিকে ছুড়ে মারলাম। বিকট শব্দে ছয়টি গ্রেনেড একসঙ্গে বিস্ফোরিত হলো। এত বিশাল আওয়াজ হয়েছিল যে আমরা নিজেরাও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম বাউন্ডারি দেয়াল ও ভেঙ্গে আমাদের উপরে পড়ে যায় কিনা।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেয়াল ধ্বসে পড়েনি।  প্রথম গ্রেনেড ছোড়ার পরে আমরা ভেবেছিলাম পাকিস্তানিরা তুমুল গোলাগুলি শুরু করবে কিন্তু কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পরও পাকিস্তানিরা কোন গুলী ছুড়লোনা।

 

আমরা ভাবলাম, তাহলে কি পাকিস্তানিরা ভয় পায়নি। এটা মনে করে আমরা আবার দ্বিতীয়বার একসাথে ছয়টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করলাম। এবার মনে হল আরো বেশি শব্দ করে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হলো। এরপর পরপরই পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের ক্যাম্প থেকে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু করল। তাদের মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠল। আমরা তখন গিয়ে লুকিয়ে থাকি। দেখলাম জঙ্গলের গাছগুলোর মাথায় মেশিনগানের গুলি লেগে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে। আমরা ভয় পেয়ে ক্রলিং করে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে একটু দূরে চলে যাই। এরপর দৌড়ে গিয়ে নদীতে ঝাপ দেই। প্রায় আধা ঘন্টা সাতরে নদী পেরিয়ে আমরা নিরাপদে গ্রামে ফিরে আসি। এরপর আমরা আবার ভারতে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষন নিয়ে দেশে ফিরে অনেক অপারেশন করেছি। কিন্তু সেই প্রথম অপারেশনের সাফল্য এখনো আমাদের গৌরবান্বিত করে।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর